অঙ্কিত মুখার্জী। ছবি পিটিআই।
গত তিন বছর ধরে বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল জেতে না। নিশ্চয়ই এই যন্ত্রণা ওদের সমর্থকদের বুকে বিঁধছে। সেখানে আজ, শনিবারের ডার্বির আগে দেখছি মোহনবাগান সমর্থকেরা অনেক আত্মবিশ্বাসী, আইএসএলে গত তিন বড় ম্যাচে জিতে ফেরায়। আমাদের খেলোয়াড় জীবনে এই ম্যাচ ঘিরে কলকাতা ও গোটা বাংলা যে ভাবে মেতে উঠত, এখন সেই ছবি নেই। কিন্তু বড় ম্যাচের মহিমা এমনই যে, এক বার খেলা শুরু হলে লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন—সব দলের সমর্থকই প্রিয় দলের জয়ের প্রত্যাশায় টিভি সামনে বসবে।
গত দু’তিন দিনে যাদের সঙ্গে শনিবারের ডার্বি নিয়ে কথা হল, তাতে সবাই কিন্তু এটিকে-মোহনবাগানকেই এগিয়ে রাখছেন। আমিও মনে করি, জুয়ান ফেরান্দোর আক্রমণ ভাগের যে গভীরতা, তাতে এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নব্বই মিনিট গোলের দরজা বন্ধ করে রাখা এই এসসি ইস্টবেঙ্গলের কাছে একটা বড় পরীক্ষা। সে কারণে এটিকে-মোহনবাগান এগিয়ে।
যদিও এই সবুজ-মেরুন দলকে হারানো অসম্ভব, সে কথাও কিন্তু বলছি না। এই বড় ম্যাচে গত পঞ্চাশ বছরে অনেক দুর্বল দলকেই জিতে ফিরতে দেখেছি। সাতাত্তরের লিগে আমাদের তারকাখচিত মোহনবাগানকে কিন্তু কলকাতা লিগে ফেভারিট না থেকেই হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। শনিবারও সে রকম কিছু ঘটলে অবাক হব না। কারণ ফুটবলে ফল কী হবে, তা আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
প্রীতম কোটালদের এগিয়ে রাখার কারণ, গত কয়েক মরসুম ধরে দলটার প্রধান ফুটবলার একই রয়েছে। খুব বেশি বদল হয়নি। আক্রমণে বল বাড়ানোর জন্য এবং খেলা তৈরির কারিগর হুগো বুমোস চলে এসেছে। দুই প্রান্ত দিয়ে মনবীর সিংহ ও লিস্টন কোলাসোও আক্রমণে ঝড় তোলে। আর তা ধরে সামনে গোল করার জন্য অপেক্ষায় থাকে রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস। আনন্দবাজারেই পড়লাম এই ডার্বিতে রয় কৃষ্ণের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ও না খেললে মানসিক ভাবে কিছুটা চাপমুক্ত থাকবে এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। কিন্তু ওকে বাদ দিয়েও সবুজ-মেরুনের আক্রমণ ভাগ অনেক পোক্ত। আর নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ডেভিড উইলিয়ামস এই ম্যাচকে বেছে নেবেই। রক্ষণে সন্দেশ খেললে প্রীতম, তিরি, শুভাশিস ও ওদের আগে কার্ল ম্যাকহিউদের মাঝমাঠ টপকানোও আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচদের কাছে কঠিন কাজ তো অবশ্যই।
যদিও মাথায় রাখতে হবে, বুদ্ধি করে রণনীতি বানালে এই এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জিতে ফেরাও সম্ভব। তবে তার জন্য আদিল খান, হীরা মণ্ডলদের রক্ষণকে নিশ্ছিদ্র রাখতে হবে। বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে মাঝমাঠে সৌরভ দাস, ড্যারেন সিডোয়েলদের। কারণ, হুগো বুমোসেরা দু’দিক দিয়ে গোলের দরজা খোলে। এক, মাঝ বরাবর ঢুকে এসে। দুই, প্রান্ত থেকে ক্রস ভাসিয়ে। যদি ওই ‘মিডল করিডর’ পোক্ত রাখা যায়, মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে দূরত্ব না বেড়ে যায়, তা হলে ওই রাস্তা বন্ধ হবে বিপক্ষের আক্রমণের সময়। চার ডিফেন্ডারের সামনে আক্রমণ ও মাঝমাঠের পাঁচ মিডফিল্ডার নেমে এসে দাঁড়িয়ে পড়লে তখন বিপক্ষ ওই জায়গা দিয়ে গোলের দিকে এগোনোর ফাঁকা জায়গা পাবে না।
এই সময়ে লাল-হলুদ মাঝমাঠ বা রক্ষণকে চেষ্টা করতে হবে বুমোসদের প্রান্তসীমার দিকে নিয়ে যেতে। তা হলেই লাল-হলুদের চাপ অনেকটা কমবে। লিস্টন, মনবীর সিংহেরা যেন ক্রস ভাসাতে না পারে বক্সে, তার জন্য দায়িত্ব নিক লাল-হলুদের সাইড ব্যাকেরা। তা হলেই গোলের রাস্তা বন্ধ হওয়ায় সমস্যা বাড়তে পারে সবুজ-মেরুনে। আর এক বার বল কেড়ে নিলে বিপক্ষ রক্ষণে ৮-১০ সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুত প্রতি-আক্রমণে এসসি ইস্টবেঙ্গল যাওয়ার চেষ্টা করুক। তা করা গেলেই কিন্তু ম্যাচে অঘটন ঘটাতে পারে মারিয়ো রিভেরার দল।
সব শেষে একটা কথা। রেনেডি সিংহের মতো বেশি রক্ষণাত্মক না হয়ে রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণ হোক আজ লাল-হলুদের রণনীতি। রেনেডি রক্ষণাত্মক হয়ে হার বাঁচিয়েছিল। কিন্তু মারিয়ো এসে প্রথমে বেশি রক্ষণাত্মক বা আক্রমণাত্মক না হয়ে ভারসাম্যযুক্ত প্রতি-আক্রমণের রণনীতি নেয়। তাতে সাফল্যও মেলে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণে জোর দিতে গিয়ে চার গোল গোল খেয়েছে। একই অবস্থা হতে পারে এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হলে। কাজেই রক্ষণ সামলে দ্রুত প্রতি-আক্রমণ শানাতে পারলেই কার্ল ম্যাকহিউদের বিপদে ফেলা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy