অনূর্ধ্ব-১৭ স্তরের জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলার মৃত্তিকা মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন আগেই জাতীয় স্তরে অনূর্ধ্ব-১৭ দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলার মৃত্তিকা মল্লিক। আগামী দিনে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের নাম উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখছে মৃত্তিকা। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণের পথে সব থেকে বড় বাধা টাকা। আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠে মেয়ে কত দূর যেতে পারবে তা নিয়ে চিন্তিত মৃত্তিকার বাবা অরিন্দম মল্লিক। তাঁর আক্ষেপ, রাজ্য থেকে সরকারি বা বেসরকারি কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না তিনি।
চুঁচুড়ায় বাড়ি মৃত্তিকার। সে এখন দাবা শেখে দিব্যেন্দু বড়ুয়ার অ্যাকাডেমিতে। দাবা তার ধ্যানজ্ঞান হলেও তার বাবার চিন্তা অন্য। সামনেই নাগপুরে জাতীয় স্তরের দাবা প্রতিযোগিতা। সেখানে যোগ দেওয়া, থাকা খাওয়ার খরত জোগাড় করছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে মৃত্তিকা বললেন, ‘‘দাবায় খরচ অনেক বেশি। বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায় না। আলাদা করে প্রশিক্ষণ নিলে প্রতি ক্লাসের জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। গত বছর বিশ্ব স্তরে প্রতিযোগিতার আগে ২ মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করেছি। সামনেই নাগপুরে প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে গেলেই ১০ হাজার টাকা খরচ। তার পরে থাকা খাওয়ার খরচ আছে।’’ আক্ষেপ করেই অরিন্দম বললেন, ‘‘কোনও কোনও সময় মেয়েকে ঠিক মতো কোচিং দিতে পারছি না। কোনও সময় প্রতিযোগিতা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এই খেলা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নয়।’’
বাংলার দাবা গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছে। একের পর এক গ্র্যান্ড মাস্টার, জাতীয় স্তরে সাফল্য এলেও আর্থিক দিক থেকে রাজ্যের দাবা পিছিয়ে রয়েছে বলেই মনে করেন অরিন্দম। সেখানে অন্য অনেক রাজ্য বাংলাকে টেকা দিয়েছে বলে মত তাঁর। অরিন্দম বললেন, ‘‘২০১৯ সালে মৃত্তিকা অনূর্ধ্ব-১১ জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিল ত্রিপুরার আর্শিয়া দাস। মৃত্তিকাকে একটা গোলাপও দেওয়া হয়নি। অথচ আর্শিয়াকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওর কোচিংয়ের জন্য যা যা আর্থিক সাহায্য দরকার সব ত্রিপুরা সরকার করেছে।’’
দক্ষিণ ভারতেরও উদাহরণ টেনে এনেছেন অরিন্দম। তাঁর মতে, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের একটি মেয়ে যদি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরে তা হলে তাকে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। পরবর্তীতে তার কোচিংয়ের সব দায়িত্ব রাজ্য সরকারের থাকে। সেখানে এই রাজ্যে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। সব নিজে নিজে করতে হচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এটা করা খুব কঠিন বলে জানিয়েছেন তিনি। মুম্বইয়ের একটি সংস্থা এবং ওএনজিসি-র কাছে থেকে ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা পেয়েছিল মৃত্তিকা। কিন্তু তাতেও সামলানো যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ অরিন্দমের।
২০১৪ সালে বিশ্ব স্তরে প্রতিযোগিতায় গিয়ে তফাতটা আরও ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছেন অরিন্দম। তিনি বললেন, ‘‘বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এক জন দাবাড়ুর সঙ্গে গ্র্যান্ড মাস্টার থাকে। তাঁরা পরিকল্পনায় সাহায্য করেন। সেখানে মৃত্তিকা একা খেলতে গিয়েছিল। লড়াইটা কী ভাবে হবে? আট রাউন্ড পর্যন্ত মৃত্তিকা এক নম্বরে ছিল। কিন্তু পরের তিন রাউন্ডে আর পারল না। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ হল।’’
অরিন্দমের সব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন সারা বাংলা দাবা সংস্থার সভাপতি দিব্যেন্দু। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘শুধু ওঁর নয়, এই অভিযোগ অনেকের। দাবায় স্পনসর পাওয়া খুব কঠিন। আমরা এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছি।’’ তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন দিব্যেন্দু। তিনি আশাবাদী, পরিস্থিতি বদলাবে। দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘সারা বাংলা দাবা সংস্থার সভাপতি হিসাবে বলছি, স্পনসরের দিক থেকে আমরা তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের থেকে পিছিয়ে আছি। গত দু’বছর ধরে চেষ্টা করছি। বেঙ্গল অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছেন। আশা করছি আর্থিক সাহায্য পাব।’’
অন্য দিক থেকে মৃত্তিকা আবার দিব্যেন্দুরই ছাত্রী। তাঁর অ্যাকাডেমি কি আলাদা করে কোনও সাহায্য করবে? এ ক্ষেত্রেও আশার কথা শুনিয়েছেন দিব্যেন্দু। বললেন, ‘‘ও আমার ছাত্রী। আমাদের অ্যাকাডেমির ছাত্রছাত্রীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার জন্য আর্থিক সাহায্য করি। মৃত্তিকা তিন মাস হল এসেছে। এই পারফরম্যান্সের পরে ওকেও সাহায্য করব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy