পরামর্শ: স্পিনারদের গুরুত্ব দিয়ে বিদেশের মাটিতে কার্যকরী দল সাজানোর কথা বলছেন হরভজন। ছবি ফেসবুক।
ওয়ান ডে সিরিজ়ে যশপ্রীত বুমরার দাপটে এগিয়ে গেলেও এজবাস্টনে টেস্টে হারের ক্ষত তাতে মিলিয়ে যাচ্ছে না। শেষ ইনিংসে ৩৭৮ রান তাড়া করে তুলে দিয়েছেন জো রুট, জনি বেয়ারস্টোরা। প্রথম একাদশ থেকে ব্রাত্যই অশ্বিন। অলরাউন্ডার হিসেবে খেলছেন রবীন্দ্র জাডেজা। ঠিক হচ্ছে? বিরাট কোহলির এই দীর্ঘ রান খরা কেন? সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কয়েক দিন আগে ইংল্যান্ড থেকে মোবাইল ফোনে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় হরভজন সিংহ। আজ শেষ পর্ব।
প্রশ্ন: ভারতের বোলিং আক্রমণ এখন পেস-নির্ভর। বিদেশে এক জন স্পিনারই খেলানো হচ্ছে...
হরভজন সিংহ (থামিয়ে দিয়ে): বেশ ভাল কথা। কিন্তু সেই এক জন স্পিনারও তো অলরাউন্ডার খেলানো হচ্ছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, জাডেজা ব্যাট হাতে যে রকম সব ইনিংস খেলছে, ওকে তো ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলানো যায়। জাডেজা যে কোনও ব্যাটসম্যানের সমকক্ষ। স্পিনার হিসেবে আর অশ্বিনকে খেলাতে পারত। তা হলে দুই স্পিনারও হয়ে যেত, অতিরিক্ত ব্যাটসম্যানও থাকত। জাডেজাকে যে প্রথম একাদশের বাইরে রাখা যায় না, সেটা আমিও মানি। ও ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব কিছুতেই ভাল। কিন্তু এত উইকেট নেওয়ার পরে অশ্বিনের উপরে যদি দলের আস্থা না থাকে, তা হলে আমি জানি না কোন দিশায় ওদের চিন্তাভাবনা ছুটছে।
প্র: দেশের মাঠে যে রকম উইকেট তৈরি করা হয় সেটা কি স্পিনারের আসল পরীক্ষা হতে পারে? তিন দিনের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতে খেলা হলে।
হরভজন: সেটাই তো বলার চেষ্টা করছি। পিচে কী ভাবে জল দেওয়া হয়, কী ভাবে রোল করা হয় জানি না। গুডলেংথ স্পট থেকে বল উল্টোপাল্টা আচরণ করতে শুরু করে শুরু থেকেই। এ রকম পিচ বানিয়ে খেলালে তো যে কোনও স্পিনারই উইকেট নিয়ে যাবে। এর ফলে কী হচ্ছে? দেশের মাঠে পাঁচ-সাত ওভারে বল করেই পাঁচ উইকেট পেয়ে যাচ্ছে সব। কিন্তু বিদেশের মাঠে গিয়ে পঁচিশ-তিরিশ ওভার বল করে তবেই দু’টো বা তিনটে উইকেট পাওয়া যাবে। সেই পরিশ্রম, ধৈর্য বা স্কিল কারও থাকছে না। এখন ভারতে টেস্ট ম্যাচের জন্য যে রকম পিচ বানানো হয়, তাতে এই ধৈর্যের অনুশীলনটা হওয়া সম্ভব নয়। আমার তো মনে হয়, ভারতে যদি স্বাভাবিক ভারতীয় পিচ বানানো হয়, তা হলেও আমাদের দল জিতবে। তা হলেও আমাদের স্পিনাররা উইকেট পাবে। ভবিষ্যতের রাস্তায় রাহুল দ্রাবিড়কে এটা নিয়ে ভাবতে হবে যে, কেমন পিচে দেশের মাটিতে খেলা উচিত। কারণ, শুধু দেশের মাটিতে তিন দিনের মধ্যে জিতে আনন্দ করাটা লক্ষ্য হতে পারে না। আসল হচ্ছে, টিম হিসেবে তোমরা কেমন ছাপ রেখে যেতে পারলে। বৃহত্তর ক্যানভাসে সেটাই দেখতে চাইবে লোকে।
প্র: এজবাস্টন টেস্টে চার পেসার নিয়ে খেলা কি ঠিক হয়েছিল? আপনি কী বলেন?
হরভজন: না, আমি এই কম্বিনেশনের সঙ্গে একমত নই। আমার মনে হয়, তিন পেসারের সঙ্গে দুই স্পিনার খেলানো যেত। তা হলে জাডেজা, অশ্বিন দু’জনকেই প্রথম একাদশে রাখা যেত।
প্র: আচ্ছা, জাডেজা দারুণ ব্যাট করছেন। আবার বিদেশের মাঠে বল হাতে তেমন সাফল্য পাচ্ছেন না। তা হলে এই সমস্যার সমাধান কী?
হরভজন: দেখুন, সফল হচ্ছে না বলে দেওয়া তো খুব সহজ। কিন্তু দেখতে হবে কেন ও উইকেট পেল না? জাডেজা খুবই দক্ষ এক জন ক্রিকেটার। স্পিনার হিসেবেও যথেষ্ট ভাল। দেখতে হবে ওকে কী ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, অধিনায়ক কী রকম ফিল্ডিং সাজিয়েছে। আরও আস্থা দেখিয়ে আগে থেকে বোলিং করানো উচিত ছিল কি না। এক জন ক্রিকেটারের সাফল্য শুধু তার উপরেই তো নির্ভর করে না। অধিনায়ক যদি ভাবে ফাস্ট বোলার দিয়ে আক্রমণ করবে, স্পিনার রান আটকাবে, তা হলে স্পিনারের থেকে উইকেট আশা করা যায় কী ভাবে? তা ছাড়া প্রত্যেক ম্যাচেই নতুন নতুন ক্যাপ্টেন দেখা যাচ্ছে। তাই স্থায়ী নেতা কে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তার ছাপও পড়ছে পরিকল্পনায়। রাহুল দ্রাবিড়কেই এ সব সমস্যা সামলাতে হবে। স্পিনারদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে হবে যে, তোমরা কী চাইছ আর কী পাচ্ছ না! ওদের আত্মবিশ্বাস দিতে হবে।
প্র: এখনকার ক্রিকেটে ‘বিশ্রাম’ শব্দটাও কি একটু বেশিই শোনা যাচ্ছে না কি?
হরভজন: আমি ভিতরকার এই সব সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানি না। নির্বাচকেরাই ভাল বলতে পারবেন তাঁদের ‘রেস্ট পলিসি’ ঠিক কী রকম। আমি একটাই জিনিস বুঝি। বিশ্রাম তখনই দরকার হয় যখন এক জন খেলোয়াড় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে গত দু’বছর ধরে কোভিডের জন্য পরিস্থিতি অন্য রকম হয়েছে ঠিকই। মানসিক অবসাদের ব্যাপারটা উঠে এসেছে দীর্ঘদিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার জন্য। একটা বলয় থেকে অন্য বলয়ে যাওয়া, পরিবার থেকে দূরে থাকা। এ সব কারণে খেলোয়াড়রা বেশি ক্লান্ত বোধ করতে পারে, জানি না।
প্র: বিরাট কোহলির সমস্যা কী? এত বড় খেলোয়াড়, এত দিন ধরে অফ ফর্মে কেন?
হরভজন: বিরাটের ব্যাট থেকে যে ধরনের ইনিংস আমরা দেখে অভ্যস্থ, তা বহুদিন দেখা যাচ্ছে না। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব যেন ওর রানে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সেই রানে ফেরাটা আর হচ্ছেই না। এজবাস্টন টেস্ট আমি দেখিনি। তবে আইপিএলে দেখছিলাম, বিরাট নানা ধরনের আউট হচ্ছে। নানা ধরনের বোলারের বলে আউট হচ্ছে। একটা সময় জিমি অ্যান্ডারসন ওকে পর-পর আউট করে যাচ্ছিল। উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলিয়ে আউট করছিল। এটা টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য হতে পারে। এখন কিন্তু বিরাটের সে রকম হচ্ছে না। ওর টেকনিক্যাল ত্রুটি নেই। অফ ফর্মের জন্যই রান পাচ্ছে না।
প্র: কী মনে হয়, বিরাটের ফর্মে ফেরার জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে?
হরভজন: প্রার্থনা করব যেন খুব তাড়াতাড়ি বিরাট রানে ফেরে। কারণ, টিম ইন্ডিয়া সেরা ফর্মের বিরাটের অভাব অনুভব করছে। পুরনো বিরাটকে দরকার দলের। বড় বড় যে সব ইনিংসগুলো খেলত বিরাট, সেটাই এখন হচ্ছে না। তাই আশা করব, খুব দ্রুত রাজা তার স্পর্শ ফিরে পাবে। আমি বিরাটকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। এ রকম পরিশ্রমী ক্রিকেটার, এ রকম দায়বদ্ধতা, খিদে খুব কমই দেখেছি। রান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সব চেয়ে বেশি যে জ্বলছে, তার নাম বিরাট কোহলি। আমি নিশ্চিত, খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখছে না ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy