Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

Salil Ankola: ক্রিকেট ছাড়ার পর সব কেড়ে নিয়েছিল মদ, সচিন-সতীর্থের রাত কাটত গাড়িতে!

হতাশা, অভিমান, রাগ ভুলতে নেশায় ডুবে থাকতেন আঙ্কোলা। দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়েছেন। সেই অতীতের কথা বলেছেন প্রাক্তন জোরে বোলার।

সচিনের সঙ্গে আঙ্কোলা।

সচিনের সঙ্গে আঙ্কোলা। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ১২:১৬
Share
Save

১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন সলিল আঙ্কোলা। সেই ম্যাচেই অভিষেক হয় সচিন তেন্ডুলকর, ওয়াকার ইউনিসের। তার পর থেকে সচিন, ওয়াকাররা যত এগিয়েছেন, তত পিছিয়েছেন আঙ্কোলা। পিছোতে পিছোতে এক সময় ক্রিকেট থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

সচিনের মতো আঙ্কোলাও ছিলেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। করাচির ওই ম্যাচের পর আর দেশের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি আঙ্কোলার। মাঝেমধ্যে একদিনের ক্রিকেটে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। বাদও পড়েছেন। দেশের হয়ে এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন ২০টি। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। এক সময় দেশের সেরা প্রতিশ্রুতিমান জোরে বোলার ছিলেন আঙ্কোলা। অথচ ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছেন ২২ গজের লড়াই থেকে।

ক্রিকেট থেকে অনেকটা দূরে চলে যান একটা সময়। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। পা রাখেন অভিনয় জগতে। সেই আঙ্কোলাই আবার ক্রিকেটে ফিরেছেন কয়েক বছর আগে। দু’বছর ধরে তিনি মুম্বইয়ের প্রধান নির্বাচক। তার আগে আঙ্কোলার জীবন এত সহজ ছিল না। বরং মদের নেশা জীবনের সব কিছুই কেড়ে নিয়েছিল। থাকার মতো একটা বাড়িও ছিল না আঙ্কোলার। রাত কাটত গাড়িতে!

আঙ্কোলার বাবা ছিলেন মুম্বই পুলিশের কর্মী। সেই সূত্রে কিছু পুলিশকর্মীর সঙ্গে পরিচয় ছিল। দেশের হয়ে খেলায় পুলিশ মহলে পরিচিতি আরও বাড়ে। এক সাক্ষাৎকারে আঙ্কোলা ২০১০ সালের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সচিন এখন যে বিশাল বাড়িতে থাকে, তার থেকে কিছু দূরে একটা গলিতে গাড়িতে শুয়েছিলাম এক দিন। সকালে গাড়ির জানলা খুলতেই চিনতে পারেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। ওঁরা এগিয়ে এসে বলেন, ‘সলিল ভাই, আপনি এখানে কেন?’ ওঁরা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আমার থাকার কোনও জায়গা নেই। ওঁরা আমার গাড়িটা চিনতেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিশ্চিন্তে থাকার। ওঁরা খেয়াল রাখবেন।’’

অভিনেতা আঙ্কোলা।

অভিনেতা আঙ্কোলা। ছবি: টুইটার

দীর্ঘ দিন সাফল্যের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন। অভিনয় করেছেন। বৈভবের মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন। যে দু’ক্ষেত্রে এ দেশে আয়ের সুযোগ সব থেকে বেশি, সেই দু’ক্ষেত্রে সফল হয়েও এমন পরিণতি! আঙ্কোলা জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা খান ২০১০ সালে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তাঁর। সন্তানরাও তাঁর কাছে আসত না। জীবনের সব রোজগার শেষ করে ফেলেন। হতাশা ভুলতে ডুবে যান মদে। আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘হঠাৎ করেই আমাকে আর কেউ পছন্দ করত না। কাছের এবং প্রিয় মানুষরাও দূরে সরে গেল। এমন হলে জীবনের আর কোনও কিছু নিয়ে গর্ব করা যায়!’’

সে সময় কয়েক মাস গাড়িই ছিল তাঁর বাড়ি। ভারতীয় দল থেকে বাদ যাওয়ার পর ভারত ‘এ’ দলে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘আমাকে ‘এ’ দলে নেওয়া হয়েছিল। শুধু বিরতিতে মাঠে জল নিয়ে যেতাম।’’ কপিলদেব, মনোজ প্রভাকর অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৭ সালে এক সঙ্গে চোট পান জাভাগল শ্রীনাথ এবং বেঙ্কটেশ প্রসাদ। ভারতীয় দলে ফেরার ভাল সুযোগ ছিল আঙ্কোলার সামনে। কিন্তু সে সময়ই হাঁটুর চোট স্বপ্ন শেষ করে দেয় তাঁর।

আঙ্কোলার বাবা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেই ব্যবসা চালাতে পারেননি তিনি। আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘ব্যবসার বিপুল ক্ষতি সামলাতে সমস্ত সঞ্চয় খরচ করে ফেলতে হয় আমাদের। খেলার সময় একটা বিখ্যাত সংস্থায় চাকরি করতাম। খেলা ছাড়ার পর ওরাও আমাকে রাখেনি। স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা-মাকে নিয়ে তখন ভীষণ অসহায় অবস্থায় দিন কাটিয়েছি। করার মতো কিছুই ছিল না আমার কাছে।’’

২০১১ সালে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ছিলেন আঙ্কোলা। জানতেন সে বছরই ছিল তাঁর প্রিয় সচিনের শেষ বিশ্বকাপ। চেয়েছিলেন সচিনের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে। রাত জেগে দেখেছিলেন ফাইনাল ম্যাচ। ভারতীয় দলের বাকিদের কাউকেই তেমন চিনতেন না। অনেকের নামও জানতেন না। ক্রিকেট থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। শুধু সচিনের জন্যই বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে আবার ক্রিকেট দেখতে শুরু করেন আঙ্কোলা।

কেন দেখতেন না ভারতের খেলা? আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘সঠিক কারণ বলতে পারব না। হতাশা থেকে হতে পারে। অভিমান থেকে হতে পারে। রাগও হতে পারে। ভারতীয় দলে আমাকে বার বার নেওয়া হত। বাদ দেওয়া হত। বছরের পর বছর এই জিনিসটা মেনে নিতে পারছিলাম না।’’ নিজেকে কেন মদে ডুবিয়ে দিলেন? আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘২০০৪ সালের আগে কখনও মদ ছুঁইনি। প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে একটু আধটু খেতাম মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই মজাটাই আমার সর্বনাশ করেছে। ২০০৭ সালে বাবা আমাকে সতর্ক করেন। তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তার এক বছরের মধ্যেই মদ আমাকে আঁকড়ে ধরে। সারাক্ষণ নেশার মধ্যে থাকতাম। আস্তে আস্তে কাজ হারাতে শুরু করি। তা-ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না।’’

কী করে ছাড়লেন মদের নেশা? আঙ্কোলা কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়াকে। তাঁর জন্যই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে শপথ করেছিলেন, মদ না খাওয়ার। রিয়াও সব সময় কড়া নজরে রাখতেন স্বামীকে। আঙ্কোলা বলেছেন, ‘‘২০১৩ সালে আমার প্রথম স্ত্রী মারা যান। নিজের সন্তানদের বহু দিন দেখতে পাইনি। তখন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। তাই অনেক বেশি করে মদ খেতে শুরু করলাম। তার আগেই রিয়ার সঙ্গে আমার আলাপ হয়। ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে নয় থেকে দশ বার আইসিসিইউতে ভর্তি হতে হয় আমাকে। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন আমাকে সুস্থ করতে।’’

হাসপাতালে চিকিৎসার সময় আঙ্কোলা।

হাসপাতালে চিকিৎসার সময় আঙ্কোলা। ছবি: টুইটার

আঙ্কোলা জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকে তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সে সময় নিজেকে প্রশ্ন করেন, সুস্থ ভাবে বাঁচবেন না মৃত্যুকে আহ্বান করবেন। ধীরে ধীরে শুরু করেন কোচিং। ফিরে আসেন ক্রিকেটে। স্বাভাবিক জীবনে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Sachin Tendulkar salil ankola mumbai Indian Cricket team Alcohol ICCU Cricketer Indian cricketer

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।