নায়ক: মরক্কোর প্রহরী বোনো হয়ে উঠলেন দুর্ভেদ্য।
সত্তর দশকের মাঝামাঝি স্বয়ং পেলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ২০০০ সালের আগেই আফ্রিকার কোনও দেশ বিশ্বকাপ জিতবে। মরক্কোই কি সেই স্বপ্নের দেশ হতে চলেছে? ব্রাজিলের বিদায়ের যন্ত্রণার মধ্যেই ফুটবলের সম্রাটের পূর্বাভাস ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে।
কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে ইতিহাস তৈরি করে শেষ চারে পৌঁছল মরক্কো। আগের ম্যাচে স্পেনকে হারানোর পরেই মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই বলেছিলেন, ‘‘সময় এসেছে আফ্রিকার দেশগুলির উচ্চাশা তৈরি করার। আমরা কেন বিশ্বকাপ জেতার কথা ভাবব না?’’ তখন সেই উক্তিতে অনেকে ভুরু কুঁচকে তাকালেও পর্তুগালকে হারানোর পরে মরক্কোবাসীর সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে মরক্কো ছাড়িয়ে। শনিবার রোনাল্ডোদের হারানোর পরেই শাকিরা টুইট করলেন দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের জন্য গাওয়া তাঁর বিখ্যাত গানের লাইন, ‘‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা!’’ জার্মানির ফুটবল তারকা মেসুট ওজিলের টুইট, ‘‘গর্বিত! কী দুর্দান্ত দল! আফ্রিকার জন্য কী অসাধারণ কৃতিত্ব। আধুনিক ফুটবলে যে রূপকথাও সম্ভব, তা দেখে তৃপ্তি হচ্ছে। এই জয় অসংখ্য মানুষকে শক্তি ও আশা দেবে।’’
জয়ের পরেও তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মরক্কোর ফুটবলারেরা। দেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃতিত্বের শরিক হওয়ার পরে দলের খেলোয়াড় সোফিয়ান আমরাবাতে বলছিলেন, ‘‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য! আমি প্রচণ্ড গর্বিত। আমরা ১০০০ শতাংশ এই কৃতিত্বের দাবিদার।’’ তাঁরা যে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের নিংড়ে দিয়েছিলেন তা জানিয়েছেন মরক্কোর মাঝমাঠের ভরসা আমরাবাতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হৃদয় দিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের মানুষের জন্য, দেশের জন্য খেলেছি।’’ চোট-আঘাতে জর্জরিত দল নিয়েও যে মরক্কো হাল ছাড়েনি তা জানিয়েছেন আমরাবাতে। তিনি বলেন, ‘‘চোট আঘাতের সমস্যা নিয়ে আমাদের রক্ষণ সামলাতে হয়েছে। সবার জন্য শ্রদ্ধা। দলের সবাইকে, কোচকে, সমর্থকদের সম্মান জানাই।’’ মরক্কোতে বাস না করেও মরক্কোকে সমর্থন করছেন ইউরোপের বহু দেশের বাসিন্দা। কারণ, মরক্কো থেকে শরণার্থী হয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ছড়িয়ে রয়েছেন গোটা ইউরোপ জুড়ে। ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইটালির মতো দেশে থাকা মরক্কোর বাসিন্দারা এখন এক সুরে চাইছেন মরক্কোর জয়। মরক্কোর ২৬ জনের ফুটবল দলের মধ্যে ১৬ জনই হয় অন্য দেশে জন্মেছেন বা বড় হয়েছেন। কোচ রেগ্রাগুইয়ের নিজের জন্ম প্যারিসে। তিনি নিজে এই মিশ্র সংস্কৃতিকে তুলনা করছেন ‘মিল্কশেক’ তৈরির সঙ্গে। বিশ্বকাপের মাঝে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেওছিলেন, নানা দেশের নানা ফুটবল সংস্কৃতি, শৈলির মিশ্রণ ঘটেছে এই দলে। সেই মিশ্র, বৈচিত্রময় সংস্কৃতির দলই চমকে দিচ্ছে বিশ্বকে।
এই চমক যে কোনও খেতাবের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তা নিজেই বলেছেন কোচ রেগ্রাগুই। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করছে। আমরা এই দলের জন্য সমস্ত মরক্কোবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারছি। এটাই সমস্ত কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও পুরস্কার, যে কোনও অর্থমূল্যের চেয়েও এই সম্মান অনেক বেশি।’’ তবে এই প্রাপ্তি সহজে আসেনি। দলের অনেক ফুটবলারই অভাবের সঙ্গে লড়াই করেছেন। মরক্কোর তারকা আশরাফ হাকিমিও এসেছেন শরণার্থী পরিবার থেকে। তাঁর জন্ম স্পেনে। মা অন্যের বাড়ি সাফাইয়ের কাজ করতেন। বাবা ছিলেন ফুটপাতের সামান্য দোকানদার। প্যারিস সঁ জরমঁ-তে মেসির সতীর্থ ২৪ বছরের হাকিমির খেলা দেখতে কাতারে এসেছেন তাঁর মা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy