Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cristiano Ronaldo

কখনও উদাস, কখনও মুখে হাসি, কখনও গোল বাতিল, সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচে কী করলেন রোনাল্ডো?

অন্য দিন পর্তুগালের ম্যাচের আগে সমাজমাধ্যম ঘাঁটলে সে ভাবে ছবি দেখা যায় না। এ দিন ঠিক তার উল্টো। চার দিকে সব ক্যামেরা যেন ফোকাস করছে পর্তুগালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের দিকেই। সব আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন রোনাল্ডো।

পর্তুগালের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসাবে নামলেন রোনাল্ডো। কেমন খেললেন?

পর্তুগালের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসাবে নামলেন রোনাল্ডো। কেমন খেললেন? ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:২৭
Share: Save:

মঙ্গলবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তখন স্পেন বনাম মরক্কো ম্যাচ শেষ হয়নি। তার মধ্যেই দিকে দিকে রটে যায় খবর। সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে পর্তুগালের প্রথম একাদশে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকেই রাখেননি কোচ ফের্নান্দো সান্তোস! সম্ভাবনা আগেই ছিল। তাই বিরাট যে সবাই অবাক হয়েছেন তেমনটা নয়। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন, রোনাল্ডোর মতো চরিত্র দলে থাকায় তাঁকে অন্তত বসানোর সাহস দেখাবেন না সান্তোস। হল ঠিক উল্টোটা। সান্তোস প্রমাণ করলেন, দলে তিনিই শেষ কথা।

অন্য দিন পর্তুগালের ম্যাচের আগে সমাজমাধ্যম ঘাঁটলে সে ভাবে ছবি দেখা যায় না। এ দিন ঠিক তার উল্টো। চার দিকে সব ক্যামেরা যেন ফোকাস করছে পর্তুগালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের দিকেই। তা সরাসরি দেখানো হচ্ছে টিভিতেও। ম্যাচের অনেক আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল দলে না থাকার অস্বস্তিটা। থমথমে মুখে ওয়ার্ম-আপ সারলেন। এক সময় গোটা দলের সঙ্গে নেমে গেলেন সাজঘরে। সেখান থেকে আবার যখন মাঠে এলেন, তখন সতীর্থদের সঙ্গে জার্সি পরে সারিবদ্ধ ভাবে নয়, কিছুট একা একা। গন্তব্য মাঠের বদলে রিজার্ভ বেঞ্চ। গায়ে পর্তুগালের অনুশীলনের জার্সি। উপরে হলুদ রঙের ‘বিব’। ২০০৬-এর পর এই প্রথম কোনও ম্যাচে পর্তুগালের রিজার্ভ বেঞ্চে থাকলেন রোনাল্ডো। পর্তুগালের জার্সিতে ১৩টি ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে নেমে তিনি গোল করেছেন তিনটিতে।

দল মাঠে নামছে আর তিনি হাঁটা দিচ্ছেন রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে। গত ১৫ বছরে এমনটা দেখাই যায়নি। কিন্তু ইদানীং রোনাল্ডোকে এ ভাবেই দেখে অভ্যস্ত গোটা বিশ্ব। শুরুটা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে করেই দিয়েছিলেন এরিক টেন হ্যাগ। একের পর এক ম্যাচে তিনি রোনাল্ডোকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছেন। না নামানোয় কোচের সঙ্গে বচসা করে ম্যাচের মাঝেই স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যেতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বদলে তাঁকে পরের ম্যাচে দল থেকেই ছেঁটে ফেলেছেন কোচ। তবু রোনাল্ডো ভেবেছিলেন, দেশীয় কোচ সান্তোস অন্তত তা করবেন না। কিন্তু পর্তুগিজ কোচ বুঝিয়ে দিলেন, টেন হ্যাগের মতোই কোনও ফুটবলারের অতিরিক্ত ঔদ্ধত্য তিনি পছন্দ করেন না। নামটা যতই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো হোক।

রোনাল্ডোর ভাগ্যটাও খারাপই বলতে হবে। তাঁর অনুপস্থিতিতে একের পর এক গোল করে গেল দল। দেখে এক সময় মনে হচ্ছিল, রোনাল্ডো থাকার কারণেই আগের ম্যাচগুলিতে ভাল খেলতে পারেনি তারা। রোনাল্ডোর পরিবর্ত হিসাবে যিনি নেমেছিলেন, সেই গনসালো রামোস তো হ্যাটট্রিকই করে ফেললেন। রামোসের প্রথম গোলের সময় রোনাল্ডোকে দেখা গেল গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে। দল এবং সতীর্থের গোলে হয়তো তিনি খুশি হননি। পরিস্থিতি বদলাল পেপের গোলের পরে। গোল করে কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে যেতেই বাকি সতীর্থের সঙ্গে সে দিকে ছুটলেন রোনাল্ডো। বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলেন।

দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর চার মিনিট পরে রোনাল্ডোকে দেখা গেল মাঠের ধারে ওয়ার্ম-আপ করতে। আর কয়েক মিনিট পরেই হয়তো নামতে পারতেন। কিন্তু সেটা হল না সেই রামোসের জন্যেই। ৫১ এবং ৬৭ মিনিটে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন রামোস। দু’বারই ওয়ার্ম-আপের মাঝে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সতীর্থকে অভিবাদন জানান রোনাল্ডো।

পেপে ছুটে এসে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দিলেন রোনাল্ডোকে।

পেপে ছুটে এসে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দিলেন রোনাল্ডোকে। ছবি: রয়টার্স

প্রতীক্ষিত সেই মুহূর্ত ৭৩ মিনিটে। কোনও গোল হয়নি তখন। আচমকাই স্টেডিয়াম জুড়ে চিৎকার। ক্যামেরায় দেখা গেল, সাইডলাইনের ধারে এসে দাঁড়িয়ে রোনাল্ডো। পরিবর্ত হিসাবে নামার অপেক্ষায় তৈরি। রামোসের পরিবর্তেই নামানো হল রোনাল্ডোকে। মুখে লেগে হাসি। মাঠে পা দেওয়ার আগেই পেপে ছুটে এসে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দিলেন। তখনও রোনাল্ডোর মুখে হাসি লেগে।

তিন মিনিট পরেই রাতটা স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ এসে গিয়েছিল রোনাল্ডোর সামনে। বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে ফ্রিকিক পায় পর্তুগাল। অতীতে ওই জায়গা থেকে অনেক গোল করেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু এখন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণতাও কমে গিয়েছে। মুখ ইস্পাতকঠিন করে, জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ফ্রিকিকের প্রস্তুতি নিলেন বটে, কিন্তু সপাটে শট গিয়ে লাগল সুইৎজ়‌ারল্যান্ডের ওয়ালে।

৮৪ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে উইলিয়াম কার্ভালহোর ক্রস পেয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বল কিছুটা টেনে নিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করেন। তবে বল জালে জড়ানোর আগেই বোঝা গিয়েছিল, তিনি অনেকটাই অফসাইডে দাঁড়িয়ে। লাইন্সম্যান পতাকা তুলতে ভুল করেননি। বাকি ম্যাচে আর সে ভাবে কিছু করতে পারেননি।

দিনের শেষে আক্ষেপ তাই রয়েই গেল। দল আধ ডজন গোল করল। কিন্তু স্কোরশিটে দেখা গেল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নাম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy