E-Paper

সুযোগ পেলে রবিরাই তারকা হবে: সঞ্জয়

বাংলাকে সাত বছর পরে সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করেও কোচ সঞ্জয় সেনের গলায় আতিশয্য নেই। বরং রয়েছে প্রত‌্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা হতদরিদ্র ছেলেগুলির জন‌্য সাফল্যের শুভকামনা।

আপ্লুত: সন্তোষ ট্রফি নিয়ে বাংলার কোচ সঞ্জয় সেন। 

আপ্লুত: সন্তোষ ট্রফি নিয়ে বাংলার কোচ সঞ্জয় সেন।  ছবি:আইএফএ।

সুতীর্থ দাস

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪৫
Share
Save

বিমানবন্দরে নামার পরে মানুষের ঢল, উচ্ছ্বাস দেখে আনন্দ পেলেও অস্বস্তিও ছিল। কারণ চিরকালই ভিড় না পসন্দ। নিজের কাজ করতে ভালবাসেন প্রচারের ঢক্কানিনাদ থেকে শতহস্ত দূরে থেকে। তাই বাংলাকে সাত বছর পরে সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করেও কোচ সঞ্জয় সেনের গলায় আতিশয্য নেই। বরং রয়েছে প্রত‌্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা হতদরিদ্র ছেলেগুলির জন‌্য সাফল্যের শুভকামনা।

কল্যাণীতে প্রস্তুতি থেকে শুরু করে যোগ্যতা অর্জন পর্ব পেরিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাসের কঠিন লড়াইয়ের পরে এসেছে কাঙ্খিত সাফল্য। শুরুর দিনগুলিতেও যা বলেছেন, ট্রফি নিয়ে শহরে আসার পরেও সেই সুরে বিন্দুমাত্র বদল নেই। ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “সব কৃতিত্ব ছেলেদের। আমি শুধুমাত্র ওদের পরামর্শ দিয়েছি। বাকি কাজ মাঠে নেমে ওরাই করেছে। ছেলেদের এটা প্রাপ্য“। আর আপনার প্রাপ্য নয়? এ বারেও সেই একই উত্তর, “শুধু ছেলেদের, আমার নয়।”

আইএসএলের ভরা বাজারে সন্তোষ ট্রফি নিয়েও যে লোকের আগ্রহ রয়েছে, তা দেখে যেন কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করছেন বঙ্গকোচ। বাংলার ফুটবল যখন শুধুই সত্তর-আশির সোনালি দিনের স্মৃতিচারণায় মগ্ন, তখন যেন রবি হাঁসদা, নরহরি শ্রেষ্ঠ, চাকু মান্ডিদের ভারত জয় তাঁদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। আবার সেই বাংলা, যারা গত বছর সন্তোষ ট্রফিতে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। যা নিয়ে ঘরে বাইরে প্রচুর কথাও শুনতে হয়েছে। অনেক লড়াইয়ের পরে যখন সঞ্জয় সেনকে কোচ করা হল, এক কথাতেই রাজি হয়ে যান। কেন রাজি হয়েছিলেন? তাৎক্ষণিক জবাব, “বাংলার দায়িত্ব নেওয়া তো গর্বের ব্যাপার। নিজেকে নতুন পরীক্ষার মুখে না ফেললে কি ভিতরের আসল মানুষটাকে চেনা যায়? তাই ফুল মার্কস পেয়ে পাস করার পরের অনুভূতিও আমার কাছে বিশেষ।”

সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার সামনে এক একটি প্রতিপক্ষ এসেছে এবং খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে। কখন বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে সন্তোষ ট্রফি বাংলার ঘরে আসছে? হেসে উত্তর, “একটা সময়ের পরে বিশ্বাস এসে গিয়েছিল। ফল পাওয়ার আগে পর্যন্ত এই বিশ্বাসের কথা কাউকে জানাই না। কারণ তাতে আত্মতুষ্ট হওয়ার ন‌্যূনতম সম্ভাবনাও থেকে যায়।”

তবে শুধু বিশ্বাস করলেই তো হল না, সেই বিশ্বাসে স্থির চিত্তে অটল থাকা আরও বেশি দরকার। উপায় কী? “প্রথম দিন থেকেই ছেলেদের লক্ষ‌্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম- চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। ফাইনালে গিয়ে হারলে কেউ মনে রাখবে না। বারবার ওদের এই কথাই বলতাম। অর্জুনের পাখির চোখে লক্ষ্যভেদ করার মতো তোমরাও শুধু ট্রফি দেখ। বাকিটা আমি বুঝে নেব। সবকিছুকে শৃঙ্খলে বেঁধে দিয়েছিলাম। তবে পরিবেশ বদ্ধ করে দিইনি। ফুরফুরে বাতাস না এলে তো আসল লক্ষ্যই পূরণ হবে না। ছেলেরাও সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে,” বলে দিয়েছেন রবিদের চাণক্য।

ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধের সংযুক্ত সময়ে গোল করেন রবি। তার আগে কি চাপে ছিলেন? সঞ্জয়ের জবাব, “কিছুটা তো চাপে ছিলাম। কিন্তু ছেলেদের উপরে বিশ্বাস ছিল। ম‌্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে যেন বুকের উপর থেকে পাথর নেমে গেল।” বিরতিতে কি আলাদা কোনও নির্দেশ দিয়েছিলেন? “ধৈর্য‌্য রাখো। লক্ষ‌্য থেকে বিচ‌্যুত হয়ো না, ব‌্যস এটুকুই,” সোজাসাপ্টা জবাব চ‌্যাম্পিয়ন কোচের।

আইএসএলের প্রতি তাঁর এখন মোহভঙ্গ হয়েছে। ক্ষোভ উগরে বললেন, “আইএসএলের মান এখন শূন্য। শুধুমাত্র চমক এবং প্রচার সর্বস্বতায় লিগ চলছে। আইএসএল যখন চলছিল, সন্তোষ ট্রফির কেউ খোঁজ রেখেছে? অথচ দেশের প্রতিভা তুলে আনার সেরা মঞ্চ এই সন্তোষ ট্রফি। রবি, নরহরি, চাকুদের মতো প্রতিভারা উপযুক্ত সুযোগ পেলে তারকা হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। সেই পথটা আরও কঠোর পরিশ্রম করে ওদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।”

আইএফএ সচিব তো স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় আই লিগ জয়ী প্রাক্তন কোচকে রাখবেন। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁর উত্তর, “বাংলার ফুটবলের কোনও উপকারে লাগতে পারলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না। সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।”

মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ, ফেডারেশন কাপ, মহমেডানের হয়ে আইএফএ শিল্ড জয়, বাংলাকে সন্তোষ ট্রফি দেওয়া- ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা কোচের সাফল‌্যের পাতায় এক একটা চিরস্মরণীয় অধ্যায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। তাঁর নিজের মূলমন্ত্র কী? ‘আড়ালে থেকে নিজের কাজ করে যাও। সময় সব জবাব দেবে।’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Santosh Trophy Sanjoy Sen

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।