কাতার বিশ্বকাপে চলছে টিকিটের কালোবাজারি। ছবি: টুইটার।
কাতারের আইন ভীষণ কড়া। মদ, সমকামিতার মতো নিষিদ্ধ কালোবাজারি। কোনও জিনিসের দাম নির্দিষ্ট মূল্যের থেকে বেশি নেওয়া অপরাধ। তবু বিশ্বকাপের দোহায় রমরমিয়ে চলছে টিকিটের কালোবাজারি। নির্দিষ্ট দামের ১০ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে টিকিট।
গোপনে নয়, প্রকাশ্যেই চলছে বিশ্বকাপের টিকিটের কালোবাজারি। যাঁদের দেশ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে, তাঁদের অনেকে বাকি ম্যাচের টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছেন। চড়া দামে সেই সব টিকিট কিনে নিচ্ছেন টিকিট না পাওয়া বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
মিশর থেকে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছেন আশরাফ আলি। লিয়োনেস মেসির ভক্ত আশরাফের কাছে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ম্যাচের টিকিট ছিল না। খেলা শুরুর ছ’ঘণ্টা আগে আশরাফ বন্ধুদের নিয়ে চলে যান স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ। হাতে একটি বোর্ডে খেলা ছিল, ‘‘আমাদের টিকিট চাই।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই এগিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। প্রতিটি টিকিটের জন্য তিনি দু’হাজার ডলার করে দাবি করেন। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। যা টিকিটের আসল দামের প্রায় ন’গুণ বেশি। এত টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে রাজি হননি আশরাফ। শেষে খেলা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে ৫০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪১ হাজার টাকা) দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে টিকিট কেনেন তিনি। এই মূল্যও টিকিটের আসল দামের দ্বিগুণের বেশি। আরও অপেক্ষা করলে ক্রেতা না পাওয়ার আশঙ্কায় কম লাভে টিকিট বিক্রি করে দেন তিনি।
আশরাফ একা নন। তাঁর মতো অসংখ্য ফুটবলপ্রেমী প্রতি দিন খেলার আগে স্টেডিয়ামগুলিতে পৌঁছে যাচ্ছেন টিকিটের আশায়। চাহিদা অনুযায়ী টিকিটের দাম বেড়েছে ১০ গুণ পর্যন্ত। পুলিশি এবং সিসিটিভি নজরদারির মধ্যেই চলছে বিশ্বকাপের টিকিটের কালোবাজারি। কারণ শান্তিতে বিশ্বকাপ শেষ করার জন্য আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সচেতন পুলিশ কর্মীরা।
ফ্রান্সের এক সমর্থক দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট চড়া দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রয়োজনের থেকে বেশি টিকিট কিনে রেখেছিলেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালের অতিরিক্ত টিকিটও চড়া দামে বিক্রি করবেন। কারণ তাঁর কাছে ফাইনালের টিকিট নেই। কিলিয়ন এমবাপেরা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলে টিকিট কিনবেন তিনি। তাঁর দাবি, অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন, তাতে কালোবাজারে ফাইনালের টিকিট কিনেও কিছু থেকে যাবে। তিনি বলেছেন, ‘‘যে সব ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ বেশি সেই সব ম্যাচের অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’ টিকিট কেনাবেচার জন্য অনেকে ব্যবহার করছেন সমাজমাধ্যমকেও।
টিকিটের কালোবাজারি রুখতে কয়েক দিন আগে বিশ্বকাপ আয়োজকরা আবেদন করেছেন, টিকিট না থাকলে ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামের কাছাকাছি যাবেন না। তাতে কোনও লাভ হয়নি। খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে টিকিটহীন ফুটবলপ্রেমীরা দলে দলে পৌঁছে যাচ্ছেন স্টেডিয়ামগুলিতে। অনেকে আবার টিকিটের আবদার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন নিজের দেশের দূতাবাদে। দক্ষিণ আমেরিকার একটি দূতাবাসের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘প্রতি দিন কয়েক শো টিকিটের অনুরোধ আসছে। আমাদের পক্ষে টিকিটের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। অনেকে আবার অনুরোধ করছেন, কালোবাজারে টিকিট কিনতে বা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে সাহায্য করার জন্য।’’
বিশ্বকাপের জন্য কাতার একটি বিশেষ আইন তৈরি করেছে। যাতে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির অধিকার এক মাত্র ফিফার। অন্য কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি নিষিদ্ধ। এমন ঘটনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনের বলে ধরপাকড় চালাচ্ছে কাতার পুলিশ। কালোবাজারের বিক্রেতা-ক্রেতাকে ধরতে পারলে টিকিটের মূল্যে ১০ গুণ পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। ফিফাও জানিয়েছে, কালোবাজার থেকে উদ্ধার হওয়া সমস্ত বৈধ টিকিট বাতিল বলে বিবেচিত হবে। ফিফার এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ফুটবলপ্রেমীদের স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা যেমন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের হাতে সঠিক দামে খেলার টিকিট পৌঁছে দেওয়া।’’ কালোবাজারি রুখতে কাতার প্রশাসন এবং ফিফা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কড়া হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এত সব করেও ঠেকানো যাচ্ছে না ফুটবলপ্রেমীদের। চতুর স্ট্রাইকারের মতো জায়গা নিচ্ছেন তাঁরা। কাতার প্রশাসন এবং ফিফার রক্ষণকে বোকা বানিয়ে কাজ হাসিল করছেন। টিকিটের কালোবাজারি যে ১০০ শতাংশ রোখা যাচ্ছে না, তা মেনে নিয়েছে কাতার প্রশাসন।
আর্জেন্টিনা থেকে কাতারে খেলা দেখতে এসেছেন ফেডরিকো ক্রিয়াডো। ৩৩ বছরের যুবক ফিফার টিকিট কাউন্টার এবং অনলাইনে দু’দিন ধরে খোঁজ করেও কোয়ার্টার ফাইনালের একটা টিকিটেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সকলে চাইছে স্টেডিয়ামে খেলার আগে টিকিট বিক্রি করতে। তা হলে বেশি অর্থ পাওয়া যাবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিক্রি করলে আর্থিক লাভের সুযোগ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy