প্রতিজ্ঞ: উপেক্ষার যোগ্য জবাব দিয়ে বুমরা, সিরাজের সঙ্গে জুটি বাঁধতে তৈরি অনবদ্য শামি। —ফাইল চিত্র।
ধর্মশালায় পাঁচ উইকেট নিয়ে উপেক্ষার যোগ্য জবাব দিয়েছেন তিনি। লখনউয়ে এসে প্রাক্তন কোচের অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা পেয়ে গেলেন মহম্মদ শামি।
শনিবার দুপুরে ভারতীয় দলের পেসার গিয়েছিলেন সহারা গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্তা এবং ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে বহুদিন জড়িত অভিজিৎ সরকারের বাড়িতে। মধ্যাহ্নভোজে লখনউয়ের বিখ্যাত টুন্ডে কাবাব, বিরিয়ানি, পরোটার মতো শিরমল থাকলেও শামি যৎসামান্য খেলেন। এমনিতেই গত দু’তিন বছর ধরে ফিটনেস নিয়ে ভীষণ ভাবে সচেতন তিনি। ওজন একদম যেন বেড়ে না যায়। যে কারণে নিজের খামারবাড়িতে ট্রেনিং করার জন্য বিশাল মাঠ তৈরি করেছেন। বিশ্বকাপের মধ্যে বলে আরও বেশি করে যেন কার্ফু জারি করেছেন খাবারের উপরে। বিরিয়ানি খেতে এত ভালবাসেন। কলকাতায় ক্রিকেট খেলার সময় বাজি ধরে ক্লাব কর্তা বলতেন, উইকেট নিলেই বিরিয়ানি খাওয়াব। ব্যস, বলের জোর বেড়ে যেত তাঁর। এখন প্রিয় বিরিয়ানিও দূরে সরিয়ে রাখছেন ফিটনেস নষ্ট করতে চান না বলে।
তার মধ্যেই পেলেন শাস্ত্রীর ফোন। ভারতীয় দলের কোচ থাকাকালীন শামিকে ‘বড়ে নবাব’ বলে ডাকতেন তিনি। নবাবদের শহরে দাঁড়িয়ে যা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। এ দিনও বললেন, ‘‘দারুণ বল করেছ বড়ে নবাব। এ ভাবেই চালিয়ে যাও। আরও অনেক পাঁচ উইকেট অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।’’ শামিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানালেন প্রাক্তন কোচকে। দেশ-বিদেশে যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে শামিকে রেখে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস জুটি গড়ে তুলেছিলেন শাস্ত্রী এবং প্রাক্তন বোলিং কোচ ভরত অরুণ।
দিল্লিতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও মহম্মদ শামিকে খেলানো হচ্ছে না দেখে চুপ থাকতে পারেননি শাস্ত্রী। বলে ফেলেছিলেন, ‘‘এই ম্যাচটায় যদি না খেলায়, কবে খেলাবে? পরে কোনও কারণে যদি ওকে দরকার পড়ে তখন কী হবে?’’ সেই দরকার পড়ল ধর্মশালায়। হার্দিক চোটের জন্য না থাকায় খেলাতেই হল শামিকে। এবং প্রত্যাবর্তনেই পাঁচ উইকেট নিয়ে দল পরিচালন সমিতির মুখের উপরে যোগ্য জবাব দিয়ে দেন তিনি। সেই রাতে ধর্মশালায় ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মুখে হাসি রেখেও বুঝিয়ে দেন, সুযোগ পেলে অনেক অপমানের জবাবই দিতে পারেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘পিচ সাহায্য করছিল না। আপনি কি ঠিক করেছিলেন, যেটা পারেন সিম ধরে বল করে যাওয়া, সেটাই করবেন?’’ শামি মুচকি হেসে জবাব দেন, ‘‘স্যর, আমি পারি তো অনেক কিছুই। শুধু একটা জিনিসই পারি, কেন বলছেন?’’ যা শুনে অনেকেরই মনে হয়েছিল, ভিতরে চেপে রাখা আগুন বার করে দিচ্ছিলেন। যেমন বহু প্রতীক্ষার পরে সুযোগ পেয়ে বল হাতে ধর্মশালার পিচে আগুন ছোটাচ্ছিলেন। পাঁচ উইকেট নেওয়ার বলটিও রেখে দিয়েছেন। এরকম কত বল যে তাঁর বাড়ির আলমারিতে জমল। ব্রাত্য থাকার পরে জবাব দেওয়ার স্মারক।
লখনউয়ে আদর্শ প্রথম একাদশ নিয়ে চর্চা থাকতে পারে। অশ্বিনকে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলাব কি না, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। এ মাঠে বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ হয়েছে রবিবারের আগে পর্যন্ত। তাতে স্পিনাররা ওভার পিছু রান দিয়েছেন পাঁচেরও কম। তাই অশ্বিনকে খেলানোর ভাবনা আসতেই পারে। কিন্তু তার জন্য শামিকে বাইরে রাখার কোনও প্রশ্ন নেই। বসাতে হলে মহম্মদ সিরাজকে বসানো হবে। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে নিষ্প্রভ সিরাজ। পাঁচ ম্যাচে মাত্র ছয় উইকেট নিয়েছেন। এ রকম চলতে থাকলে এখানে না বসলেও হার্দিক ফিরলে তাঁর জায়গা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
ইংল্যান্ডের দলে অবশ্য হ্যারি ব্রুক, গাস অ্যাটকিনসনদের মতো তরুণদের খেলানোর দাবি উঠেছে। প্রবল চাপে রয়েছেন অধিনায়ক জস বাটলার। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৪৩ করার পরে তাঁর স্কোর যথাক্রমে ২০, ৯, ১৫, ৮। অধিনায়কত্বও পাতে দেওয়ার মতো নয়। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টসে জিতে ফিল্ডিং কেন নিলেন, তা নিয়ে তুলোধনা করা হচ্ছে তাঁকে। এর পরে কি আর ট্যাঙ্কে কোনও জ্বালানি অবশিষ্ট আছে তাঁর?
লখনউ আবার কে এল রাহুলের আইপিএল মাঠ। লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক তিনি। এখানেই বড় চোট পেয়ে ছ’মাসের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন। বাকি আইপিএল খেলতে পারেননি। টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপের জন্য ফিট হন একেবারে শেষ মুহূর্তে। লখনউয়ে রবিবারের ম্যাচটা রাহুলের প্রত্যাবর্তন বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার ম্যাচ। আর শামির কাছে? আবার নিজেকে প্রমাণ করার ম্যাচ। যারা এত বার উপেক্ষা করেছে, তাদের পক্ষে ধর্মশালার পাঁচ উইকেট ভুলে যেতে কত ক্ষণ লাগবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy