মহম্মদ শামি। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপের পর থেকে আলোচনায় উঠে এসেছেন মহম্মদ শামি। বাংলার জোরে বোলারকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের আগ্রহ তুঙ্গে। ক্রিকেটার শামিকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কলকাতা ময়দান। তবু শামি আসলে বাংলার নন। আদতে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার বাসিন্দা তিনি। তা-ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার জন্য প্রথম থেকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন বাংলাকে। কেন? বঞ্চনা, অপমানের কাহিনি শুনিয়েছেন ভারতীয় বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা।
উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হলেও ক্লাব ক্রিকেট খেলার জন্য শামি বেছে নিয়েছিলেন কলকাতা ময়দানকে। বাংলার হয়েই খেলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। খেলার জন্য বছরের একটা বড় সময় থাকেন কলকাতাতেই। কলকাতার ময়দান, ইডেন গার্ডেন্স সব কিছুই তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটার তৈরি হয় না, এমন নয়। মহম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না, কুলদীপ যাদব, পীযূষ চাওলা, প্রবীণ কুমার, ভুবনেশ্বর কুমার— গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের বহু ক্রিকেটার দেশের হয়ে খেলেছেন। তা হলে কেন শামিকে ছোট বয়সেই নিজের রাজ্য ছাড়তে হয়েছিল?
বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন শামি। বাংলার জোরে বোলার বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ট্রায়ালে দু’বছর অংশ নিয়েছিলাম। প্রথম বার শুরুতে সব কিছুই ঠিক থাকত। সব কিছু ভালই মনে হত। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ড এলেই উত্তরপ্রেদেশের লোকেরা আমাকে লাথি মেরে বাইরে বার করে দিত। আমাকে বলা হত, ‘এখানে তোমার কোনও প্রয়োজন নেই।’’’
পরের বছর আরও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল শামির। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বলেছেন, ‘‘পরের বছরও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ১৬০০ ছেলে এসেছিল ট্রায়ালে। তিন দিনে সবাইকে দেখে রঞ্জি ট্রফির দল তৈরি করার কথা ছিল। সে বার আমার সঙ্গে দাদাও ছিলেন। প্রধান কর্তাদের এক জনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন দাদা। আমার দাদাকে ওই কর্তা এমন একটি কথা বলেছিলেন, যা আমরা জীবনে কখনও ভাবতে পারি না। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমার চেয়ার নাড়িয়ে দিতে পারে, তা হলে তোমার ভাই সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। না হলে সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত।’ আমার দাদা তাঁকে জবাবে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই আপনার চেয়ার নাড়াতে তো পারবেই, দরকার হলে আপনার চেয়ার উল্টেও দিতে পারে। ওর গায়ে এতটাই শক্তি আছে। কিন্তু আমি চাই না এ ভাবে ভাই সুযোগ পাক। ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সুযোগ পেলেই খুশি হব।’ তাতে ওই কর্তা বলেছিলেন, ‘তা হলে তোমার ভাইয়ের জায়গা নেই এখানে। প্রতিভা দিয়ে এখানে কিছু হয় না।’ দাদাও মুখের উপর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তা হলে আমার ভাই কোনও দিন উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলবে না।’’’
দু’বছর খারাপ অভিজ্ঞতা হওয়ার পর শামি কখনও উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলার কথা ভাবেননি। বেছে নিয়েছিলেন বাংলাকে। এই রাজ্যের হয়ে ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ইডেনে অসমের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। সেই থেকেই শামি বাংলার। এ বার বিশ্বকাপে সাফল্যের পর অবশ্য উত্তরপ্রদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন তিনি। তাঁর গ্রামে একটা ছোট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর শামিকে বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy