দুবাইয়ের মাঠ মানে সকালে মন্থর পিচ, রাতে শিশির, সতেজ ঘাস এবং ব্যাটারদের স্বর্গ। সেখানেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সব ম্যাচ খেলবে ভারত। যেখানে খেলার জন্য ১৫ জনের দলে পাঁচ জন স্পিনারকে নিয়ে যাচ্ছেন গৌতম গম্ভীরেরা। এত জন স্পিনারের আদৌ প্রয়োজন হবে কি দুবাইয়ে?
১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ভারতের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। দুবাইয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সেই ম্যাচ খেলবেন রোহিত শর্মারা। পরের দু’টি ম্যাচ পাকিস্তান (২৩ ফেব্রুয়ারি) এবং নিউ জ়িল্যান্ডের (২ মার্চ) বিরুদ্ধে। ভারতীয় দলে স্পিনার হিসাবে রয়েছেন কুলদীপ যাদব এবং বরুণ চক্রবর্তী। এ ছাড়াও তিন স্পিনার-অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল এবং ওয়াশিংটন সুন্দরকে দলে রেখেছে ভারত। চোটের কারণে জসপ্রীত বুমরাহ ছিটকে যাওয়ার পর সেই জায়গায় বরুণকে দলে নেয় ভারত। ফলে আরও এক জন স্পিনার বেড়ে যায়। তিন জন পেসার মহম্মদ শামি, হর্ষিত রানা এবং অর্শদীপ সিংহ দুবাই গিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে পাঁচ জন স্পিনারকে দুবাই নিয়ে যাওয়ায়।
দুবাইয়ের পিচ কেমন?
দুবাইয়ের মাঠের আকৃতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বাকি মাঠগুলির চেয়ে কিছুটা আলাদা। স্টেডিয়ামের ছাদ অনেকটা এগোনো। ফলে গোল মাঠটির উপরে খুব বেশি ফাঁকা জায়গা নেই। মাঠটি বদ্ধ ধরনের। এক সময় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কোচ ছিলেন রবিন সিংহ। তিনি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “মাঠটা বদ্ধ। দুবাইয়ে তাই কোন পিচে খেলা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটার উপর নির্ভর করে দলের প্রথম একাদশ। দুবাইয়ে মাঠের মাঝে একটি পিচ আছে। বাকি দু’টি পিচ কিছুটা ধার ঘেঁষে। দুপুর ৩টের পরে সে ভাবে আর রোদ থাকে না মাঠে। তাই বাঁদিকে পিচটা মন্থর। কারণ ওই পিচে খুব বেশি সময় রোদ লাগে না। মাঠ এমন ভাবে তৈরি যে মাঠের কোথাও খুব বেশি সময় রোদ থাকে না। তবে মাঠে যথেষ্ট গরম হয়। সেই সঙ্গে আর্দ্রতাও বেশি। যে কারণে শিশির পরে মাঠে।” ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার দিলীপ বেঙ্গসরকার বলেন, “দুবাইয়ে বল খুব ভাল ব্যাটে আসে। পেসারেরা দারুণ সাহায্য পায়। পাকিস্তান যে কারণে দলে স্পিনারের চেয়ে পেসার নিয়েছে। যদিও ওদের খুব বেশি হলে দুটো ম্যাচ দুবাইয়ে খেলতে হবে।”
দুবাইয়ের শিশির
দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ হেমাঙ্গ বাদানি। তিনি দুবাই ক্যাপিটালসেরও কোচ ছিলেন। দুবাই ছিল তাঁর দলের ঘরের মাঠ। ফলে তিনি খুব ভাল ভাবেই জানেন সেই মাঠের চরিত্র। বাদানি মনে করেন শিশির পড়লেও তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না ম্যাচে। তিনি বলেন, “দুবাই ক্যাপিটালসে আমরা প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলাম প্রথম একাদশে চার জন পেসার এবং দু’জন স্পিনার নিয়ে। কিন্তু শেষের দিকে আমরা এক জন বাড়তি স্পিনার খেলাতাম। কারণ পিচ মন্থর হতে শুরু করল। এই সময় শিশির পড়লেও তার পরিমাণ কম। স্পিনারদের তাই সাহায্য পেতে অসুবিধা হবে না।” মাঠে শিশির থাকলে দু’জন রিস্ট স্পিনার খেলানো মুশকিল হবে ভারতের পক্ষে। তাঁদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হবে।
দুবাইয়ে এক দিনের ক্রিকেট
ফেব্রুয়ারি মাসে এর আগে দুবাইয়ে সাতটি এক দিনের ম্যাচ হয়েছে। তার মধ্যে দু’টি ম্যাচে টেস্ট খেলিয়ে দেশ পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড খেলেছিল। সেই দু’টি ম্যাচেই রান তাড়া করতে নামা দল জিতেছিল। সেই দু’টি ম্যাচই হয়েছিল ২০১২ সালে। ফলে তখনকার সময়ের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনা করা কিছুটা কঠিন। মার্চ মাসে টেস্ট খেলিয়ে দেশের মধ্যে হওয়া এক দিনের ম্যাচের দু’টিতেই প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছিল। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৮টি ম্যাচ হয়েছে দুবাইয়ের মাঠে। তার মধ্যে ২২টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে।
আগে বল করলে সুবিধা
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচগুলি শুরু হবে দুপুর ২:৩০ (ভারতীয় সময়) থেকে। দুবাইয়ের সময় অনুযায়ী শুরু হবে দুপুর ১টা থেকে। সেই সময় আবহাওয়া শুকনো থাকে। ফলে টস জিতে দুবাইয়ে আগে বল করলে স্পিনারেরা বাড়তি সুবিধা পাবেন। আইসিসি প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে দুবাইয়ের মাঠের কিছু পিচ সে দেশের টি-টোয়েন্টি লিগের সময় ব্যবহার করা হয়নি। ফলে অব্যবহৃত পিচেই খেলার সুযোগ পেতে পারে ভারত। রবিন বলেন, “ওরা কিছু পিচ ব্যবহার করেনি টি-টোয়েন্টি লিগে। ফলে পিচে ঘাস থাকবে। ব্যাট করার জন্য যথেষ্ট ভাল উইকেট পাওয়া যাবে। তবে দুবাইয়ে পরে ব্যাট করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। দুপুরে পিচে বেশি মন্থর থাকে।” ফলে টস জিতলে রোহিত হয়তো বল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর ভারত সাদা বলের ক্রিকেটে রান তাড়া করে জিততেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
স্পিনারের বৈচিত্র
দুপুরের দিকে পিচ মন্থর থাকবে বলে স্পিনারেরা বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন রবিন। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “সূর্যের আলো থাকলে স্পিনারেরা পিচ থেকে বেশি সাহায্য পাবে। ফলে এমন ভাবে দল তৈরি করতে হবে, যাতে ব্যাটিং গভীরতা থাকে আবার বল করার লোকও থাকে। দুবাইয়ে বল ভাল ব্যাটে আসে। ফলে বোলিংয়ে বৈচিত্র না থাকলে সমস্যা।” ভারত সেই কারণেই জাডেজা, অক্ষর এবং ওয়াশিংটনের মতো তিন জন স্পিনার অলরাউন্ডার নিয়ে গিয়েছে দুবাইয়ে। তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন প্রথম একাদশে সুযোগ পাবেনই। তৃতীয় স্পিনার হিসাবে জায়গা করে নেবেন কুলদীপ এবং বরুণের মধ্যে এক জন। বাংলার প্রাক্তন স্পিনার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে ভারত বিপক্ষ দেখে স্পিনার বাছবে। তিনি বললেন, “দুবাইয়ে যে সময় খেলা হবে, তখন ওখানে যথেষ্ট গরম। তাই স্পিনারদের বেশি বল করাতে হবে। ভারতের হাতে বিভিন্ন ধরনের স্পিনার আছে। বিপক্ষ দলের বাঁহাতি-ডানহাতি ব্যাটারের সংখ্যা বুঝে দল বাছতে হবে রোহিতদের।”
অশ্বিনের পাল্টা যুক্তি
ভারতের এত জন স্পিনার নিয়ে যাওয়ার যুক্তি যদিও মানতে পারছেন না রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দেশের অন্যতম সেরা স্পিনারের মতে যশস্বী জয়সওয়ালের মতো এক জন ব্যাটারকে বাদ দিয়ে বাড়তি স্পিনার নেওয়ার কোনও কারণ নেই। অশ্বিন বলেন, “দুবাইয়ে এত জন স্পিনার নিয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না। পাঁচ জন স্পিনার নিয়ে আমরা যশস্বীকে বাদ দিয়েছি। তিন বা চার জন স্পিনার ঠিক আছে। কিন্তু দুবাইয়ে পাঁচ জন স্পিনার কেন? জানি না। আমার মনে হয় দলে এক বা দু’জন স্পিনার বেশি নেওয়া হয়েছে। হার্দিক পাণ্ড্যের সঙ্গে দলে দু’জন সেরা বাঁহাতি স্পিনার অলরাউন্ডার রয়েছে। অক্ষর এবং জাডেজা অবশ্যই প্রথম একাদশে থাকবে। হার্দিকও খেলবে। বাঁহাতি স্পিনার কুলদীপও খেলবে। এ বার যদি বরুণকে প্রথম একাদশে নিতে হয়, তা হলে এক জন পেসারকে বসাতে হবে। তখন হার্দিককে দ্বিতীয় পেসারের ভূমিকা নিতে হবে। না হলে এক জন স্পিনারকে বাদ দিয়ে পেসার নিতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ দুবাইয়ে বল এত ঘুরবে? সদ্য ওখানে যে টি-টোয়েন্টি লিগ হল, সেখানে কিন্তু বল খুব বেশি ঘুরতে দেখা যায়নি। দলগুলো ১৮০ রান খুব সহজে তাড়া করছিল। ভারতের দল নিয়ে আমার একটু অস্বস্তি রয়েছে।”