Advertisement
E-Paper

‘অতীতকে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না’, গাওস্করের সুরেই আক্রমণাত্মক কারসন ঘাউড়ি

ভারতীয় ক্রিকেটে অতীতেও গৌরবের অনেক মুহূর্ত রয়েছে। আর সেটাই মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কারসন ঘাউড়ি। প্রাক্তন ক্রিকেটার এই ব্যাপারে পুরোপুরি একমত সুনীল গাওস্করের সঙ্গে।

ঘাউড়ির মতে ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে অস্বীকার করা ঠিক হবে না। ফাইল চিত্র।

ঘাউড়ির মতে ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে অস্বীকার করা ঠিক হবে না। ফাইল চিত্র।

সৌরাংশু দেবনাথ

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:১২
Share
Save

টেস্ট অভিষেক হয়েছিল এই ইডেনেই। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮১, বর্ণময় টেস্ট কেরিয়ারে খেলেছেন ৩৯ টেস্ট। সাক্ষী থেকেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক কীর্তির। খেলা ছাড়ার পরও জড়িয়ে রয়েছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। আর সেই কারণেই বিরাট কোহালির মন্তব্যের সঙ্গে একেবারেই একমত নন। বরং সুনীল গাওস্করের বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত কারসন ঘাউড়ি। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথায় সেই প্রসঙ্গেই আক্রমণাত্মক মেজাজে পাওয়া গেল তাঁকে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই ‘দাদাগিরি’ শুরু ভারতের। ইডেনে টেস্ট জিতে উঠে বিরাট কোহালির এই মন্তব্য শুনেছেন নিশ্চয়ই।

কারসন ঘাউড়ি— আরে বস্, ভারত টেস্ট ক্রিকেট খেলছে ১৯৩২ থেকে। এত দীর্ঘ ঐতিহ্য আমাদের। সেটা অস্বীকার করা যায়? বিরাট কোহালি বলেছে ২০০০ সাল থেকে আমরা জিতে চলছি। যা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। আগেও ভারতীয় দল প্রচুর মনে রাখার মতো টেস্ট জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জিতেছি, ইংল্যান্ডে জিতেছি। শুধু টেস্ট নয়, আমরা স্মরণীয় কিছু সিরিজও জিতেছি। গাওস্কর তো সেটাই বোঝাতে চেয়েছে যা সবকিছু ২০০০ সাল থেকে শুরু হয়নি।

এই বিতর্কে কি আপনার মতো প্রাক্তনরা কিছুটা আহত?

কারসন ঘাউড়ি— দেখুন ক্রিকেট নামের এই মহান খেলাটার প্রতি ভালবাসা আর শ্রদ্ধা থাকতেই হবে সবার। এটা ঠিক এই ভারতীয় দল দারুণ খেলছে। জিতছে। কিন্তু এটা ভাবলে মস্ত ভুল হবে যে শুধু এই সময়েই ক্রিকেটটা খেলা হচ্ছে। আগেও ক্রিকেটটা খেলা হয়েছে, সেটা ভুললে চলবে না।

আরও পড়ুন: কুম্বলের সঙ্গে ছবি পোস্ট! সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের ট্রোলড হলেন শাস্ত্রী​

আপনার সময়েই যেমন ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই বিখ্যাত টেস্ট জয়।

কারসন ঘাউড়ি— হ্যাঁ, সেটা ভারতীয় ক্রিকেটের গর্বের একটা মুহূর্ত। তবে তার আগেও তো এমন সোনার সময় এসেছে। আমরা ১৯৭৭ সালেও অস্ট্রেলিয়ায় এসে টেস্ট জিতেছিলাম। সেই সিরিজে প্রথম দুই টেস্টে হেরে যাওয়ার পরও আমরা ২-২ করেছিলাম। কিন্তু অ্যাডিলেডে নির্ণায়ক টেস্টে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। এর আগে আমরা ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ জিতেছিলাম। সেই বছরেই ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিতেছিলাম।

১৯৮১ সালের মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের মুহূর্ত।

১৯৬৮ সালে নিউজিল্যান্ডেও তো টেস্ট সিরিজ জিতেছিল পতৌদির দল।

কারসন ঘাউড়ি— হ্যাঁ, সেটার গুরুত্বও যথেষ্ট। যেটা বলতে চাইছি যে ভারতীয় দল অতীতে অনেক টেস্টেই দুর্দান্ত খেলেছে। আবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, এমন টেস্টও রয়েছে। আবার বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এই ভারতীয় দল যে দারুণ খেলছে, তা অস্বীকারেরও জায়গা নেই। এঁরা র‌্যাঙ্কিংয়ের দিক দিয়ে, ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানার দিক থেকে দুর্দান্ত খেলছে। এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে অসাধারণ কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছে। আসলে গত কুড়ি বছর ধরেই গ্রেট ক্রিকেটারদের দেখা যাচ্ছে টেস্ট দলে। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলেরা সবাই গ্রেট ক্রিকেটার। এরা সবাই মিলে দুরন্ত একটা দল হয়ে উঠেছিল। এদের ক্লাসটাই ছিল অনেক উপরের।

ইডেনে গোলাপি বলে ঐতিহাসিক টেস্টজয়ী দল সম্পর্কে কী বলবেন?

কারসন ঘাউড়ি— এখনও দলে আকর্ষণীয় ক্রিকেটারদের ভিড় রয়েছে। বিশ্বমানের ক্রিকেটাররা রয়েছে দলে। সঙ্গে বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক।

প্রশ্ন হচ্ছে, আগেকার ভারতীয় দলও কি এতটা আগ্রাসী মানসিকতার ছিল?

কারসন ঘাউড়ি— অবশ্যই। তা না হলে তো আমরা বিদেশ সফরে গিয়ে টেস্ট জিততে পারতাম না। যখনই ভারতীয় দল খেলেছে অতীতে, সেই আগ্রাসী মেজাজটা ফুটে উঠেছে। তা সে দেশের মাঠেই হোক বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায়। দেখুন, রান করতে গেলে একটু ঝুঁকি নিতেই হয়। না হলে রান আসবে কোথা থেকে?

আগে তো ক্রিকেট খেলাও কঠিন ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যেমন চারজন পেসারকে সামলাতে হতো মাথায় হেলমেট ছাড়াই।

কারসন ঘাউড়ি— একদমই। এখন ব্যাটসম্যানের সুরক্ষার, নিরাপত্তার জন্য কত ব্যবস্থা! হেলমেট আসার আগেও আমাদের দলে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরা ছিলেন। গাওস্কর, মোহিন্দর অমরনাথ, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, দিলীপ ভেঙ্গসরকররা ছিল। যাঁরা কি না হেলমেট ছাড়াই রান করার ক্ষমতা ধরত।

গোলাপি বলের টেস্টের জন্য স্ট্র্যাটেজিতে বদল ঘটাতে হবে বলে মনে করছেন ঘাউড়ি।

আপনার মতে টেস্টে ভারতের সবচেয়ে সেরা জয় কোনটা?

কারসন ঘাউড়ি— ২০০১ সালের ইডেনে স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়াকে হারানোই এক নম্বরে থাকবে। লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের পার্টনারশিপই ম্যাচের চেহারা বদলে দিয়েছিল। ফলো অন করেও ও ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, কল্পনাও করা যায়নি।

এই জয় কিন্তু সৌরভের নেতৃত্বে এসেছিল। আর আপনার ক্রিকেটজীবনে সেরা টেস্ট জয় নিশ্চয়ই মেলবোর্নে।

কারসন ঘাড়ড়ি— অবশ্যই। সেই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ওরা মাত্র ১৪২ রান তাড়া করছিল জেতার জন্য। সবাই ভেবেছিল অনায়াসে জিতে যাবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তা হয়নি। ওদের আউট করে দিই ৮৩ রানে। সেটা ছিল ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। আমাদের সবচেয়ে স্মরণীয় টেস্ট জয়ও সেটা।

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে আপনি তো গ্রেগ চ্যাপেলকে পায়ের পিছন দিক দিয়ে বোল্ড করেছিলেন।

কারসন ঘাউড়ি— হ্যাঁ। সেই ইনিংসে দুটো উইকেট পেয়েছিলাম। আর দুটোই এসেছিল পর পর বলে। প্রথমে ফিরিয়েছিলান ওপেনার জন ডাইসনকে। কিরমানি নিয়েছিল ক্যাচ। পরের বলেই বোল্ড করেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন গ্রেগকে। সেটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। চতুর্থ দিনের শেষে ওদের চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে দুটোই আমার ছিল। আর পরের দিন কপিল দেব একাই শেষ করে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। পাঁচ উইকেট নিয়েছিল ও। তবে এটাও ঠিক, সেই টেস্টে মেলবোর্নের পিচ ছিল আনপ্লেয়েবল। উইকেটে প্রচুর ফাটল ছিল।

আরও পড়ুন: 'আগে ভারতকে দেখলেই বোঝা যেত চাপে রয়েছে, সৌরভ বদলে দিয়েছে ছবিটা'

সদ্য ইডেনে হয়ে গেল গোলাপি বলের টেস্ট। ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। তা দিনরাতের টেস্টই কি পাঁচ দিনের ফরম্যাটের ভবিষ্যৎ?

কারসন ঘাউড়ি— এটা দারুণ পরীক্ষা। তবে ইডেনে যা দেখলাম, তাতে গোলাপি বলে কিন্তু লাল বলের তুলনায় সুইং কম হচ্ছে। বলের ‘শাইন’ ৩০-৪০ ওভার পর্যন্ত বজায় রাখাও একটা সমস্যা। এতে ১৫-২০ ওভারের পর ‘শাইন’ রাখা যাচ্ছে না। লাল বলে ৪০-৫০ এমনকী ৬০ ওভার পর্যন্ত তা রাখা যায়। তবে তার জন্য ফিল্ডারদের সচেতন থাকতে হয়। দিনরাতের টেস্ট অবশ্য মাঠে দর্শক টেনে আনার জন্য দারুণ উদ্যোগ। কলকাতায় দেখলাম ক্রিকেটপ্রেমীরা মাঠ ভরিয়ে দিয়েছেন। আমার মনে হয়, টেস্টের অন্য ভেন্যুগুলোতেও এটা হওয়া দরকার। কারণ, দিনের বেলায় টেস্টে এখন মাঠে লোক প্রায় হয়ই না! তাই গোলাপি বলে টেস্ট ভারতে পাঁচদিনের ফরম্যাটের মুখ বদলে দিতে পারে।

সচিনের মতে, গোলাপি বলের টেস্টে দ্বিতীয় সেশনকে সকালের সেশন ভেবে খেলা উচিত। তার মানে তো ব্যাটসম্যানের পুরো পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিই পাল্টাতে হবে।

কারসন ঘাউড়ি— লাল বলের চেয়ে তো গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট আলাদা। আর প্রত্যেক আলাদা কিছুর জন্য প্রস্তুতিও নিতে হয় আলাদা ভাবে। বদলে যায় স্ট্র্যাটেজি, গেমপ্ল্যান। আর সচিন যখন এটা বলেছে, তখন সে ভাবেই তৈরি হতে হবে। গোধূলির সময়টাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। তখন কিছু তো নিশ্চয়ই হয়।

গোলাপি বলে রিভার্স করা যায় না। জোরেবোলারদেরও প্রস্ততি নিতে হবে তার জন্য।

কারসন ঘাউড়ি— পেসারদের ক্ষেত্রে একটা উদ্বেগের। আসলে শীতে শিশির একটা বড় সমস্যা। শিশির বড় ফ্যাক্টর ভারতে। তবে আমাদের গোলাপি বলে টেস্ট করে যেতে হবে। তবেই ধারণা পরিষ্কার হবে।

স্পিনারদের ক্ষেত্রেও তো গোলাপি বল চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে। ক্রমশ গুরুত্ব কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

কারসন ঘাউড়ি— এটা কিন্তু একটা ছোট্ট অসুবিধা। রাতের বেলা, শিশিরের কারণে ফিঙ্গার স্পিনারই হোক বা রিস্ট স্পিনার, বল ধরতেই সমস্যা হবে। ভারতের পেসাররাই তো বাংলাদেশের কুড়ি উইকেট নিয়েছে। সুযোগই পায়নি স্পিনাররা। পেসাররাই সব শেষ করে দিয়েছে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও দল যদি পাঁচশো রান তোলে, তখন কিন্তু স্পিনারদের বল করতে হবে। আর রাতের বেলা বল ধরাই কিন্তু মুশকিলের হয়ে উঠবে।

Cricket Cricketer Sunil Gavaskar Karsan Ghavri India Cricket Pink Ball Test Eden Gardens

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।