সুনীল ছেত্রী। —ফাইল চিত্র
১২০ মিনিটের লড়াইয়ের পরও জেতেনি কোনও দল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে লেবাননকে হারিয়ে সাফ কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের প্রায় ২০ হাজার দর্শক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গলা ফাটালেন সুনীল ছেত্রীদের জন্য। সহজ সুযোগ না ফস্কালে নির্ধারিত সময়েই জিতে যেতে পারত ভারত। টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে উঠলেন ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। ৪-২ গোলে লেবাননকে হারিয়ে ফাইনালে কুয়েতের সামনে ভারত।
টাইব্রেকারের প্রথম পেনাল্টি মারতে যান সুনীল। গোলরক্ষকের ডান দিক দিয়ে গোল করেন তিনি। অন্য দিকে লেবাননের অধিনায়ক হাসান মাটুকের প্রথম শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত। ফলে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে লেবানন। ভারতের হয়ে সুনীলের পরে আনোয়ার আলি, মহেশ নাওরেম সিংহ ও উদান্তা সিংহ গোল করেন। লেবাননের চতুর্থ শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যেতেই ম্যাচ জিতে যায় ভারত। খেলা শেষে মাঠে নেমে সহকারী কোচ ও ফুটবলারদের জড়িয়ে ধরেন নির্বাসিত ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ।
খেলার শুরুটা ভাল করে লেবানন। প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে উঠতে শুরু করে তারা। তত ক্ষণে নিজেদের রক্ষণ গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়নি ভারত। নির্বাসনের জন্য সেন্ট্রাল ব্যাকে সন্দেশ জিঙ্ঘান না থাকায় শুরু করেন প্রীতম কোটাল। ফলে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের বোঝাপড়ায় একটু সমস্যা হচ্ছিল। সেই সমস্যা কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েক বার ভারতের বক্সে পৌঁছে যান লেবাননের ফুটবলাররা। কিন্তু গোল করতে পারেননি তাঁরা।
১৫ মিনিটের পর থেকে ধীরে ধীরে খেলায় ফেরে ভারত। নিজেদের মধ্যে পাস খেলে আক্রমণে উঠতে থাকে সুনীলরা। ১৬ মিনিটের মাথায় সুনীলের কাছ থেকে বক্সে ভাল জায়গায় বল পান জিকসন সিংহ। তিনি সরাসরি গোলে মারতে পারতেন। তা না করে সাহাল আব্দুল সামাদের দিকে বল বাড়ান তিনি। সাহাল গোল করতে পারেননি। তিনি এমনিতেই অফ সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে গোল করলেও তা গ্রাহ্য হত না।
আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের খেলা চলছিল। ৩৫ মিনিটের মাথায় লেবানন বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করা হয় শুভাশিস বসুকে। তিনি উঠে ধাক্কা মারেন লেবাননের ফুটবলারকে। ফলে দু’দলের ফুটবলারদের মধ্যে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। মাঠে ঝামেলায় জড়ানো যেন ভারতীয় ফুটবলারদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই সবটাই গ্যালারিতে বসে দেখেন ভারতের কোচ স্তিমাচ। লাল কার্ড দেখে নির্বাসিত তিনি। গ্যালারিতে তাঁর সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার শ্রেয়স আয়ার। ফ্রি কিক (ফুটবলারকে অন্যায় ভাবে ফেলে দিলে সেই দল বল মারার সুযোগ পায়) থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোল হয়নি। ৪১ মিনিটের মাথায় লেবাননের অধিনায়ক মাটুকের ডান পায়ের শট ভাল বাঁচান গুরপ্রীত। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে দু’দল। প্রান্ত ব্যবহার করে বিপক্ষের রক্ষণকে সমস্যায় ফেলেন ভারত ও লেবাননের ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসাবে আকাশ মিশ্রকে নামানোর পরে ভারতের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। প্রান্ত ধরে লালরিনজুয়ালা ছাংতে, আশিক কুরুনিয়ানরা আক্রমণে ওঠেন। কিন্তু ফাইনাল পাসে সমস্যা হচ্ছিল। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারছিল না কোনও দল।
৭০ মিনিটের মাথায় ভারতের শেষ তাস নাওরেমকে নামিয়ে দেন সহকারী কোচ মহেশ গাউলি। বলের দখল থেকে শুরু করে গোল লক্ষ্য করে শট— সবই ভারতের বেশি ছিল। কিন্তু গোলটাই আসছিল না। লেবাননের বক্সের কাছে গিয়ে কিছুটা এলোমেলো ফুটবলের খেসারত দিতে হচ্ছিল সুনীলদের। নির্ধারিত সময়ের শেষ কয়েক মিনিট চাপ রেখেছিল ভারত। কিন্তু তার পরেও গোল আসেনি। লেবাননের সব ফুটবলারই নিজেদের বক্সে নেমে গিয়েছিলেন। মরিয়া রক্ষণ করেন তাঁরা। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে ৯৩ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে বল পেয়ে চকিতে শট নেন সুনীল। লেবাননের গোলরক্ষক মেহেদি খলিল কোনও রকমে সেই বল বাঁচান। দু’মিনিট পরে ম্যাচের সহজতম সুযোগ পান সুনীল। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর দিকে বল বাড়ান উদান্তা। ছ’গজ দূর থেকে বল বারের উপর দিয়ে মারেন সুনীল। তার পর হতাশ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। সুনীল বুজতে পারছিলেন দলকে ফাইনালে তোলার সহজ সুযোগ ফস্কেছেন তিনি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ জুড়ে শুধু ভারতের আক্রমণ। একের পর এক গোলের সুযোগ। কিন্তু কিছুতেই গোলের মুখ খুলতে পারছিল না ভারত। তার মধ্যেই রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় লাল কার্ড দেখেন লেবাননের সহকারী কোচ।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও সুযোগ পেয়েছিল ভারত। ১১২ মিনিটের মাথায় গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি উদান্তা। অন্য দিকে বেশ কয়েক বার গোল করার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল লেবাননও। সব মিলিয়ে ১৬ মিনিট সংযুক্তি সময় দিলেও গোল করতে পারেনি কোনও দল। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy