(বাঁ দিকে) রোহিত শর্মা। রুতুরাজ গায়কোয়াড় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সম্প্রতি ক্রিকেটারদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে কি না, জানা নেই। তবে বলের রং লাল হলেই থমকে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। দেশে বা বিদেশে, সেরা একাদশ বা দ্বিতীয় একাদশ, পরিস্থিতি একই। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ় হেরেছেন কয়েক দিন আগে। এ বার রুতুরাজ গায়কোয়াড়, লোকেশ রাহুলদের ভারত ‘এ’ দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বেসরকারি টেস্ট সিরিজ় ০-২ ব্যবধানে হারল অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের কাছে।
লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয়দের চুনকাম অব্যাহত। নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের পর রোহিত, বিরাটদের পরিবর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ক্রিকেট মহলের একাংশে। কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সাই সুদর্শনদের পারফরম্যান্স এমনই যে আপাতত সেই আলোচনা বন্ধ রাখা যেতে পারে। কারা হতে পারেন রোহিত, কোহলিদের যোগ্য পরিবর্ত? রুতুরাজের দলের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ। দ্বিতীয় বেসরকারি টেস্টেও ভারতীয় ব্যাটারেরা ব্যর্থ। বোলারেরা তা-ও কিছুটা লড়াই করলেন। ফলাফল ভারতীয় দলের ৬ উইকেটে হার।
প্রথম বেসরকারি টেস্টে ৭ উইকেটে হেরেছিলেন রুতুরাজেরা। পরিস্থিতি সামলাতে এবং আসন্ন বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয় লোকেশ রাহুল এবং ধ্রুব জুরেলকে। মেলবোর্নের ২২ গজে দুই ব্যাটারের চার ইনিংসে মোট সংগ্রহ ১৬২ রান। যদিও তাতে অভিজ্ঞ রাহুলের অবদান ১৪। তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জুরেল দু’ইনিংসেই অর্ধশতরান করেছেন। তাঁর সংগ্রহ ১৪৮। ভারতের প্রথম একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়া আবার কঠিন। ঋষভ পন্থ ভাল ফর্মে রয়েছেন। তবে শুধু ব্যাটার হিসাবে খেলতেই পারেন জুরেল। ভারত ‘এ’ দলের আর কোনও ব্যাটার ৫০ রানের ইনিংস খেলতে পারেননি। জুরেলের দু’ইনিংসের পর ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ইনিংসে তনুশ কোটিয়ানের ৪৪। তিনি আবার প্রথম ইনিংসে করেছিলেন শূন্য।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৯ রান করার পর অস্ট্রেলিয়ার জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৬৮ রান। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করেছে তারা। স্যাম কোনস্টাসের অপরাজিত ৭৩ এবং বিউ ওয়েবস্টেরের অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস জয় এনে দেয় আয়োজকদের। অথচ ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলীয়েরা। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের তৈরি করে দেওয়া সুবিধা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি রুতুরাজেরা। বিপজ্জনক মনে হওয়া খলিল আহমেদকে ৪ ওভারের বেশি ব্যবহারই করলেন না অধিনায়ক! অথচ প্রভাব তৈরি করতে না পারা তানুশকে টানা বল করালেন রুতুরাজ।
লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কোনও কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। ব্যাটারেরা শট নির্বাচনে ভুল করছেন। ধৈর্য ধরে ব্যাট করার মানসিকতা দেখাতে পারছেন না। ভাল বল-রান করার বলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। বোলারেরা পিচ কাজে লাগাতে পারছেন না। সঠিক লেংথ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। রোহিতের মতো রুতুরাজের নেতৃত্বেও বিচক্ষণতার অভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রথম বেসরকারি টেস্টের দু’ইনিংসে ভারতীয়েরা করেছিলেন যথাক্রমে ১০৭ এবং ৩১২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচের দু’ইনিংসে সংগ্রহ ১৬১ এবং ২২৯। প্রথম ইনিংসের রান তুলে ২০ ওভারের ক্রিকেটও জেতা যায় না। আর মেলবোর্নের দ্বিতীয় ইনিংসের রান করে এক দিনের ক্রিকেট জেতা যায় না। বরং ম্যাকের দ্বিতীয় ইনিংসের রান কিছুটা ভদ্রস্থ। তবু লাল বলের ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই নয়। সেই ইনিংসও তৈরি হয়ে ছিল দুই ব্যাটারের জন্য সুদর্শনের ১০৩ এবং দেবদত্ত পাড়িক্কলের ৮৮ রানের সুবাদে। দু’টি ম্যাচ মিলিয়ে ভারতের চারটি ইনিংস বলার মতো। বোলারদের ক্ষেত্রেও ছবিটা খুব সুখকর নয়। মুকেশ কুমার এবং কৃষ্ণ ছাড়া কেউ ভরসা দিতে পারেননি সে ভাবে। অথচ ম্যাকে বা মেলবোর্নের ২২ গজ বোলারদের বধ্যভূমি ছিল না।
শুক্রবার সূর্যকুমার যাদবের দল টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬১ রানে হারিয়ে সিরিজ় শুরু করেছে। সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতকে এখনও অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। লাল বলের ক্রিকেটে ন্যূনতম প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না। রোহিত, কোহিলরা পারেননি। রুতুরাজ, ঈশ্বরণ, রাহুলেরাও পারলেন না।
পুনশ্চ: ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টেস্ট ক্রমতালিকায় ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এটুকুই আপাতত স্বস্তির। যদিও বিষয়টা গম্ভীর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy