প্রস্তুতি: শর্ট বলের অনুশীলনে শ্রেয়স। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়েতে। ছবি: পিটিআই।
ক্রিকেট জীবনে তাঁর কঠিনতম সময়ে দুই গুরুকে পাশে পেয়ে গেলেন শ্রেয়স আয়ার। এক জন অবশ্যই রাহুল দ্রাবিড়, বর্তমান ভারতীয় দলের কোচ। যাঁর পরামর্শ, সাহায্য সব সময়ই পাচ্ছেন শ্রেয়সরা। মঙ্গলবার তাঁর ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে শ্রেয়স পেয়ে গেলেন দ্রাবিড়ের খেলার দিনের এক প্রাক্তন সতীর্থকে। তাঁর নাম প্রবীণ আমরে।
ভারতীয় দলের অনুশীলন এ দিন বাধ্যতামূলক ছিল না। রোহিত, কোহলিরা বিশ্রামে ছিলেন। রোহিত বরাবরই মুম্বইয়ের ছেলে, কোহলিও এখন বিয়ের পরে মুম্বইয়ে থাকেন অনুষ্কাকে নিয়ে। দু’জনেই সম্ভবত এক দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেলেন। শ্রেয়স আয়ার, কে এল রাহুল, অশ্বিনরা এলেন অনুশীলনে। কিন্তু সকলের নজর সব চেয়ে বেশি করে ছিল শ্রেয়সের উপরে। দ্রাবিড়ের সতর্ক দৃষ্টির সামনে এক নাগাড়ে শর্ট বলের বিরুদ্ধে ব্যাট করানো হল তাঁকে। এই বিশ্বকাপে বার বার শর্ট বলে তাঁর উইকেট তুলছে প্রতিপক্ষ বোলাররা। যার দ্রুত সমাধান দরকার। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলল সেই বিশেষ অনুশীলন পর্ব। মাঝেমধ্যেই কোচ দ্রাবিড় এসে বোঝালেন শ্রেয়সকে। দেখে মনে হবে যেন ক্রিকেট পাঠশালা। গুরুর ক্লাসে ঢুকেছেন ছাত্র।
অনুশীলনের পাঠ শেষ হওয়ার পরে দেখা গেল পর্ব ২। যেখানে ব্যাট-বল ছিল না, চলল মৌখিক ক্লাস। প্রয়াত পিকের ভঙ্গিমায় ভোকাল টনিক। প্রবীণ আমরে অপেক্ষা করছিলেন ড্রেসিংরুমের সামনে। কিছু ক্ষণ পরেই শ্রেয়স এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। দু’জনেই মুম্বইয়ের, এর আগেও শ্রেয়সকে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন আমরে। ছাত্রকে টেকনিক্যাল কোনও পরামর্শের চেয়ে সাহস দিতে চাইলেন বেশি করে। প্রথমেই বলে দিলেন, ‘‘এত ভাবছিস কেন শর্ট বল নিয়ে? একদম খোলা মনে খেলতে যা।’’ শ্রেয়স বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘ভাল শুরু করছি। সেট হয়েও আউট হয়ে যাচ্ছি।’’ আমরের ফের পরামর্শ, ‘‘কেউ বলবে না, তুই খারাপ ব্যাট করছিস। শুধু একটু ধৈর্য যোগ করতে হবে। দেখতে হবে যাতে উইকেটটা উপহার দিয়ে চলে না আসি।’’ বরাবর মুম্বই ব্যাটিং ঘরানা মানে সহজে উইকেট দিয়ে আসব না। সুনীল গাওস্কর থেকে সচিন তেন্ডুলকর, সকলে সেই শৃঙ্খলা মেনে চলেছেন। আমরে সেই কথাটা ফের মনে করিয়ে দিলেন শ্রেয়সকে। বললেন, ‘‘বোলারকে কষ্ট করে উইকেট নিতে দে না। তুই দিয়ে আসবি কেন?’’ ভোকাল টনিক দিলেন এর পরে, ‘‘কত সুন্দর স্ট্রোক রয়েছে তোর হাতে। কত ভাল শট খেলছিস। আমার মনে হয়, একটু দেখে-দেখে বড় স্ট্রোকে যা। তা হলেই দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ শ্রেয়স মাথা নাড়াতে থাকলেন। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিল, বড় রান করতে না পেরে মনমরা হয়ে রয়েছেন। চাঙ্গা করার জন্য পিঠ চাপড়ে, হাত দু’টো জোরে ঝাঁকিয়ে দিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, ও দিকে দ্রাবিড়। এ দিকে আমরে। দু’জনেরই অ্যালান ডোনাল্ডদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় শতরান আছে। আমরের শতরান টেস্ট অভিষেকে ডারবানে। যেখানে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর গতি ও বাউন্স অপেক্ষা করে থাকে ব্যাটসম্যানদের জন্য।
শ্রেয়সের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসার পরে আমরে বলে গেলেন, ‘‘শর্ট বল কে পছন্দ করে বলুন তো? কে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলুন তো? একমাত্র শ্রেয়সকে দোষ দিলে হবে?’’ জানালেন, শ্রেয়সের সঙ্গে কথা বলবেন বলেই এসেছিলেন। সদ্য প্রকাশিত নিজের আত্মজীবনী ‘জ়িরো ফর ফাইভ’ উপহার দিয়ে গেলেন তাঁকে।
কেন এ রকম হচ্ছে শ্রেয়সের? বার বার শর্ট বলে কেন আউট হয়ে যাচ্ছেন? ‘‘পুরোটাই মানসিক। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলেই দেখা যাবে কোনও সমস্যা নেই। ভালই তো ব্যাট করছে। ব্যাটিংয়ে এটাও দেখতে হয়, কী ভাবে ইনিংসটাকে সাজাব। কখন কোন শট খেলব, কোন শট খেলব না।’’ আমরে নিজে ক্রিকেটার হিসেবে খুব বড় কেরিয়ার তৈরি করতে না পারলেও পরবর্তীকালে কোচ হিসেবে খুবই সুনাম অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন। শ্রেয়সকে অতীতে অনেক সাহায্য করেছেন। বুধবার সচিনের মূর্তি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসছেন? ‘‘আসব না মানে? আমার বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে সচিন জ্বর নিয়েও এসেছিল। ওর অনুষ্ঠানে আমি আসব না?’’ দু’জনেই স্যর রমাকান্ত আচরেকরের ছাত্র। সেই বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এখনও অটুট। গাড়িতে ওঠার সময় যা বলে গেলেন, বাঁধিয়ে রাখার মতো। ‘‘আমি একটা সেঞ্চুরি করেছিলাম। তাতেই কত লিখেছেন আপনারা আমাকে নিয়ে। আর ও তো একশোটা সেঞ্চুরির মালিক!’’
শুনে মনে হল, মুম্বইয়ের এত সব ঝলমলে ক্রিকেট ও বলিউড তারকা যতই থাকুক। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোলে যাঁর বিশাল বিজ্ঞাপনী বোর্ড স্বাগত জানাবে। এ শহরের বাদশা আজও তিনি— সচিন তেন্ডুলকর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy