লর্ডসের লং রুমে ইংরেজ সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজা ও ডেভিড ওয়ার্নার। ছবি: টুইটার
অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন লর্ডসের লং রুমে ইংরেজ সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খোয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ, তাঁদের ক্রিকেটারদের কটূক্তি করা হয়েছিল। এই ঘটনার আরও এক দিক এ বার জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নেথান লায়ন। তাঁর কথায়, নিজের দেশের সমর্থকদের ব্যবহার দেখে এক ইংরেজ বৃদ্ধা তাঁর কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
চোটের কারণে দ্বিতীয় টেস্টের পরে অ্যাশেজ সিরিজ় থেকে ছিটকে গিয়েছেন লায়ন। প্রাক্তন সতীর্থ ব্র্যাড হ্যাডিনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে লর্ডসের সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন লায়ন। তিনি বলেছেন, ‘‘লর্ডসের লং রুমে তখন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েক জন সমর্থক ছিলেন। আমি সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম। তখনই এক ইংরেজ বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাড়ি চলে যাব। আমাদের দেশের সমর্থকেরা যে আচরণ করেছে তার জন্য আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’ এ কথা বলে ওই বৃদ্ধা স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান।’’
লর্ডসের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জনি বেয়ারস্টোর আউট হওয়ার ধরন মেনে নিতে পারেননি ইংরেজ সমর্থকেরা। বিরতিতে অস্ট্রেলিয়া দল যখন সাজঘরে ফিরছিল, তখন চিৎকার করে তাঁদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন ইংরেজ সমর্থকেরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা প্রথমে তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে এমসিসি (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব)-র যে সব সদস্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে আরও কিছু বলেন। ওয়ার্নার এবং খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকদের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পরে চুপ থাকেনি অস্ট্রেলিয়া। একটুও সময় নষ্ট না করে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনার তদন্ত দাবি করে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানায়, ‘‘লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন লং রুমে দর্শকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে বিবাদ হয়েছে তার নিন্দা করছি আমরা। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের কাছে আবেদন করছি, ঘটনার তদন্ত করা হোক। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। ধাক্কা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তখনই জানিয়েছিল এমসিসি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিল তারা। একটি বিবৃতিতে এমসিসি বলেছিল, ‘‘লং রুম লর্ডসের ঐতিহ্য। পঞ্চম দিন সকালের পর থেকে মাঠের উত্তাপ গ্যালারিতে ছড়িয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমসিসি-র কয়েক জন সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তার জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তার পরেই পদক্ষেপ করে এমসিসি। তাদের তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। এমসিসি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘লর্ডসের ঘটনায় তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’’ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের চিফ এগজিকিউটিভ গায় ল্যাভেন্ডার জানিয়েছেন, লর্ডসের মতো ঐতিহ্যশালী স্টেডিয়ামে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
এখানেই থেমে থাকতে চাইছে না এমসিসি। সদস্যদের উদ্দেশে আরও কিছু বিধিনিষেধ চালু করেছে তারা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, লং রুম দিয়ে যাওয়ার সময় ক্রিকেটারদের জন্যে আরও বেশি জায়গা বরাদ্দ থাকবে। অর্থাৎ ক্রিকেটারদের থেকে সদস্যদের আরও দূরে রাখা হবে। ক্রিকেটারেরা যখন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করবেন, তখন সিঁড়িতে কোনও সদস্য থাকতে পারবেন না। মহিলাদের অ্যাশেজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকেই এই নিয়ম চালু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy