তামিম ইকবাল। —ফাইল চিত্র।
গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবসর প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনায় এখনও আলোড়ন চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে। ১১ বছর আগের এক ঘটনার সঙ্গেও মিল পাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু কেন ঘটল এমন ঘটনা?
তামিম অবসর নিতে পারেন, তা জানতেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। যদিও অনেকের দাবি, তামিমের সিদ্ধান্ত হঠাৎ ছিল না। কিছু দিন ধরে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসেন পাপন এবং কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে নাকি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তামিমের। শোনা যাচ্ছে, তাঁর ফিটনেসে খুশি ছিলেন না বাংলাদেশের কোচ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকে তামিমের পিঠে ব্যথা ছিল। সম্পূর্ণ ফিট না থাকলেও তামিম আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে চান। মনে করা হচ্ছে যে কোনও কারণেই হোক তিনি জায়গা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তামিম নিজে জানিয়েছিলেন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচে মাঠে নেমে নিজের ফিটনেস পরখ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি খেলার জন্য তৈরি। তবে পিঠে ব্যথা রয়েছে। এমনিতে সমস্যা হচ্ছে না। জিম করার সময় ব্যথা লাগছে। আমি আগের থেকে ভাল আছি। ১০০ শতাংশ ফিট নই। এমন কিছু করতে চাই না, যার জন্য দলকে ভুগতে হবে। যে কোনও ব্যক্তির থেকে দল আগে। খেলার জন্য আমি প্রস্তুত। ম্যাচের মধ্যে তেমন কিছু মনে হলে মেডিক্যাল স্টাফদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’
তাঁর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানতে পারেননি কোচ। সরাসরি নালিশ করেছিলেন বোর্ড সভাপতিকে। সূত্রের খবর, ম্যাচের আগের দিন প্রায় ৩০ মিনিট বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছিলেন ক্ষুব্ধ কোচ। নাজমুলও তামিমের কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন, “এটা তো পাড়ার ম্যাচ নয়! এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সিরিজ় শুরুর আগের দিন অধিনায়ক বলছে, সে ফিট নয়। কিন্তু খেলবে। খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো কোনও পেশাদার ক্রিকেটারের আচরণ হতে পারে না!”
তামিমের খেলা নিয়ে আপত্তি ছিল বোর্ড সভাপতি এবং কোচের। কিন্তু তাঁদের আপত্তিতে কান না দিয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন তামিম। করেছিলেন ১৩ রান। সূত্রের খবর, পিঠের ব্যথা নিয়ে মাঠে নেমে ব্যর্থ তামিমকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন বোর্ড সভাপতি এবং কোচ। তার পরই অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তামিম।
তা হলে কেন ফেরানো হল তামিমকে? কেনই বা হস্তক্ষেপ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? উঠে আসছে দু’টি কারণ। প্রথমত, অধিনায়ক হিসাবে তামিমের গ্রহণযোগ্যতা শাকিব আল হাসানের তুলনায় অন্য ক্রিকেটারদের কাছে বেশি। সতীর্থদের সঙ্গে তামিম অনেক সহজ ভাবে মিশতে পারেন। নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তামিম অনেক বেশি উদার। এক দিনের বিশ্বকাপের আগে নতুন করে অস্থিরতা চাইছেন না বোর্ড কর্তাদের একাংশ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ক্রিকেটে খান পরিবারের প্রভাব। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক আক্রম খান তামিমের কাকা। আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল সম্পর্কে তামিমের দাদা। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের আগে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচক আক্রম। তামিমকে দল থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। তৎকালীন বোর্ড সভাপতি মুস্তাফা কামালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও মধুর ছিল না। সে বারও দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছিলেন আক্রমের সঙ্গে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইস্তফা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন আক্রম। বাংলাদেশের ক্রিকেট একই রকম ঘটনার সাক্ষী থাকল আরও এক বার। সেই খান পরিবার এবং বোর্ড সভাপতির দ্বন্দ্ব। শেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
হাসিনা ক্রিকেট ভক্ত। সময় পেলে খেলাও দেখেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। শুক্রবার সকালে মধ্যহ্নভোজের আমন্ত্রণ পাঠিয়ে তামিমকে ডেকেছিলেন হাসিনা। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি মোর্তাজা এবং বোর্ডের সভাপতি নাজমুলকেও ডেকেছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনার পর তামিমকে অবসর প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নেন তামিম।
মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মোর্তাজার নাম উঠলেও, তিনি সব কৃতিত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। মোর্তাজা জানিয়েছিলেন, তিনি শুধু বার্তাবাহকের কাজ করেছেন। অবসর নেওয়া তামিমের সঙ্গে শুধু তিনিই যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। প্রাক্তন অধিনায়ক এবং সাংসদ কাকে, কী বার্তা দিয়েছিলেন? তাতেই কি ছিল সমস্যা সমাধানের বীজ? বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy