মরিয়া: ডার্বিতে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চান অরিন্দম। ইস্টবেঙ্গল
শাপমুক্তির অপেক্ষায় অরিন্দম ভট্টাচার্য! অষ্টম আইএসএলের প্রথম পর্বের এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বি তাঁর কাছে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ২৩ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খেয়ে উঠে গিয়েছিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক। টানা চার ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকার পরে দলে ফিরেছিলেন তিনি। আজ, শনিবার ফিরতি ডার্বিতে কি অরিন্দমের পাপস্খালন হবে?
প্রথম পর্বের ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে হারের জন্য লাল-হলুদ সমর্থকেরা দায়ী করেন অরিন্দমকেই। সেই যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলেছেন তিনি। অথচ রয় কৃষ্ণদের বিরুদ্ধে সেই দ্বৈরথে তাঁর খেলার সম্ভাবনাই ক্ষীণ ছিল। হাঁটুর চোটে বিপর্যস্ত ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক ব্যথার ওষুধ খেয়ে জোর করেই মাঠে নেমেছিলেন।ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময়ই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর। হাঁটুর চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে শুরু করেন বাড়তি অনুশীলন। টিম হোটেলে ফিরে মগ্ন থাকতেন মনঃসংযোগ বাড়ানোয়। ক্রীড়াবিদদের অনেকেই মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য অনুপ্রেরণামূলক চলচ্চিত্র দেখেন। কেউ কেউ কিংবদন্তিদের জীবনকাহিনি পড়েন। অনেকে গান শোনেন। কেউ আবার মনোবিদের সাহায্য নেন। নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে অরিন্দমের অস্ত্র ঘুম! ম্যাচের দু’-তিন দিন আগে থেকেই রাত ন’টার মধ্যে মোবাইল ফোন বন্ধ করে শুয়ে পড়েন অরিন্দম। সতীর্থদের বলে দেন, তাঁকে কোনও ভাবেই ডাকা চলবে না। ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক মনে করেন, ঘুমোলেই তাঁর মানসিক চাপ দূর হয়ে যায়। অনুশীলনে বাড়তি পরিশ্রম করার শক্তি পান। যা ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সিনেমা দেখা বা গান শুনলে
তা হয় না।
অরিন্দমের সঙ্গে একমত ব্যর্থতা ভুলে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটানো ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানের হয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চার গোল খেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। মশালবাহিনী ম্যাচটা জিতেছিল ৫-০ গোলে। আগের ডার্বিতে অরিন্দমের গোল খাওয়া দেখে ভাস্করের মনে পড়ে যাচ্ছিল নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।
বিপর্যয়ের যন্ত্রণা ভুলে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন? ভাস্কর বলছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, অনুশীলনের কোনও বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে পাশে সতীর্থদের থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভাগ্যবান, তরুণ বসু-সহ একাধিক অসাধারণ সতীর্থকে পেয়েছিলাম। আর ছিলেন কোচ অমল দত্ত। আমাকে সকলে আগলে রেখে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন।’’ আরও বললেন, ‘‘পঁচাত্তরের সেই দুঃস্বপ্নের ম্যাচে নিজের ভুলেই গোলগুলি খেয়েছিলাম। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রধান শর্তই হল, সবার আগে ভুলগুলি চিহ্নিত করে তা শোধরানোর চেষ্টা করা। একমাত্র অনুশীলনের মাধ্যমেই তা সম্ভব। আমি দিনের পর দিন নীরবে অনুশীলনে বাড়তি পরিশ্রম করে গিয়েছিলাম। তার ফলও পেয়েছিলাম হাতেনাতে। আমার বিশ্বাস, অরিন্দমও নিশ্চয়ই একই
পন্থা নিয়েছে।’’
ইস্টবেঙ্গলের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রথম পর্বের ডার্বির পরে অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে দীর্ঘ ক্ষণ মাঠে পড়ে থাকতেন অরিন্দম। লাল-হলুদের গোলরক্ষক কোচ তখন ছিলেন চেলসির প্রাক্তনী লেসলি ক্লেভেলি। আলাদা করে তাঁর সঙ্গে বিশেষ অনুশীলন করতেন গত মরসুমে এটিকে-মোহনবাগানের হয়ে আইএসএলে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পাওয়া অরিন্দম। তিনি বঙ্গ গোলরক্ষককে বলতেন, ‘‘সমালোচনায় কান দিয়ো না। বরং কী করলে ভুলগুলি শোধরানো যায়, সেটা নিয়ে ভাবো। অন্য কোনও দিকে মন দিয়ো না।’’ সম্ভবত এই কারণেই ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়কত্ব ছাড়তে দ্বিধা করেননি অরিন্দম।
কিংবদন্তি পূর্বসূরি মতো অরিন্দমও কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy