লক্ষ্মী, মনোজদের চোখ এখন রঞ্জি ফাইনালে। ফাইল ছবি।
গত বারের চ্যাম্পিয়ন মধ্যপ্রদেশকে ৩০৬ রানে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে উঠল বাংলা। এই নিয়ে ১৫ বার রঞ্জির ফাইনালে বাংলা। গত বারের সেমিফাইনালে হারের বদলা নেওয়ার পর উচ্ছ্বাসে মাতলেন মনোজ তিওয়ারিরা। যদিও সেই উচ্ছ্বাসের মধ্যে ছিল সংযম।
গৌরব যাদবকে প্রদীপ্ত প্রামাণিক আউট করতেই তিন বছর পর আবার রঞ্জির ফাইনালের বঙ্গ ব্রিগেড। দুরন্ত জয়ের পর সাজঘর থেকে মাঠে ছুটে এলেন প্রথম একাদশে না থাকা ক্রিকেটাররা। তাঁদের হাতে ছিল সিএবির পতাকা। অনুষ্টুপ মজুমদার, শাহবাজ় আহমেদরা অভিনন্দন জানালেন পরস্পরকে। সকলের মুখেই হাসি। ম্যাচ জেতার স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস দেখা গেল বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে। আকাশ দীপ ম্যাচের সেরা হওয়ায় তাঁকে কোলে তুলে নিলেন সতীর্থরা। সব কিছুর পর গোটা দল গোল করে দাঁড়াল মাঠের মাঝ খানে। ক্রিকেটার, কোচ-সহ দলের সকলে ছিলেন সেই টিম হার্ডলে। ছোট্ট বক্তব্য রাখলেন অধিনায়ক মনোজ।
মনোজের কথা শেষ হতে সাজঘরে ফিরল বাংলা দল। ক্রিকেটারদের চোখে মুখে ফাইনালে ওঠার আনন্দ দেখা গেলেও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস চোখে পড়ল না। হয়তো কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বা অধিনায়ক আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের। ফাইনালে ওঠাই শেষ কথা নয়। আরও একটি ম্যাচ রয়েছে। সেই ম্যাচ না জিততে পারলে গোটা মরসুমের কঠোর পরিশ্রম জলে যাবে। যেমন অতীতে গিয়েছে ১২ বার। অভিজ্ঞ মনোজ, লক্ষ্মীদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই তাঁরা যেমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে গা ভাসাননি, তেমনই সংযত রেখেছেন অন্য ক্রিকেটারদেরও।
১৯৮৯-৯০ মরসুমে শেষ বার রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। তার পর চার বার ফাইনালে উঠলেও ট্রফি অধরাই থেকেছে। লক্ষী, মনোজরাই অন্তত তিন বার এই ঘটনার সাক্ষী। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো শিক্ষা নিয়েছেন তাঁরা। সেই শিক্ষাই দিয়েছেন বাংলার অন্য ক্রিকেটারদের।
১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রঞ্জি ফাইনাল। প্রতিপক্ষ সৌরাষ্ট্র হলে লড়াই চেনা ইডেনে। ফাইনালে কর্নাটক উঠলে লড়াই বেঙ্গালুরুতে। প্রতিপক্ষ, মাঠ যাই হোক— জিততে হবে। না হলে বাংলার পাশে ‘চোকার্স’ শব্দটার স্থায়িত্ব বাড়বে। যা বাংলার ক্রিকেটের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন হবে না।
গত বছর রঞ্জি ফাইনালে আরও কঠিন সংযম দেখা গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের মধ্যে। ফাইনালে জয়ের রান না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর মুখে হাসি দেখা যায়নি গত বার। স্থির ভাবে এক জায়গায় বসে ম্যাচ দেখেছিলেন। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অবশ্য এক দৌড়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। একে একে জড়িয়ে ধরেছিলেন ছাত্রদের।
লক্ষ্মী এবং মনোজ দু’জনেই খেলেছেন ভারতের হয়ে। বহু বছর ধরে চেষ্টা করেছেন বাংলাকে ভারতসেরা করার। পারেননি। চায়ের কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব থেকেই গিয়েছে। এ বারই হয়তো শেষ বার বাংলার জার্সি পরে মাঠে নামছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। ক্রিকেটজীবনের শেষ বেলায় বাংলার অধিনায়ক কোচ হিসাবে পেয়েছেন এক সময়ের প্রিয় সতীর্থকে। লক্ষ্মী ক্রিকেটার হিসাবে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। মনোজও পারেননি এখনও। ক্রিকেট ঈশ্বর আরও এক বার সুযোগ দিয়েছেন তাঁদের। মনোজের হাত ধরেই হয়তো ক্রিকেটের লক্ষ্মীলাভ হবে বাংলার কোচের। বা লক্ষ্মীর হাত ধরে মনোজের লক্ষ্মীলাভ। যাই হোক, আসল লাভ বাংলার ক্রিকেটের।
দিন কয়েক আগেই বাংলার তিন অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা ক্রিকেটার রিচা ঘোষ, হৃষিতা বসু এবং তিতাস সাধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হয়েছেন। এ বার পালা দাদাদের, ভারতসেরা হওয়ার। উৎসব, উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার অফুরন্ত সময় পাওয়া যাবে তখন। এখন না হয় অল্পতেই সই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy