এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে তৃতীয় রাউন্ডের প্রস্তুতি হিসেবে বাহরিন (২৩ মার্চ) ও বেলারুসের (২৬ মার্চ) বিরুদ্ধে খেলবে ভারত। চোটের কারণে সুনীল ছেত্রী ছিটকে গিয়েছেন। এই দু’টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করবেন যথাক্রমে গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু ও সন্দেশ জিঙ্ঘন।
অকুতোভয়: মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে খেলে চলেছেন আনোয়ার।
স্বপ্নপূরণ আনোয়ার আলির। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ফুটবলের মূলস্রোতে স্মরণীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। এ বার ফিরলেন ভারতীয় দলেও। বাহরিন ও বেলারুসের বিরুদ্ধে আসন্ন আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলির জন্য প্রস্তুতি শিবিরে ডাক পেলেন আনোয়ার। সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে ২১ মার্চ দলের সঙ্গে বাহরিন রওনা হচ্ছেন তিনি।
হৃদ্যন্ত্রে ত্রুটি থাকায় আনোয়ারের ফুটবলজীবনই এক সময় শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, খেলতে খেলতে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমনকী মৃত্যুও অসম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনও আনোয়ারের খেলার উপরে জারি করেছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু লড়াই থামাননি ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা। ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দিল্লি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি, মিনার্ভা অ্যাকাডেমিতে নীরবে চালিয়ে গিয়েছিলেন অনুশীলন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে গত বছরের ২৭ অগস্ট ফেডারেশন সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হয়। শর্ত দেয়, আনোয়ার ও তাঁর ক্লাবকে মুচলেকা দিতে হবে। তা হলেই খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই এফসি গোয়ায় খেলার ডাক পান তিনি। প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখতে শুরু হয় আনোয়ারের সাধনা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এফসি গোয়ায় সই করেন তিনি। এ বার অপেক্ষা মাঠে নামার। ঠিক এক সপ্তাহ পরে আইএসএলে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন তিনি। অভিষেকে ম্যাচেই সেরার পুরস্কার নিয়ে মাঠ ছাড়েন আনোয়ার। অথচ তাঁর মধ্যে কোনও উচ্ছ্বাস ছিল না। বলেছিলেন, ‘‘আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য এফসি গোয়া ও আইএসএলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমার আসল লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে খেলা।’’ অবশেষে অপেক্ষার অবসান। চার বছর পরে ভারতীয় দলে ডাক পেলেন আনোয়ার।
গত ৪ মার্চ বাহরিন ও বেলারুসের বিরুদ্ধে ৩৮ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেন কোচ ইগর স্তিমাচ। তালিকায় নিজের নাম না দেখে একটু হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আনোয়ার। দিন দু’য়েক আগে যখন তাঁকে জানানো হয়, রবিবার পুণেতে জাতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিতে হবে, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডার। বছর চারেক আগে ভারতের সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়েও খেলতে পারেননি তিনি। হৃদ্যন্ত্রে জন্মগত ত্রুটি ধরা পড়ায় বাদ পড়েছিলেন তিনি। চব্বিশ ঘণ্টা আগে জাতীয় শিবিরে যোগ গিয়ে উচ্ছ্বসিত আনোয়ার বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে ডাক পেয়ে আমি প্রচণ্ড উত্তেজিত। এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য মূল দলে জায়গা পাকা করা।’’
চার বছর আগে আনোয়ার যখন ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েন, তখনও কোচ ছিলেন ইগর। প্রতিশ্রুতিমান ডিফেন্ডারকে ভারতীয় দলে ফিরিয়ে তিনি রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। সোমবার দুপুরে পুণে থেকে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে ইগর বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলে আনোয়ার তো নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ও ছিল আমাদের সঙ্গে। আমার অত্যন্ত পছন্দের ফুটবলারও। কিন্তু শারীরিক কারণে ওকে বাদ পড়তে হয়েছিল। আনোয়ার এখন বাকিদের মতোই স্বাভাবিক ফুটবল খেলছে। দারুণ উন্নতিও করছে।’’ আনোয়ার ছাড়াও জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন দানিশ ফারুখ, ভি পি সুহের, জেরি মাওয়াইমিংথাঙ্গা ও রোশন সিংহ। একঝাঁক নতুন ফুটবলারকে নেওয়ার কারণ কী? ইগর বললেন, ‘‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওরা কেমন খেলে, সেটাই দেখতে চাই। কারণ আন্তর্জাতিক ফুটবলের চেয়ে আইএসএলের মান অনেক পিছিয়ে রয়েছে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘অনেক ভারতীয় ফুটবলারকেই দেখেছি আইএসএলে দুর্দান্ত খেলতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে কিছুই করতে পারেনি।’’
এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে তৃতীয় রাউন্ডের প্রস্তুতি হিসেবে বাহরিন (২৩ মার্চ) ও বেলারুসের (২৬ মার্চ) বিরুদ্ধে খেলবে ভারত। চোটের কারণে সুনীল ছেত্রী ছিটকে গিয়েছেন। এই দু’টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করবেন যথাক্রমে গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু ও সন্দেশ জিঙ্ঘন। প্রশ্ন উঠছে, বেলারুসের বিরুদ্ধে ম্যাচ কি আদৌ হবে? ইউক্রেনের উপরে আক্রমণের প্রেক্ষিতে রাশিয়াকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে ফিফা ও উয়েফা। শোনা যাচ্ছে বেলারুসের ক্ষেত্রেও নাকি একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। ইগর বলছেন, ‘‘ফিফার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছি আমরা। এখনও পর্যন্ত বেলারুসের বিরুদ্ধে ম্যাচবাতিল হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy