চোট পেয়ে মাঠে পড়ে সুদীপ। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার ফুটবল পরিকাঠামো নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠে গেল। পঞ্চম ডিভিশনের খেলায় পর পর দু’দিনে তিন ফুটবলার গুরুতর আহত হওয়ায় আইএফএ-র উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ক্লাব কর্তা, ফুটবলার এবং অভিভাবকরা। মাঠের বেহাল দশা মেনে নিয়েও আইএফএ সচিব জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ভাবে খেলা হয়নি।
সোমবার কলকাতা ময়দানের রেঞ্জার্স মাঠে খেলা ছিল অরুণোদয় স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে ক্যালকাটা ইউনাইডেট ক্লাবের। সেই ম্যাচেই ক্যালকাটা ইউনাইটেডের দুই ফুটবলার আহত হয়। সুদীপ আহিরের চোট লেগেছে কোমরে। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না নবম শ্রেণির ছাত্রটি। সুদীপকে মাঠ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্স-রে করা হয়েছে তার। মঙ্গলবার রিপোর্ট দেওয়া হবে। এ দিন সন্ধ্যায় তাকে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ভর্তি করার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেছেন তাঁরা। সুদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে বলেছে, ‘‘মাঠ খুব খারাপ ছিল। আমাকে খুব বাজে ভাবে ট্যাকল করা হয়। তাতেই পড়ে গিয়ে কোমরে লেগেছে। যন্ত্রণা আছে। বাড়িতে গিয়ে আবার ডাক্তার দেখাতে হবে।’’ অন্য দিকে দলের গোলরক্ষক পার্থ আদকের ডান চোখের তলায় আঘাত লেগেছে। ফুলে থাকায় সেই চোখে ভাল করে দেখতে পাচ্ছে না দশম শ্রেণির পড়ুয়া। সুদীপের বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধার একটি গ্রামে। তার বাবা কৃষিজীবী। পার্থকে এ দিনই ব্যান্ডেলের দক্ষিণ নলডাঙা গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্থর বাবা সবজি বিক্রেতা। এদিন মাঠে যে কয়েকজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন তাঁরাও রেঞ্জার্স মাঠের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এমন অব্যবস্থার মধ্যে খেলা চললে অভিভাবকরা ছেলেদের আর মাঠে পাঠাবেন না বলে আশঙ্কা ক্লাব কর্তাদের। তেমন হলে, প্রতিযোগিতায় দল নামানোই কঠিন হবে। মাঠের অবস্থা দেখে তাঁরাও ছোট ফুটবলারদের খেলানোর সাহস পাচ্ছেন না।
ক্যালকাটা ইউনাইটেডের কোচ বিশ্বজিৎ দে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ অব্যবস্থায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেঞ্জার্স মাঠের অবস্থা ভয়াবহ। মাটিতে পা আটকে যাচ্ছে। খেলার অযোগ্য এই মাঠে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমার দলের দু’জনের চোট লাগল। রবিবারও এক ফুটবলারের হাড় ভেঙেছে। কী ভাবে এরকম মাঠে খেলা দেওয়া হচ্ছে! মাঠে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা থাকে না। খেলার সময় মাঠে আইএফএ-র দু’এক জন প্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর কাউকেই আর দেখা যায়নি।’’
ঘটনার সময় রেঞ্জার্স মাঠেই ছিলেন ক্যালকাটা ইউনাইটেডের কর্তা তথা আইএফএর প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি ফোন করেন আইএফএ-র সহ-সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে। তিনি একটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান। তাতেই হাসপাতালে পাঠানো হয় সুদীপকে।
রেঞ্জার্স মাঠে খেলা দেওয়া নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন জয়দীপ। তা-ও কেন সেই মাঠেই খেলা দেওয়া হল বুঝতে পারছেন না তিনি। জয়দীপ বললেন, ‘‘যে মাঠ খেলার অযোগ্য, বল ঠিক মতো গড়ায় না, সেখানে কী ভাবে খেলা দেওয়া হচ্ছে? রেঞ্জার্স মাঠে কখনই তেমন খেলা দেওয়া হয় না খুব প্রয়োজন না হলে। ১৫-১৬ বছরের ছেলেদের অভিজ্ঞতা প্রায় নেই। ওদের চোট লাগার সম্ভাবনা আরও বেশি। খারাপ মাঠে খেলা কঠিন। বড় কিছু ঘটে গেলে কে দায় নেবে? আমাদের এখনই সাবধান হওয়া দরকার। না হলে বড় বিপদ ঘটলে নিজেদেরই ক্ষমা করতে পারব না। এ রকম হলে দল তুলে নিতে হবে আমাদের। বাচ্চাদের নিয়ে এইরকম ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। অভিভাবকরাই বা কোন ভরসায় ছেলেদের খেলতে পাঠাবেন। আমরা তা হলে কী ভাবে নতুন ফুটবলার তুলে আনব?’’
আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বললেন, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার পর তাড়াতাড়ি খেলা শুরু করতে হয়েছে। আগেই ক্রীড়াসূচি প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল। রেঞ্জার্স মাঠের অবস্থা সত্যিই খারাপ। আমরা ওই মাঠ থেকে খেলা সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছি। বর্ষায় কলকাতার কোনও মাঠের অবস্থাই ভাল থাকে না।’’
দুই ফুটবলারের চোট নিয়ে তিনি খারাপ মাঠকে সম্পূর্ণ দায়ী করতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘‘ম্যাচটায় মোটেও ভাল খেলা হয়নি। পাঁচটা লাল কার্ড হয়েছে। কেমন খেলা হলে রেফারিকে পাঁচটা লাল কার্ড দেখাতে হয়? মাঠে মেডিক্যাল কিট, স্ট্রেচার, প্রশিক্ষিত স্ট্রেচার বয়, আইএফএ-র প্রতিনিধি সবই ছিল। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। চোট খুব গুরুতর হলে চিকিৎসকরা নিশ্চয় এক্স-রে করে আর একটা ইঞ্জেকশন দিয়েই বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন না। ছোট ছোট ছেলেরা খেলছে। ক্লাব কর্তা, কোচেদের উচিত ওদের বোঝানো খেলাটাকে খেলার মতো করেই দেখতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy