Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ইস্টবেঙ্গল আমাকে পুনর্জন্ম দিল, বলছেন অভিভূত মজিদ

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রায় তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মঞ্চ থেকে নেমে বিশ্রাম নিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ব্যতিক্রম ময়দানের বাদশা।

জুটি: সেই স্মরণীয় মুহূর্ত। লাল-হলুদ জার্সিতে জামশিদ-মজিদ। নিজস্ব চিত্র

জুটি: সেই স্মরণীয় মুহূর্ত। লাল-হলুদ জার্সিতে জামশিদ-মজিদ। নিজস্ব চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১৯
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নক্ষত্র-সমাবেশে তিনিই ছিলেন ধ্রুবতারা। এক সময়ের সতীর্থ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে এই প্রজন্মের অর্ণব মণ্ডল, হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা, মেহতাব হোসেন, রহিম নবি— সকলের মুখে শুধুই মজিদ বাসকর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রায় তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মঞ্চ থেকে নেমে বিশ্রাম নিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ব্যতিক্রম ময়দানের বাদশা। বয়স ষাট পেরিয়ে গেলেও তরুণদের মতো চনমনে। রবিবার ভোররাতে কলকাতায় পা দেওয়ার পর থেকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ কার্যত পাননি। কলকাতা কতটা বদলে গিয়েছে, দেখতে বেরিয়েছিলেন প্রিয় বন্ধু জামশিদ নাসিরির গাড়িতে করে। ইস্টবেঙ্গলের ক্লাবতাঁবুতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। এ দিন সকালে মহমেডান স্পোর্টিংয়ে সংবর্ধনা নিয়ে দুপুরে লাল-হলুদ মাঠে প্রীতি ম্যাচেও হাজির ছিলেন। ছিলেন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে প্রয়াত সচিব দীপক দাসের জন্মদিন উপলক্ষে রক্তদান শিবিরে। সন্ধ্যায় যোগ দিলেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মূল অনুষ্ঠানে।

এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও চনমনে থাকার রহস্য কী? অনুষ্ঠান শেষে আনন্দবাজারের সঙ্গে মজিদ কথা শুরু করলেন খাঁটি বাংলায়! বললেন, ‘‘তোমরা সবাই কেমন আছ? কেমন লাগল ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠান?’’ আপনার অভিজ্ঞতা বলুন। একটু চুপ করে থেকে বাদশা বলতে শুরু করলেন। আবেগে গলা কেঁপে উঠছিল। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, কেউ যেন টাইম মেশিনে করে আমাকে আশির দশকের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে। অতীতের সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। কলকাতা অনেক বদলে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু লাল-হলুদ রঙের মতো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উন্মাদনা, আবেগ একই রকম থেকে গিয়েছে।’’ মজিদ যোগ করলেন, ‘‘কলকাতা ময়দানে খেলার প্রতিটি মুহূর্ত মনে পড়ে যাচ্ছিল। ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময় সমর্থকেরা যে-ভাবে আমার নামে জয়ধ্বনি দিতেন, মঙ্গলবারেও তার পুনরাবৃত্তি দেখলাম। অথচ এই প্রজন্মের অধিকাংশই আমার খেলা দেখেননি। পূর্বসূরিদের কাছ থেকেই শুনেছেন আমার কথা। এক জন ফুটবলারের জীবনে এর চেয়ে সেরা প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। এই আবহে ক্লান্ত হওয়া তো দূরের কথা, বয়স কয়েক বছর কমে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলই পুনর্জন্ম দিল।’’

কলকাতায় আসার আগে যে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন, গোপন করলেন না মজিদ। বললেন, ‘‘এত দিন পরে কলকাতায় ফিরছি। আশঙ্কা ছিল, কেউ হয়তো চিনতে পারবে না। কিন্তু রবিবার কলকাতায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই ভুলটা ভেঙে গিয়েছিল। ভোররাতেও বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানাতে হাজির কয়েক হাজার লাল-হলুদ সমর্থক।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘সতীের্থরাও কেউ আমাকে ভুলে যায়নি। অধিকাংশের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। ফোনে কথা বলেছি, আমার কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।’’

তিন দশক পরে কলকাতায় ফিরছেন অথচ বাংলার খাবার খাবেন না, তা হয় নাকি! ভাত, ডাল, আলু-পটলের তরকারি ও মাছভাজা খেয়েছেন। ইচ্ছে রয়েছে সিরাজের বিরিয়ানি খাওয়ারও।

ক্লাব সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত ও সচিব কল্যাণ মজুমদার মানপত্র এবং শতবর্ষের স্মারক হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা তুলে দেন মজিদের হাতে। এ ছাড়াও দেওয়া হয় লাল-হলুদ উত্তরীয় ও ফ্রেমে বাঁধানো তাঁর ছবি। সেই সময় মজিদ...মজিদ...জয়ধ্বনিতে গমগম করে উঠল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। আজ, বুধবার সকালে আত্মীয়দের নিয়ে গোয়া যাচ্ছেন মজিদ। ইরানে ফিরে যাওয়ার আগে কি আবার কলকাতায় আসবেন? মৃদু হেসে মজিদ বললেন, ‘‘দেখা যাক, কী হয়।’’

ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেঙ্গালুরু থেকে খাবরা, ইলিয়াস পাসা, সার্ভানন এসেছিলেন। তাঁরা বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলে সই করার পর থেকেই সবার মুখে মজিদের কথা শুনতাম। তখন থেকেই ওঁর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল। এত দিনে সেই স্বপ্ন পূরণ হল।’’ কী বললেন মজিদ? খাবরা বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ছাড়লাম কেন জিজ্ঞেস করলেন প্রথমেই। তার পরেই জানতে চাইলেন এখন কোন ক্লাবে খেলি। ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা জানালেন।’’

অর্ণব, নবি, মেহতাবেরা বড় হয়েছেন বাদশার কাহিনি শুনেই। বললেন, ‘‘মজিদের পায়ের জাদু দেখার আক্ষেপ কিছুটা মিটল আলাপ করে। আজ আমাদের জীবনেরও স্মরণীয় দিন।’’

ফুটবল জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার শহরেই আবার নবজন্ম বাদশার!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy