চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে ভারত। রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে তারা। অপরাজিত থাকলেও দলে এখনও কিছু জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন। ফাইনালের আগে তিনটি বিষয় চিন্তায় রাখছে রোহিত শর্মা, গৌতম গম্ভীরদের।
শুভমন গিল
প্রথম দু’ম্যাচে ভাল খেলেছিলেন শুভমন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেছিলেন ১০১ রান। দেখে মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ড সিরিজ়ের ফর্ম সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ৪৬ রান করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু শেষ দু’টি ম্যাচে তাঁর ব্যাটে রান নেই। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ রান করে আউট হয়েছিলেন। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেছেন ৮ রান।
শুভমনের শেষ দুই ম্যাচের ফর্ম চিন্তায় রেখেছে ভারতকে। দুবাইয়ের উইকেট কিছুটা মন্থর। সেই উইকেটে বলের গতি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। নিউ জ়িল্যান্ডের ম্যাচ হেনরির গতি বেশি ছিল। বুঝতে না পেরে ব্যাট ঠিক সময়ে নামাতে পারেননি। আবার অস্ট্রেলিয়ার বেন ডোয়ারশুইসের বলের গতি কম ছিল। ফলে আগেই ব্যাট চালান শুভমন। অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হতে হয় তাঁকে।
ফাইনাল জিততে হলে ভারতের ওপেনিং জুটিকে রান করতে হবে। রোহিত শর্মা নিজের স্বাভাবিক ছন্দেই খেলবেন। তিনি আক্রমণের পথে হাঁটবেন। সেই সময় তাঁকে সঙ্গ দিতে হবে শুভমনকে। কিন্তু তিনি শুরুতে আউট হলে বিরাট কোহলির উপর চাপ বাড়বে। ফাইনালের আগে শুভমনের ফর্ম চিম্তার কারণ।
লোকেশ রাহুল
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ধীরে ধীরে ব্যাট হাতে ভরসা দিলেও উইকেটের পিছনে এখনও নড়বড়ে দেখাচ্ছে রাহুলকে। বিশেষজ্ঞ উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থকে বসিয়ে রেখে রাহুলকে খেলাচ্ছে ভারতীয় দল। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতি ম্যাচেই সুযোগ ফস্কাচ্ছেন। ভারতীয় দলে চার স্পিনার। তাঁদের বল ব্যাটারদের ব্যাটের কানায় লেগে পিছনে গেলে তা তালুবন্দি করতে হবে রাহুলকে। অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। স্টাম্পিংয়ের সুযোগও ফস্কেছেন রাহুল।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ভুল করেছেন রাহুল। নিউ জ়িল্যান্ড শক্তিশালী দল। তাদের বিরুদ্ধে সুযোগ ফস্কালে সমস্যায় পড়বে ভারত। তার উপর ম্যাচের হার-জিতও নির্ভর করতে পারে। তাই দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে রাহুলকে উইকেটের পিছনে ভরসা জোগাতে হবে।
আরও পড়ুন:
কুলদীপ যাদব
ভারতীয় দলের একমাত্র রিস্ট স্পিনার কুলদীপ। দুবাইয়ের উইকেট স্পিন সহায়ক। সেখানে কুলদীপের বল খেলতে ব্যাটারদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা। তা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুলদীপ উইকেট পাননি। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবশ্য কুলদীপ ৩ উইকেট নিয়েছেন। ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়েছেন তিনি। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ উইকেট নিলেও ৯.৩ ওভারে ৫৬ রান দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে একটিও উইকেট পাননি ভারতীয় স্পিনার।
অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চার ম্যাচে মোট ৩৭.৩ ওভার বল করেছেন কুলদীপ। নিয়েছেন ৫টি উইকেট। রান দিয়েছেন ১৮৩। এটাই ভাবাচ্ছে ভারতকে। যে উইকেটে ভারতের বাকি স্পিনারের রান আটকাচ্ছেন সেখানে কুলদীপ বেশি রান দিচ্ছেন। তাঁকে নিশানা করছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারেরা। তার একটা কারণ কুলদীপের বলের গতি। বরুণ চক্রবর্তী, অক্ষর পটেল ও রবীন্দ্র জাডেজার তুলনায় অনেক কম গতিতে বল করেন কুলদীপ। এই উইকেটে বলের গতি বেশি থাকলে স্পিনারদের খেলা আরও কঠিন। কুলদীপের বলের গতি কম হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাটারেরা সহজে রান করছেন। বাকিদের তুলনায় কুলদীপ অনেক বেশি ফুল লেংথে বল করছেন। ফলে বড় শট খেলতেও সুবিধা হচ্ছে ব্যাটারদের।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ফাইনালেও কুলদীপ খেলবেন। কিন্তু তাঁকে ভাবতে হবে তাঁর বলের গতি নিয়ে। আগের থেকে গতি বাড়লেও তাতে যখন ব্যাটারদের সমস্যা হচ্ছে না, তখন অন্য কিছু করতে হবে তাঁকে। নতুন অস্ত্র কাজে লাগাতে হবে। অন্য ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। কুলদীপ ভাল বল করলে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।