শনিবার কাতারে অনুশীলনে মগ্ন পর্তুগালের নায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁদের প্রথম ম্যাচ ঘানার বিরুদ্ধে। ছবি রয়টার্স।
ফুটবলের বিশ্বকাপ? নাকি বিতর্কের বিশ্বকাপ? আজ, রবিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় ২০২২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আল বায়েত স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে আয়োজক দেশ কাতার। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগেই বিতর্কে জর্জরিত তারা। ইংল্যান্ডের একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার জন্য নাকি ইকুয়েডরের ফুটবলারদের ৭৪ লক্ষ ডলার ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কাতার!
আরবিতে আল বায়েতের অর্থ নিজের বাড়ি। কাতারের যাযাবর জনগোষ্ঠী বায়াত-আল-শা-আর-রা মরুভূমির মধ্যে যে ধরনের তাঁবুতে থাকতেন, তারই অনুকরণে দোহা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে ৬০ হাজার দর্শকাসনের এই স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও এই নভেম্বরেও কাতারে দিনের বেলা রাস্তায় বেরোলে রোদের তাপে চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। তাতেও অবশ্য বিশ্বকাপের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উন্মাদনার খামতি নেই ফুটবলপ্রেমীদের। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, অভিযোগ জানিয়ে শাকিরা-সহ একাধিক তারকা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসছেন না ব্রিটিশ পপ ও রকস্টার রড স্টুয়ার্ট। শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি দশ লক্ষ ডলারের প্রস্তাবেও রাজি হননি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। তিনি বলেছেন, ‘‘কাতার আগে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করুক। ১৫ মাস আগেই আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই কারণেই আমি রাজি হইনি।’’ থাকবেন না আর এক শিল্পী ডুয়ার্ট লিমাও। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আসছেন না ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লাসো-ও। তবে অনুষ্ঠান করবেন রবি উইলিয়ামস, ক্রেগ ডেভিড ও টেনি টেম্পাহরা।তার উপরে ম্যাচ গড়াপেটার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। কাতারবাসী অবশ্য উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট জোগাড় করা ছাড়া অন্য কিছুতে মন দিতে রাজি নন।
আল বায়েত স্টেডিয়ামের আশেপাশে জনবসতি কার্যত নেই বললেই চলে। সবচেয়ে কাছের মেট্রো স্টেশন থেকেও স্টেডিয়ামে পৌঁছতে আধ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। ভরসা একমাত্র ট্যাক্সি। বিশ্বকাপের জন্য ভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। শনিবার বেলা দশটা থেকেই আল বায়েত স্টেডিয়ামের সামনে ভিড়। ফিফার তরফে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কাতারবাসীর। স্টেডিয়ামের সামনে তাঁরা ভিড় করছেন টিকিটের আশায়। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বাইরে যেমন টিকিট কাউন্টার থাকে, এখানে সে রকম কিছু নেই। টিকিট কাটতে হবে অনলাইনেই। কলকাতার পার্থ সাহা গত পাঁচ বছর ধরে কাতারে কর্মরত। বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচের টিকিট কেটেছেন। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট পাননি বলে মন খারাপ। তিনিও শনিবার দুপুরে হাজির আল বায়েত স্টেডিয়ামের সামনে। বলছিলেন, ‘‘যুবভারতীতে অনেক বারই শেষ মুহূর্তে গিয়ে টিকিট পেয়েছি। সেই আশা নিয়েই এখানে এসেছি।’’ পার্থর আশা যদিও পূরণ হয়নি। টিকিট না পেয়েই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।
আল বায়েত স্টেডিয়ামে কাতারের স্থানীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রথা মেনে বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে মাঠে ঢুকবেন গত বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস। সঙ্গে থাকবে এ বারের বিশ্বকাপের ম্যাসকট লা’ইব।
ফিলিপিন্সের জনের বেশি আগ্রহ দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বিটিএস’ গ্রুপকে দেখার। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইবে তারা। জন বলছিলেন, ‘‘বিটিএসের আমি ভক্ত। কাতারে এর আগে ওরা একাধিক অনুষ্ঠান করলেও যেতে পারিনি, টিকিটের দাম প্রচুর হওয়ায়। তুলনায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিটের দাম অনেক কম। তাই এসেছি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পেলাম না।’’ ফিফার কর্মীরা সকলে বিনীত ভাবে বোঝাচ্ছেন, টিকিট সব শেষ। পরামর্শ দিচ্ছেন, ফ্যান জ়োনে যাওয়ার। দুর্গাপুজোর সময় পঞ্চমীর দিন যে রকম আবহ থাকে বাংলায়, বিশ্বকাপ উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে একই রকম উন্মাদনা ও ব্যস্ততা চোখে পড়ল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে তুঙ্গে আলোচনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কী হবে? অতিথিরা কে কে আসবেন? কারা আসছেন না, কাতার কি পারবে ইকুয়েডরকে হারিয়ে অভিষেকের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করতে? ম্যাচের আগে কাতার কোচ ফেলিক্স স্যাঞ্চেসের চিন্তা অবশ্য অন্য কারণে বাড়ছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে যা প্রচার হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। প্রথম ম্যাচের আগে এটাই আমার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘ফুটবলারদের বলেছি, বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে একদম মাথা না ঘামিয়ে ফুটবলে মনোনিবেশ করতে। প্রমাণ করে দাও, কাতার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্য।’’
সমস্যায় জর্জরিত ইকুয়েডরও। এই মুহূর্তে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। হয়তো এই কারণেই প্রথম ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে খুব বেশি ইকুয়েডরের সমর্থক দেখা গেল না। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সকলেই কাতারে কর্মরত। হর্হে গঞ্জালেস বলছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ইকুয়েডরের যা পরিস্থিতি, তাতে বিশ্বকাপ দেখতে আসা সম্ভব নয়। ফুটবলাররাও কতটা চিন্তামুক্ত হয়ে খেলতে পারবেন জানি না।’’ ইকুয়েডরের কোচ গুস্তাভো আলফারো বললেন, ‘‘ফুটবলারদের বলেছি, মাঠে নেমে সেরাটা দিতে। প্রমাণ করে দাও, যাবতীয় অভিযোগই মিথ্যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy