ওয়ার্ম-আপে মগ্ন মেসি, রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স
ম্যাচের ৯০ মিনিট মাঠে নিজেদের নিংড়ে দেন ফুটবলাররা। ঘাম-রক্ত ঝরিয়ে খুঁজে নেন গোলের মুখ। অথবা ব্যস্ত থাকেন গোল বাঁচাতে। মাঠে নেমে খেলার মতোই ম্যাচের আগে ফুটবলারদের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল গা ঘামানো, পোশাকি ভাষায় যাকে বলে ‘ওয়ার্ম-আপ’। যে কোনও ম্যাচ শুরুর আগেই প্রতিযোগী দুই দলের ফুটবলাররা মাঠে নেমে পড়েন। ১৫-২০ মিনিট ধরে গা ঘামানোর পর সাজঘরে ফিরে গিয়ে ম্যাচের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারেন তাঁরা।
যে কোনও ম্যাচের আগেই এই ওয়ার্ম-আপ একটা দর্শনীয় বিষয়। যে ১১ জন খেলবেন শুধু তাঁরাই নন, সবাই মিলে একসঙ্গে অনুশীলন করেন। কাউকে দেখা যায় স্কিপিং করতে, কেউ স্প্রিন্ট টানেন। কেউ কোমর দুলিয়ে স্ট্রেচিং করেন। তার একটু পরে বল নিয়ে পাস খেলতে দেখা যায়। অনেকে আবার গোল লক্ষ্য করে একের পর এক শট নেন। অনেকে আবার নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে থাকেন। দেখে মনে হতেই পারে স্কুলছাত্ররা গেমস্ পিরিয়ডে ফুটবল অনুশীলন করছে। তবে এর কোনওটাই নিজের খেয়ালে নয়। প্রতিটি কাজের পিছনেই রয়েছে বিজ্ঞান।
কী ভাবে সেই কাজ হয়, সম্প্রতি এক প্রতিবেদন তা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় হাই-পারফরম্যান্স ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু ক্লার্ক।
ওয়ার্ম-আপের লক্ষ্য কী?
যে কোনও ম্যাচের আগে ফুটবলাররা যাতে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ১০০ শতাংশ ফিট থাকেন, সেটাই খেয়াল রাখা হয় ওয়ার্ম-আপে। শরীরের উত্তাপ কী ভাবে বাড়াতে হবে, কী ভাবে ম্যাচের মাঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ম্যাচে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে— এ সবই হালকা মেজাজে ঝালিয়ে নেওয়া হয় ওয়ার্ম-আপ করার সময়। কেউ যেন বেশি ওয়ার্ম-আপ না করে ফেলেন, খেয়াল রাখা হয় সে দিকেও। তা হলে ম্যাচে তিনি নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না।
কেন সাজঘরে ওয়ার্ম-আপ করা হয় না?
কিছু ক্ষণ পরে মাঠে হাজার হাজার দর্শকের সামনে নামতে হবে ফুটবলারদের। তার আগে সেই অনুভূতিটা প্রত্যক্ষ করার জন্যই ফুটবলারদের মাঠে পাঠানো হয়। সাধারণত ফুটবলাররা ওয়ার্ম-আপ করার সময় তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আগে থেকেই অনেক দর্শক হাজির হয়ে যান। সেই চিৎকার ফুটবলারদের বাড়তি প্রেরণা জোগাতে পারে। চাপও কিছুটা লাঘব করে।
কেন সব ফুটবলারদেরই ওয়ার্ম-আপ করতে বলা হয়?
বিশ্বকাপে প্রতিটি দলে ২৬ জন ফুটবলার রয়েছে। এর মধ্যে একটি ম্যাচে অংশ নিতে পারেন সর্বোচ্চ ১৬ জন (১১ জন প্রধান দলে, ৫ জন পরিবর্ত)। যাঁরা পরিবর্ত হিসাবে খেলবেন তাঁরা যাতে প্রয়োজনে দ্রুত মাঠে নেমে পড়ার জন্যে তৈরি থাকতে পারেন, সে দিকে নজর রাখা হয়। এক জন ফুটবলারকে যদি রোবট হিসাবে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে ওয়ার্ম-আপ হল তাঁর ‘সুইচ’ অন করে দেওয়া। ওয়ার্ম-আপের পর ফুটবলাররা অনেক শান্ত মনে সাজঘরে ফিরে নিজেদের তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি তাঁদের শান্ত রাখতে সাহায্য করেন দলের সাপোর্ট স্টাফরাও।
প্রথম একাদশে থাকা ফুটবলারদের জন্য ওয়ার্ম-আপে আলাদা কিছু থাকে কি?
খুব বেশি আলাদা হয় না। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু বদল করা হয়। পাঁচের বিরুদ্ধে পাঁচ, চারের বিরুদ্ধে চার পরিস্থিতিতে অনুশীলন করানো হয়। ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই যাতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো জায়গায় চলে আসেন, সেই অনুযায়ী তৈরি করা হয়। অনেক দলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একদম শেষে সব ফুটবলার একসঙ্গে জড়ো হয়ে গোল করে দাঁড়ান। কেউ এক জন ভাষণ দেন।
ওয়ার্ম-আপ এবং ম্যাচ শুরুর মাঝে সাজঘরে ফিরে কী হয়?
ফুটবলাররা নিজেদের পোশাক বদল করেন তো বটেই। ওই সময় আরও এক বার পরীক্ষা করে নেওয়া হয় প্রথম একাদশে থাকা ফুটবলারদের। সেখানেও কোচ শেষ মুহূর্তের পরামর্শ দেন।
কোনও ফুটবলার যদি খুব চাপে থাকেন, বা একেবারেই চাপে না থাকেন, সে ক্ষেত্রে কী করা হয়?
মাঠে ঢুকে পড়লে কথা বললেও বাকিরা শুনতে পান না। তখন সবাই সবার সঙ্গে কথা বলতে পারে। কেউ চাপে থাকলে কথা বলে তাঁকে শান্ত করা যায়। কেউ বেশি উত্তেজিত থাকে, তাঁকে শান্ত করাও সাপোর্ট স্টাফদের দায়িত্ব।
অর্থাৎ মাঠের ভিতরে ৯০ মিনিটের লড়াই নয়, ওয়ার্ম-আপের ক্ষেত্রেও জড়িয়ে থাকে বড় ভূমিকা। ফুটবল খেলায় ‘ফাইনাল টাচ’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়ার্ম-আপও হল ফুটবল ম্যাচের আগে ‘ফাইনাল টাচ’। ফুটবলারদের চাঙ্গা রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy