Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

এক মিনিটেই জাত চেনালেন স্টুয়ার্ট, চেন্নাইয়িনকে হারিয়ে আবার আইএসএলের শীর্ষে মোহনবাগান

চোট থেকে ফেরা সত্ত্বেও চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের প্রথম একাদশে ঠাঁই হয়নি তাঁর। ছিলেন রিজ়ার্ভ বেঞ্চেই। তবে ৮৫ মিনিটে তিনি মাঠে নামার এক মিনিটের মধ্যেই শট মারলেন পোস্টে। পরের মিনিটেই তাঁর পাস থেকে গোল করলেন কামিংস।

football

মোহনবাগানের ফুটবলার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। ছবি: সমাজমাধ্যম।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২৪
Share
Save

মোহনবাগান ১ (জেসন কামিংস)
চেন্নাইয়িন ০

তামিলনাড়ুতে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজল’-এর প্রভাবে শনিবার সকাল থেকেই কলকাতার আকাশের মুখভার ছিল। সূর্যের বিশেষ দেখা মেলেনি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এবং উত্তুরে হাওয়ায় শীতের প্রকোপ ভালই মালুম হচ্ছিল। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা দেখতে আসা হাজার বিশেক দর্শক হয়তো আবহাওয়ার মতোই মুখ ভার করে বাড়ি ফিরতেন। তা হতে দিলেন না গ্রেগ স্টুয়ার্ট। ৮৫ মিনিটে তাঁর পাস থেকে জেসন কামিংসের গোলে মোহনবাগান ১-০ গোলে চেন্নাইয়িন এফসি-কে হারিয়ে আবার আইএসএলের শীর্ষে উঠে পড়ল। নয় ম্যাচে ২০ পয়েন্ট হল তাঁদের।

এক মিনিটেই স্টুয়ার্টের জাদু

চোট থেকে ফেরা সত্ত্বেও চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের প্রথম একাদশে ঠাঁই হয়নি তাঁর। ছিলেন রিজ়ার্ভ বেঞ্চেই। জাত ফুটবলার তাঁরাই হন, যাঁরা ম্যাচের কঠিন সময়ে ছাপ ফেলতে পারেন। সেটাই করলেন স্টুয়ার্ট। ম্যাচের ৮৫ মিনিট জেমি ম্যাকলারেন এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস যা করতে পারেননি, সেটা মাত্র এক মিনিটেই করে দেখালেন স্টুয়ার্ট। যে মিনিট দশেক স্টুয়ার্ট মাঠে ছিলেন সেই সময়টুকু মোহনবাগানকে চেনা রূপে দেখা গেল। বলা ভাল, প্রাণ ফিরে পেল মোহনবাগান। গোটা ম্যাচে মোহনবাগানের যাবতীয় পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন ওয়েন কোয়েলের ছেলেরা। কিন্তু স্টুয়ার্টকে আটকানোর কোনও পরিকল্পনা তাঁদের ছিল না। মাঠে নামার পরের মুহূর্তে স্টুয়ার্টের ডান পায়ের শট লাগে পোস্টে। ফিরতি বল ক্লিয়ার করতে পারেনি চেন্নাইয়িন। আশিস রাই বল কেড়ে নিয়ে বাড়ান স্টুয়ার্টের উদ্দেশে। বক্সের ভেতরে কামিংসকে আগে থেকেই দেখি নিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট। তাঁর নিখুঁত পাস ধরে সময় নিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন কামিংস।অতিরিক্ত সময়ে আবার স্টুয়ার্টের শট লাগে বারে। ফিরতি বলে কামিংস গোল করলেও সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। সেই সময়ে মোহনবাগান আরও দু’টি গোল করে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। সাধে কি আর মোহনবাগানের কোচ মোলিনা বলেছিলেন, ‘স্টুয়ার্ট যেটা পারে বাকিরা সেটা পারে না।”

ম্যাচের অধিকাংশ সময়ে মোহনবাগানের নির্বিষ ফুটবল

হাতে একাধিক আক্রমণাত্মক ফুটবলার। ফলে মোহনবাগান যে শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলবে এটা দেখেই অভ্যস্ত সমর্থকেরা। তবে প্রথম ৩৫ মিনিট খুঁজে পাওয়া গেল না সেই মোহনবাগানকে। প্রথমার্ধে ম্যাকলারেন ক’বার বল ধরেছেন সেটা হাতে গুনে বলা যাবে। শেষের দিকে একটি হেড বাইরে যায়। এ ছাড়া বলার মতো কিছু করতে পারেননি। আইএসএলের পরিসংখ্যান বলছে, প্রথমার্ধের জলপানের বিরতির পর মোহনবাগান ১৬টি গোল করেছে। এ দিন জলপানের বিরতির পর মোহনবাগানের খেলায় আগ্রাসন কিছুটা হলেও ফিরেছিল। একক দক্ষতায় লিস্টন কোলাসো পর পর দু’টি শট নিয়েছিলেন। প্রথমটির ক্ষেত্রে বাঁ প্রান্ত থেকে অনেকটা ভেতরে ঢুকে এসে বক্সের ঠিক বাইরে ডান পায়ে নেওয়া শট বাঁচান মহম্মদ নওয়াজ। ফিরতি কর্নার থেকে লিস্টনের দ্বিতীয় শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। তবে মোহনবাগানের যে আগ্রাসনের সঙ্গে পরিচিত সমর্থকেরা, তা দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধেও বেশির ভাগ সময়ে মোহনবাগানের খেলায় সেই ঝাঁজ ছিল না। তবে শেষ পাঁচ মিনিটে যে খেলা বদলে যাবে তা অনেকেই ভাবতে পারেননি।

চেন্নাইয়িনের সঙ্ঘবদ্ধ খেলা

শেষ দশ মিনিটে মনঃসংযোগ হারিয়ে গোল খেলেও বাকি ম্যাচে চেন্নাইয়ের ফুটবলের প্রশংসা করতেই হবে। তাদের হারানোর কিছু ছিল না। মোহনবাগানকে রুখে এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলে সেটাতেই লাভ হত। চেন্নাইয়িনের কোচ ওয়েন কোয়েল আইএসএলে পোড়খাওয়া। তিনি ম্যাচের আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, মোহনবাগানকে আটকাতে নিখুঁত ফুটবল খেলা ছাড়া উপায় নেই। শুরু থেকেই তাই পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলতে শুরু করে তারা। ম্যাকলারেনকে বোতলবন্দি করে ফেলেন ডিফেন্ডারেরা। পেত্রাতোস বল পেলেই ঘেরাও হয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে বল পাস করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। চেন্নাইয়িনের আক্রমণ হচ্ছিল মূলত দু’টি প্রান্ত দিয়ে। দুই বঙ্গসন্তান দীপেন্দু বিশ্বাস এবং শুভাশিস বসু খেলছিলেন দুই প্রান্তে। দু’দিক থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ হচ্ছিল। কোনর শিল্ডস এবং ফারুখ চৌধুরি ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন মোহনবাগান রক্ষণকে। তবে উইলমার জর্ডানকে দাঁত ফোটাতে দিচ্ছিলেন না আলবের্তো রদ্রিগেস। বল ধরে রাখা এবং প্রতি আক্রমণ— এই দু’টি ফর্মুলায় মোহনবাগানকে রুখতে চেয়েছিলেন কোয়েল। তবে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করা আটকানো গেল না।

নর্থইস্ট ম্যাচে নেই শুভাশিস

বয়স হয়তো ছাপ ফেলছে শুভাশিসের খেলায়। মোহনবাগানের বাঁ প্রান্তকে ক্রমশ নিজেদের শক্তিশালী জায়গা বানিয়ে ফেলছে বিপক্ষ দলগুলি। এ দিন চেন্নাইয়িন বার বার মোহনবাগানের বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণ করে গেল। বেশির ভাগ সময়েই শুভাশিস গতিতে পরাস্ত হলেন। এক বার বিপক্ষের ফুটবলারকে আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ডও দেখলেন। ফলে পরের নর্থইস্ট ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। দীপেন্দুর অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে বিরতির পরেই তাঁকে তুলে চোট সারিয়ে ফেরায় আশিস রাইকে নামালেন হোসে মোলিনা। আশিস যে খুব ভাল খেলেছেন এমনটা বলা যাবে না। তবে দীপেন্দু থাকাকালীন রক্ষণে যে নড়বড়ে ভাবটা ছিল, সেটা দেখা যায়নি তাঁর খেলায়।

পেত্রাতোস-ম্যাকলারেন বোঝাপড়ার অভাব

জামশেদপুর ম্যাচে বেশ ভাল খেলেছিলেন পেত্রাতোস। তবে এ দিন অস্ট্রেলীয় ফুটবলারকে কার্যত খুঁজেই পাওয়া গেল না। এমনিতেই বল পেলে তাঁকে ঘিরে ধরছিলেন বিপক্ষের ফুটবলারেরা। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলেন পেত্রাতোস। ম্যাকলারেনের অবস্থাও সে রকমই। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার জন্য সুনাম রয়েছে তাঁর। তবে বলই যদি না পান তা হলে আর সঠিক জায়গায় থাকবেন কী করে! ম্যাকলারেনকে বল বাড়ানোর ‘সাপ্লাই লাইন’টাই কেটে দিয়েছিল চেন্নাইয়িন। পেত্রাতোসকে আটকে দিয়েই বাজিমাত করেছে তারা। বাধ্য হয়ে ম্যাকলারেনকে ৭৭ মিনিটে ম্যাকলারেনকে তুলে কামিংসকে নামাতে বাধ্য হন মোলিনা।

আস্থা রাখলেন কামিংস

ভাগ্য সহায় থাকলে মাঠে এক মিনিট থাকলেও প্রভাব ফেলা যায় না। না হলে গোটা ম্যাচে পরিশ্রম করলেও গোল আসে । ম্যাকলারেনে মোহনবাগানে আসার পর থেকে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই কামিংসের ঠাঁই হয়েছে রিজ়ার্ভ বেঞ্চে। পরিবর্ত হিসাবে নামলেও ভাগ্য সহায় হয়নি। সেটা হল শনিবার। গোটা ম্যাচে চেন্নাইয়ের রক্ষণে দাঁত ফোটাতে না পারা মোহনবাগান যখন ম্য়াচ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, তখনই ম্যাকলারেনের পরিবর্তে আবির্ভাব কামিংসের। ভাগ্যও সহায় ছিল। না হলে স্টুয়ার্ট ও ভাবে পাস বাড়াতে পারতেন! কামিংস এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। ম্যাচের পর ‘ডি২’ গ্যালারির দিকে উচ্ছ্বাস করতে গিয়ে বাঁ পা তুলে একটি বিশেষ ট্যাটুর দিকে দেখালেন, যেখানে রয়েছে তাঁর পোষ্য কুকুর কার্লোসের ছবি। দিন কয়েক আগেই মারা গিয়েছে সে। তাঁকেই গোল উৎসর্গ করেছেন অসি স্ট্রাইকার।

Mohun Bagan ISL 2024-25 Chennaiyin FC Greg Stewart

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।