উল্লাস: মরসুমের প্রথম ম্যাচে লাল-হলুদ মেজাজ। শনিবার ঘরের মাঠে উৎসব ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অন্ধকার থেকে আলোয় প্রত্যাবর্তন!
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ন’মাস আগে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে পরিবর্ত হিসেবে নেমে তাঁর একটা ভুল ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জয়ের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছিল। শনিবার ডুরান্ড কাপে মরসুমের প্রথম ম্যাচে আর্মি রেড দলের বিরুদ্ধে ৭৮ মিনিটে সেই বিদ্যাসাগর সিংহকে যখন নামাচ্ছিলেন কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া, লাল-হলুদ গ্যালারিতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল। ইস্টবেঙ্গলের তরুণ স্ট্রাইকারও নিশ্চয়ই শুনেছিলেন সমর্থকদের বিদ্রুপ। না-হলে শুরু থেকেই এমন মরিয়া হয়ে উঠবেন কেন? তাঁকে আটকাতে গিয়েই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন সেনা দলের গোলরক্ষক মহম্মদ শানোস। তার পরেই অসাধারণ ফ্রি-কিকে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিলেন খাইমে সান্তোস কোলাদো। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সামাদ আলি মল্লিকের পাস থেকে নিজে গোল করলেন বিদ্যাসাগর।
শনিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে শুধু গোল নয়, শাপমুক্তিও ঘটালেন মণিপুরের বিদ্যাসাগর। ন’মাস আগে যুবভারতীতে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে হারের যন্ত্রণা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল লাল-হলুদ সমর্থকদের কটাক্ষ। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বছর কুড়ির প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকার। এ দিন সেই সমর্থকেরাই ম্যাচের পরে মাঠে নেমে কাঁধে তুলে নিলেন নতুন তারকাকে। দলের সতীর্থেরা তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ড্রেসিংরুমে।
বছর তিনেক আগে মণিপুর থেকে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির কোচ রঞ্জন চৌধুরী। ইম্ফলের সেই ট্রায়ালে প্রায় হাজার তিনেক ছেলের মধ্যে বিদ্যাসাগরের দুরন্ত গতি আকর্ষণ করেছিল লাল-হলুদ কোচকে। শনিবার তাঁর গতিই সেনা দলের সমস্ত প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়। তৃপ্ত বিদ্যাসাগরের আবিষ্কারক বলছিলেন, ‘‘টর্পেডোর মতো ভয়ঙ্কর গতি বিদ্যাসাগরের। আমি ওকে এই কারণেই উইঙ্গার হিসেবে খেলাতাম। আজ ও হ্যাটট্রিকও করতে পারত। ঠিক মতো গড়ে তুলতে পারলে ভারতীয় ফুটবলের সম্পদ হয়ে উঠবে বিদ্যাসাগর।’’ লাল-হলুদের নতুন তারকা অবশ্য ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেও বদলে যাওয়া জীবনের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেননি। সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নের সামনে গুটিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলের ম্যানেজার দেবরাজ চৌধুরীর মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত জানালেন, মরসুমের প্রথম ম্যাচে গোল করে দারুণ আনন্দ হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারায় খুশি ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরাও। যদিও প্রথমার্ধে তাঁদের রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল প্রিয় দলের খেলা দেখে। সেনা দলের চক্রব্যূহ ভেঙে বেরোতেই পারছিলেন না লাররিনডিকা রালতেরা। স্তব্ধ তিকিতাকা। ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলা অভিজিৎ সরকার তা-ও বেশ কয়েক বার বিপক্ষের বক্সের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্ট্রাইকারের অভাবে গোল অধরাই ছিল। এই পরিস্থিতিতে কোলাদোর দুর্দান্ত ফ্রি-কিক ধাক্কা খায় পোস্টে। সমর্থকদের মনে প্রশ্ন, তা-হলে কি শতবর্ষে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খাবে দল?
দ্বিতীয়ার্ধে কাশিম আইদারা ও বিদ্যাসাগর নামার পরেই ছবিটা বদলে যায়। সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, ‘‘আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। প্রথমার্ধে কয়েকটা সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু ভাল খেলেছে ছেলেরা।’’ তবে আলেসান্দ্রোর পাখির চোখ যে আই লিগ, আরও এক বার স্পষ্ট করে দিলেন। বললেন, ‘‘আই লিগের প্রস্তুতি হিসেবেই খেলছি এই টুর্নামেন্টে।’’ এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘সব প্রতিযোগিতাতেই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’’
ইস্টবেঙ্গল: লালথুয়ামমাওয়াইয়া রালতে, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, বোরখা গোমেস পেরেস, মনোজ মহম্মদ, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, রোহুলপুইয়া (কাশিম আইদারা), লালরিনডিকা রালতে, বইথাং হাওকিপ (বিদ্যাসাগর সিংহ), অভিজিৎ সরকার (পিন্টু মাহাতো) ও খাইমে সান্তোস কোলাদো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy