পৃথ্বী শ। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন আগেই। এ বার মুম্বই দল থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে পৃথ্বী শ’কে। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক থামার নাম নেই। বার বার তাঁর অবাধ্যতার খবর বাইরে আসছে। এই পরিস্থিতিতে এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে, এটাই মুম্বইয়ে শেষ বছর পৃথ্বীর। পরের বার আর দেখা যাবে না তাঁকে।
বিজয় হজারে প্রতিযোগিতায় মুম্বই দলে জায়গা পাননি পৃথ্বী। নেপথ্য কারণ হিসাবে তাঁর ফিটনেস ও শৃঙ্খলার কথা সামনে এসেছে। পৃথ্বীকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলেছেন মুম্বই ক্রিকেটের এক কর্তা। এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে মুম্বই তথা ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট যতীন পরাঞ্জপেকে। তিনি বলেন, “মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কর্তা এক ক্রিকেটারকে নিয়ে প্রকাশ্যে এই সব বলেছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পৃথ্বীর পাশে আর দাঁড়াতে চাইছে না মুম্বই ক্রিকেট। এটাই মুম্বইয়ে ওর শেষ বছর।” অর্থাৎ, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে পরের বছর আর পৃথ্বীকে দলেই রাখতে না তারা। পৃথ্বী যদি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চান তা হলে অন্য কোনও রাজ্যের হয়ে খেলতে হবে তাঁকে।
পৃথ্বীকে বিজয় হজারে থেকে বাদ দেওয়ার পর মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তারই জবাবে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একের পর বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেছেন এক এমসিএ কর্তা। জানিয়েছেন, সারা রাত বাইরে কাটিয়ে ভোর ৬টায় হোটেলে ঢুকতেন পৃথ্বী। প্রায়ই অনুশীলনে আসতেন না। তাঁকে মাঠে ‘লুকিয়ে’ রাখতে হত। ওই কর্তা বলেন, “সৈয়দ মুস্তাক আলিতে ১০ জন ফিল্ডারে খেলতে হত আমাদের। পৃথ্বীকে জোর করে লুকিয়ে রাখতে হত। বল ওর পাশ দিয়ে গেলেও ধরতে পারত না। ব্যাটিংয়ের সময়েও দেখতাম কী ভাবে বলের কাছে পৌঁছতে ওর সমস্যা হচ্ছে। ওর ফিটনেস, শৃঙ্খলা এবং হাবভাব খুব খারাপ। কোনও ক্রিকেটারের জন্য আলাদা কোনও নিয়ম হতে পারে না। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারেরাও ওর মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছিল।”
বিজয় হজারের দলে জায়গা না পেয়ে সমাজমাধ্যমে পৃথ্বী লেখেন, ‘‘হে ঈশ্বর, আমায় আর কী দেখতে হবে! ৬৫টি ইনিংসে আমার রান ৩৩৯৯। গড় ৫৫.৭। স্ট্রাইক রেট ১২৬। তা-ও আমি যথেষ্ট ভাল নই? তবু আমি আপনার উপর বিশ্বাস রাখব। আশা করি, অন্যেরাও আমাকে বিশ্বাস করেন। আমি নিশ্চিত ভাবে ফিরে আসব।’’ তবে এমসিএ কর্তা বলেন, “এ ধরনের পোস্টে নির্বাচকদের কারও কিছু যাবে-আসবে না।” পরাঞ্জপেও অনেকটা সেই সুরেই কথা বলেছেন।
দেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ব্যাটার হিসাবে উঠে এসেছিলেন পৃথ্বী। একটা সময় পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে খেলেছেন বিভিন্ন স্তরে। ভারতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। মাঠে এবং মাঠের বাইরে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন। বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বাদ পড়েছিলেন মুম্বইয়ের রঞ্জি দল থেকেও। তাঁকে নিয়ে বিরক্তি গোপন করেননি মুম্বইয়ের টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকেরা। ফর্মে না-থাকা, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ছাড়াও পৃথ্বীর মেদবহুল শরীরের কথা বলেছিলেন তাঁরা। পরে আইপিএলের নিলামেও দল পাননি পৃথ্বী। দিল্লি ক্যাপিটালসের অন্যতম কর্ণধার পার্থ জিন্দলও ওপেনিং ব্যাটারকে নিয়ে হতাশার কথা বলেছিলেন। সৈয়দ মুস্তাক আলি জিতে মুখ খুলেছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারও।
মধ্যপ্রদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বই। ধারাবাহিক ভাবে সুযোগ পেলেও ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দিতে পারেননি পৃথ্বী। ফাইনালেও করেছিলেন ১০ রান। তার পরই পৃথ্বীকে নিয়ে মুখ খুলেছিলেন শ্রেয়স। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চা তো নয় যে আগলে আগলে রাখতে হবে। আমাদের পক্ষে সম্ভবও না। এই স্তরে যারা খেলে, তারা সবাই পেশাদার ক্রিকেটার। সবাই জানে কী করা উচিত আর কী উচিত নয়। পৃথ্বীর বিশৃঙ্খলা নতুন কিছু নয়। আগেও অনেক বার করেছে। ওর উচিত নিজের খেলায় মন দেওয়া। বসে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে ওকে। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে। কারও পক্ষে জোর করে ওকে দিয়ে কিছু করিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ সেই সুরে সুর মিলিয়েই এমসিএ কর্তা বলেন, “একটা জিনিস বলতে পারি। পৃথ্বীর শত্রু আর কেউ নয়, ও নিজেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy