সুনীল ছেত্রী। — ফাইল চিত্র
ভারত ৪ (সুনীল-হ্যাটট্রিক, উদান্তা)
পাকিস্তান ০
সাফ কাপের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল ভারত। প্রতিবেশী দেশকে ৪-০ গোলে হারিয়ে দিল তারা। হ্যাটট্রিক করলেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। অপর গোল উদান্তা সিংহের। ম্যাচের আগাগোড়া দাপুটে ফুটবল খেলেছে ভারত। তবে বিরতির আগে কোচ ইগর স্তিমাচের লাল কার্ড ম্যাচের একমাত্র খারাপ দিক। বিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে অশোভন আচরণের জন্যে ডাগআউট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ভারতের কোচকে। এ ছাড়া, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিখুঁত ফুটবল খেলে জয় তুলে নিল ভারত।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলদাতাদের তালিকায় চার নম্বরে উঠে এলেন সুনীল। লিয়োনেল মেসির ঠিক পরেই রয়েছেন তিনি। বুধবার হ্যাটট্রিকের পর সুনীলের ৯০টি গোল হয়ে গেল। তাঁর সামনে যে তিন জন রয়েছেন প্রত্যেকেরই একশোটির বেশি গোল রয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল রয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। তিনি ২০০টি ম্যাচে ১২৩টি গোল করেছেন। এর পর ইরানের আলি দায়ি ১৪৮টি ম্যাচে ১০৯টি গোল করেছেন। তিনে মেসি। ১৭৫ ম্যাচে তাঁর গোল ১০৩। চারে সুনীল। তিনি ১৩৮তম ম্যাচে ৯০টি গোল করলেন।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্যে একেবারেই প্রস্তুতি নিতে পারেনি পাকিস্তান। বেশির ভাগ ফুটবলার বেঙ্গালুরুতে এসে পৌঁছেছিলেন বুধবার দুপুরে। প্রস্তুতির অভাবটা শুরু থেকেই বোঝা গেল। ভারতের একের পর এক আক্রমণের সামনে কেঁপে গেল তারা। পড়শি দেশের অনেক ফুটবলার ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ডে খেলেন। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে টানা তিনটি ম্যাচ হেরে এসেছিল পাকিস্তান। ভারতের বিরুদ্ধে এ রকম উত্তেজক ম্যাচেও তাঁদের জ্বলে উঠতে দেখা গেল না।
প্রথম থেকেই বলের দখল ছিল ভারতের পায়ে। আট মিনিটেই সুযোগ চলে আসে ভারতের কাছে। পাক গোলকিপার সাকিব হানিফের গোলকিক এসে পরে সুনীলের পায়ে। তিনি বেশ কিছুটা এগিয়ে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে শট মারেন। তবে পাকিস্তানের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল গোলকিপারের হাতেই ফেরত যায়।
দু’মিনিট পরে আবার পাক গোলকিপারের ভুল। এ বার সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান সুনীল। ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় হানিফ একটি ব্যাক পাস পান। বেশ কিছু সময় বলটি নিজের পায়ে রাখেন তিনি। সুনীল সামনে গিয়ে তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে থাকেন। ডান দিকে এক সতীর্থকে পাস দিতে গিয়ে ভুল করেন হানিফ। বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। সুনীল বল নিয়ে ফাঁকা জালে ঠেলে দেন।
ছ’মিনিট পরে সুনীল নিজের দ্বিতীয় গোল করেন পেনাল্টি থেকে। বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা। বক্সের মধ্যে সেটি পাকিস্তানের এক ডিফেন্ডারের হাতে লাগে। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সুনীল গোলকিপারের ডান দিকে শট মারেন। হানিফ ঠিক দিকে ঝাঁপালেও বলের নাগাল পাননি। সুনীলের গোলের সঙ্গেই উত্তাল হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
দু’টি গোল খেয়ে কেঁপে যায় পাকিস্তান। মাঠে দুই দলের ফারাকটা বার বার বোঝা যাচ্ছিল। ভারত একটানা আক্রমণ করে যাচ্ছিল। অন্য দিকে পাকিস্তান উপরে উঠতেই পারছিল না। প্রথম ২০-২৫ মিনিট ভারতের গোলকিপার অমরিন্দর সিংহকে একটিও বল ধরতে হয়নি। ২৬ মিনিটের মাথায় আবার সুযোগ আসে ভারতের কাছে। বক্সের বাইরে অনিরুদ্ধকে ফাউল করেন পাকিস্তানের এক ডিফেন্ডার। ২৫ গজ দূর থেকে সুনীলের ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
বিরতির কিছু ক্ষণ আগেই শুরু হয় ঝামেলা। ভারতের ডাগআউটের সামনে পাকিস্তানের ডিফেন্ডারের সঙ্গে লড়াইতে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান প্রীতম কোটাল। পাকিস্তান থ্রো-ইন পায়। কিন্তু স্তিমাচ আবেদন করতে থাকেন ফাউলের। রেফারি তাতে কর্ণপাত না করায় পাকিস্তানের আবদুল্লাহ ইকবাল থ্রো করতে যাওয়ার ঠিক আগেই ভারতের কোচ পিছন থেকে তাঁর হাত থেকে বল কেড়ে নেন।
পাকিস্তানের ফুটবলাররা সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একের পর এক ফুটবলার ছুটে আসেন। পাকিস্তান কয়েক জন ফুটবলার ধাক্কা মারেন স্তিমাচকে। ভারতের ফুটবলার এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকিস্তানের ফুটবলারদের রাগ কিছুতেই থামছিল না। আসরে যোগ দেন পাকিস্তানের কোচও। তিনিও রেগে গিয়ে স্তিমাচকে লক্ষ্য করে কিছু বলতে থাকেন। বেশ কয়েক বার তেড়েও যান।
রেফারি, লাইন্সম্যান এবং দু’দলের কিছু ফুটবলারের মধ্যস্থতায় ঝামেলা থামে। রেফারি সুনীল এবং পাকিস্তানের অধিনায়ক হাসান বশিরকে মাঠে ডেকে কিছু কথা বলেন। তার পরেই স্তিমাচকে লাল কার্ড দেখান তিনি। পাকিস্তানের কোচকেও হলুদ কার্ড দেখানো হয়। এ ছাড়া হলুদ কার্ড দেখানো হয় ভারতের সন্দেশ জিঙ্ঘন এবং পাকিস্তানের নবিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তিমাচের ওই আচরণ নিন্দনীয়। ওই পরিস্থিতিতে, এবং প্রতিপক্ষ যেখানে পাকিস্তানের মতো দল, সেখানে ও রকম আচরণ করার কোনও দরকারই ছিল না। সাজঘরে ফেরার আগে স্তিমাচ অবশ্য হাততালি দিয়ে দর্শকদের আরও তাতিয়ে দেন।
বিরতির অনেক আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে দ্বিতীয়ার্ধে দু’দল খেলতে নামার সময় মাঠ কাদা কাদা হয়ে গিয়েছিল। এতে ভারতের পাসিং ফুটবল খেলতে অসুবিধা হতে থাকে। পাকিস্তানও ভাল খেলতে পারছিল না। তবু দ্বিতীয়ার্ধে গোল হওয়া আটকায়নি। ৭২ মিনিটের মাথায় বক্সের ভিতরে আক্রমণরত সুনীলকে পিছন থেকে ঠেলে ফেলে দেন মহম্মদ সুফিয়ান। পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সুনীল। চতুর্থ গোল উদান্তার। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা পাস বাড়িয়েছিলেন আনোয়ার আলি। উদান্তা বল ধরে পাকিস্তানের গোলকিপারকে পরাস্ত করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy