ইস্টবেঙ্গল তাঁবু। —ফাইল ছবি
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের। টার্মশিট থেকে দল গঠন, সবকিছুতেই নাকি বাধা দিয়েছেন ক্লাব কর্তারা। এমনই অভিযোগ তাদের। প্রাক্তন ফুটবলাররা অবশ্য ক্লাবের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন, বিনিয়োগকারী সংস্থার অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন বলেই দাবি তাঁদের। বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমস্যা মেটাতে প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। সেই কমিটির সব সদস্যই ক্ষুব্ধ শ্রী সিমেন্টের আচরণে।
প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা প্রাক্তনরা সমস্যা মেটাতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। আমি নিজে ফোন করেছিলাম ওঁদের। কিন্তু ওঁদের আচরণ ছিল অত্যন্ত অপমানজনক। ক্লাব চিঠি দিয়ে দল গঠনে সাহায্য করতে চেয়েছিল। সেই চিঠির উত্তরও দেননি ওঁরা। বিনিয়োগকারীরা কি দল তৈরি করতে পারে! আমাদের তো কর্তারাই নিয়েছিলেন। কর্তাদের খেলোয়াড় চেনার আলাদা চোখ থাকে। তা ছাড়া, শ্রী সিমেন্টকে সময় থাকতে দল তৈরি করতে কে বাধা দিয়েছিল? স্পোর্টিং রাইট তো ওঁদের কাছেই ছিল। ১০০ বছরে ক্লাবের সম্মান মাটিতে নামিয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছিল ওঁদের।’’ রীতিমতো ক্ষোভ ঝরে পড়ছিল প্রশান্তর কথায়। টার্মশিটের সব শর্ত কোনও ক্লাবের পক্ষেই মানা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন তিনি।
শ্রী সিমেন্টের অন্যতম অভিযোগ, ইস্টবেঙ্গলের কয়েকজন কর্তা নাকি ফোন করে দলের বাঙালি ফুটবলারদের খারাপ খেলতে বলতেন। এই অভিযোগ শুনেই ক্ষিপ্ত আর এক প্রাক্তন বিকাশ পাঁজি। তাঁর বক্তব্য, ক্লাবের কোনও কর্তা ফুটবলারদের এমন কোনও কাজ করতে বলতে পারেন না যাতে ক্লাবের অসম্মান হয়। বিকাশের বক্তব্য, ‘‘কেন বার বার বলার পরেও শ্রী সিমেন্ট আলোচনায় বসেনি? সই না করলে নাকি কথাই বলবে না। আমাদের প্রাক্তনদের আলোচনার প্রস্তাবও খারিজ করে দেয়। টার্মশিটের কিছু শর্ত মানা সম্ভব ছিল না। আমরা একাধিক বিশিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরাও বলেছেন, এই শর্তগুলো মেনে নেওয়া মানে ক্লাবকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া। ক্লাব কেন তার স্বত্ত্ব বিক্রি করে দেবে! ক্লাবে প্রাক্তন ফুটবলার, সদস্য, সমর্থকদের ঢুকতে দেবে না, এ কথা ইনভেস্টর কী করে বলতে পারে? কেউ টাকা দিচ্ছে বলে ক্লাব নিয়ে তো রাজস্থানে চলে যেতে পারে না। দল করতে পারেনি। রোজ হারছে। সদস্য, সমর্থকদের রাগের পারদ চড়ছে। তাই এখন দায় এড়াতে চাইছে।’’
প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায়ের সাফ কথা, শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গলকে পরিচিত করেনি। বরং ইস্টবেঙ্গলই পরিচিত করেছে শ্রী সিমেন্টকে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ মানেননি বলে তাঁর অভিযোগ। কৃষ্ণেন্দুর বক্তব্য, ‘‘সব মিথ্যা অভিযোগ। শ্রী সিমেন্টের এ সব কথার কোনও প্রমাণ আছে? ওঁরা ফল দিতে পারেননি। কারও সঙ্গে কথাই বলতে চান না। আলোচনা করতে চান না। দল করতে না পারার দায় ইনভেস্টরের। দল করেননি কেন আগে থেকে? স্পোর্টিং রাইট ওঁদের কাছে আছে। এত কেন কোচ, বিদেশি ফুটবলার বদল হচ্ছে? টিমটাকে সেটই হতে দিল না। ক্লাব কখনও স্পনসরের হতে পারে না। ক্লাব সদস্য, সমর্থকদের। তাঁরা কর্তাদেরই চেনেন। তাই তাঁদের সব রাগ, হতাশা কর্তাদের উপর পড়ছে। যে কর্তারা এত দিন ধরে প্রাণ দিয়ে ক্লাবকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তাঁরা কিছু নন!’’
প্রাক্তন ফুটবলার অতনু ভট্টাচার্য শ্রী সিমেন্টের অভিযোগ নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে নারাজ। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘ফল দিতে না পারলে সরে যেতেই হবে। সে যে যত বড় নাম হোক। ওরা ফল দিতে পারেনি। তাই সরে যাচ্ছে। এ সব অভিযোগ করে নিজেদের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। পয়েন্ট টেবলের নিচে থাকার জন্য নয়। কথায় বলে, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা। ওঁদের সেই অবস্থা।’’
প্রাক্তনরা সকলেই বলছেন, ভারতের যে প্রতিযোগিতায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলে না, তার কোনও গুরুত্ব নেই। এখনকার ফুটবলে ইনভেস্টর অবশ্যই দরকার। কিন্তু, ইনভেস্টর কখনও ক্লাবের উপরে হতে পারে না। প্রয়োজনে আই লিগ এবং অন্য প্রতিযোগিতায় খেলবে ইস্টবেঙ্গল। টাকা দিচ্ছে বলেই ক্লাবের সম্মান বিকিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি তাঁদের আশা, এর পর থেকে ক্লাব কর্তারা সব বিষয়ে ভাল করে আলোচনা করে, বুঝে ইভেস্টেরের সঙ্গে চুক্তি করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy