Advertisement
E-Paper

রোহিত নন, এই দলের বস্ তিনিই! বোঝালেন ‘গুরু’ গম্ভীর, ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভ-গ্রেগ বিতর্কের আঁচ

ভারতীয় ক্রিকেটে কোচ বনাম অধিনায়কের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। রোহিত শর্মা এবং গৌতম গম্ভীরের সম্পর্ক কি সে দিকেই গড়াতে চলেছে? তিনিই যে দলের ‘বস্’, সিডনি টেস্টের আগের দিন তা বুঝিয়ে দিলেন গম্ভীর।

cricket

(বাঁ দিকে) গৌতম গম্ভীর। রোহিত শর্মা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৮
Share
Save

শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিডনি টেস্ট। তবে সেটা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের আর তেমন আগ্রহ নেই। কারণ, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নয়, ‘আসল ম্যাচ’ হচ্ছে সিডনি ক্রিকেট মাঠের বাউন্ডারির বাইরে। সেখানে যুযুধান প্রতিপক্ষ রোহিত শর্মা এবং গৌতম গম্ভীর। ভারতীয় দলের অধিনায়ক এবং কোচ। ক্রিকেটের অন্যতম বলশালী এবং ক্ষমতাশালী দলের দুই প্রধান পদ।

এবং বৃহস্পতিবার সিডনি টেস্টের আগের দিন কোচ গম্ভীর বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনিই এই দলের আসল ‘বস্’! যে ভাবে, যে রোখা ভঙ্গিমায় এবং যে ভঙ্গিতে তিনি প্রাক্‌-ম্যাচ সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, তাতে বিষয়টা স্পষ্ট। টেস্ট ম্যাচের আগের দিন দলের অধিনায়ক সাংবাদিক বৈঠক করবেন বা কোচ-অধিনায়ক যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করবেন, ভারতীয় ক্রিকেটে সাম্প্রতিক কালে এটাই দস্তুর। বৃহস্পতিবার রোহিতকে ছাড়াই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন গম্ভীর। আর সেই সাংবাদিক বৈঠকে বুঝিয়েছেন, তিনি একাই একশো! বুঝিয়েছেন, অধিনায়ক বলেই রোহিত পঞ্চম টেস্টের দলে ‘অটোম্যাটিক চয়েস’ নন। কারণ, হেড কোচ বলেছেন, ‘‘আমরা কাল (শুক্রবার) ম্যাচের আগে চূড়ান্ত দল বেছে নেব।’’ প্রসঙ্গত, সিরিজে ২-১ এগিয়ে-থাকা অস্ট্রেলিয়া বৃহস্পতিবারেই সিডনি টেস্টের চূড়ান্ত একাদশ জানিয়ে দিয়েছে।

গম্ভীরকে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম প্রশ্নও করেছিল, “ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে তো অধিনায়কের আসার প্রথা রয়েছে। তা হলে আপনি কেন? রোহিতের কী হল?” কিছুটা বাঁকা চোখে তাকিয়ে গম্ভীরের জবাব, “কে বলেছে অধিনায়কের আসা প্রথা? কোচ এসেছে। আমার মনে হয় সেটাই যথেষ্ট। রোহিত একদম ঠিক আছে। আগে পিচ দেখব, তার পর কাল প্রথম দল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে রোহিত সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘টুমরো’ শব্দটির আগে কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়েছেন গম্ভীর। অনেকের মতে যা ‘ইঙ্গিতবাহী’। এর মধ্যেই ‘খবর’ ছড়িয়েছে, সিডনি টেস্টে খেলবেন না রোহিত। তাঁর জায়গায় অধিনায়কত্ব করবেন সিরিজ়ে সফলতম ভারতীয় ক্রিকেটার (এবং পার্‌থ টেস্টে অধিনায়কত্ব করা) জসপ্রীত বুমরাহ।

Sydney Cricket Ground

সিডনির গ্যালারিতে আলোচনায় গম্ভীর, বুমরাহ এবং রোহিত। ছবি: এক্স।

বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ়ে প্রথম থেকেই ঘটনার ঘনঘটা। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল মাঠের মধ্যে। ক্রিকেটার-ক্রিকেটারে ঠোকাঠুকিতে (মহম্মদ সিরাজ়-ট্রাভিস হেড, বিরাট কোহলি-স্যাম কনস্টাস)। কিন্তু সিরিজ়ের শেষ লগ্নে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে ভারতীয় সাজঘরের অন্দরে। যা থেকে অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায়ের কথা। জ়িম্বাবোয়ে সিরিজ় থেকে এ ভাবেই যার সূত্রপাত।

কোচ না অধিনায়ক, দলের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে অতীতে বহু বারই বিতর্ক হয়েছে। যে কোনও দলগত খেলাতেই এই ঘটনা বিরল নয়। কোচ এবং অধিনায়ক দু’জনেই খ্যাতনামী হলে খটাখটি লাগাই স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রেই কোচ দলের চালিকাশক্তি হন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অধিনায়কের হাতে থাকে দলের ‘রিমোট কন্ট্রোল’। সিডনিতে বৃহস্পতিবার গম্ভীর বুঝিয়ে দিয়েছেন, অধিনায়ক যিনিই হোন, যত ওজনদারই হোন, তাঁকে টপকে কথা বলতে পারবেন না। গম্ভীরের রকমসকম দেখে অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘বিসিসিআই বোধ হয় ভুলে গিয়েছিল, উনি এর ঠিক আগেই লোকসভার সাংসদ ছিলেন।’’

বৃহস্পতিবার এসসিজি-র প্রেস বক্সে ভারতের সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার আগে হঠাৎই চাঞ্চল্য ছড়ায়। দু’টি চেয়ার রাখা ছিল সেখানে। শেষ বার এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ব্রিসবেনে। রোহিতের পাশের চেয়ারে এসে বসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। জল্পনা তৈরি হয়, তা হলে কি রোহিতের পাশে বসে কোহলি অবসর ঘোষণা করবেন? নাকি দু’জনেই একসঙ্গে অবসরের সিদ্ধান্ত জানাবেন? গুঞ্জন চলাকালীনই জানা গেল, ‘গুরু’ গম্ভীর আসছেন সাংবাদিক বৈঠকে। মিনিট দশেক পরে তাঁর প্রবেশ। পরনে ফুলহাতা নীল সোয়েট শার্ট। ভেতরে ল্যাভেন্ডার রঙের টি-শার্ট। গালে হালকা দাড়ি। চুল পাট করে আঁচড়ানো।

এর পরের ১৫ মিনিট গম্ভীর যা বলেছেন, তা একসঙ্গে অনেকগুলি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল। সাজঘরের অন্দরে ক্রিকেটারদের তাঁর ‘ধমক’ নিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে যেমন উত্তর দিয়েছেন, তেমনই নাম না-করে ঋষভ পন্থের খামখেয়ালি শট খেলার প্রবণতা নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন। অন্তত দু’বার ‘অনেস্টি’ (সততা) শব্দটি উল্লেখ করেছেন ভারতের কোচ। সাজঘরের পরিবেশ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, “ওগুলো তো স্রেফ প্রতিবেদন (রিপোর্ট)। কোনওটাই সত্যি নয়। ও সব রিপোর্টের উত্তর দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। কিছু সত্যি কথার আদানপ্রদান অবশ্যই হয়েছে (দেয়ার আর সাম অনেস্ট ওয়ার্ডস, অল আই ক্যান সে)। সততা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যদি আপনি উঁচুতে উঠতে চান।” এর পরে দলের ‘পালাবদল’ প্রসঙ্গে বলেছেন, “একটা কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই। যত দিন সাজঘরে সৎ মানুষেরা রয়েছে, তত দিন ভারতীয় ক্রিকেট নিরাপদ হাতে থাকবে। যে কোনও পালাবদলের (ট্রানজ়িশন) ক্ষেত্রেই সততা গুরুত্বপূর্ণ।”

গম্ভীরের ‘অনেস্টি’ শব্দপ্রয়োগের একাধিক ব্যাখ্যাও শুরু হয়েছে। প্রথমত, তিনি কি আশঙ্কা করছেন যে সাজঘরের সব কিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই? কেউ কেউ ভিতরের খবর বাইরে পাচার করে দিচ্ছে? দলের মধ্যে ফাটল তৈরি হয়েছে? তাঁদের পরস্পরের বিশ্বাসের বাতাবরণ নেই বলেই কি একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে ম্যাচ জেতাতে পারছেন না?

কোচ এবং অধিনায়কের ঝামেলা ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন নয়। সেই তালিকার এর অব্যবহিত আগেরটি হল অনিল কুম্বলে বনাম কোহলি। কুম্বলের শৃঙ্খলাপরায়ণ মানসিকতার সঙ্গে তৎকালীন অধিনায়ক কোহলি মানিয়ে নিতে পারেননি। দলের অন্দরেই বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। পাশে কয়েক জনকে পেয়ে যাওয়ায় সেই ‘বিদ্রোহ’ প্রকাশ্যে চলে আসে। কুম্বলে কোনও দিন পাঁকের মধ্যে সাঁতার কাটা পছন্দ করেননি। তিনি নীরবে সরে যান।

তবে সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় নিঃসন্দেহে সৌরভ বনাম গ্রেগ। দেশকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলা অধিনায়ক সৌরভ তত দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল নেতার তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু দলে তাঁর ‘কর্তৃত্ব’ মেনে নিতে পারেননি গ্রেগ। তিনি কোচ থাকাকালীন একাধিক বার সৌরভ দল থেকে বাদ পড়েছেন, ফিরেছেন, আবার বাদ পড়েছেন। দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার বদলে এই দ্বন্দ্ব একটা সময়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। শুধু সৌরভ নন, গোটা দলই তখন গ্রেগ এবং তাঁর কোচিংয়ের ধরন নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। তবে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘকালীন ছায়া ফেলে গিয়েছিল।

ফুটবলেও কোচ-অধিনায়ক ঝামেলার উদাহরণ রয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে ডেভিড বেকহ্যামের গোলমাল সর্বজনবিদিত। ফার্গুসন আত্মজীবনীতেও লিখেছেন, রাগের চোটে সাজঘরে পড়ে-থাকা বুটের স্তূপে লাথি মেরেছিলেন। একটি বুট উড়ে গিয়ে বেকহ্যামের কপালে লাগে এবং রক্তপাত হয়। সেই ঘটনার কয়েক মাস পরেই বেকহ্যামের ম্যান ইউ ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান। বছর দেড়েক আগে এরিক টেন হ্যাগের সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গোলমাল হয়েছে। দল ছাড়ার পর প্রকাশ্যে প্রাক্তন ‘বস্’ টেন হ্যাগ সম্পর্কে বিষোদ্গার করেছিলেন পর্তুগিজ তারকা।

রোহিত এমনিতে শান্তিপ্রিয় বলেই পরিচিত। কিন্তু অধিনায়ক হলে দলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। রোহিতও তার ব্যতিক্রম নন। সহজে ম্যাচ ছাড়তে নারাজ মুম্বই ঘরানার ক্রিকেটার। তাই পর পর তিনটে ক্যাচ ফেললে প্রকাশ্যেই তাঁর ধমক খান তারকা ব্যাটার যশস্বী জয়সোয়াল। ভুবনেশ্বর কুমার ক্যাচ ফস্কানোয় হতাশায় অধিনায়ক রোহিত বলে লাথি মেরে বসেন।

কিন্তু গম্ভীরও নরমসরম নন। উল্টে ‘রগচটা’ বলেই পরিচিত। ক্রিকেটমাঠে গোলমালে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস তাঁর বরং খানিক বেশিই আছে। তিনি রাহুল দ্রাবিড় ঘরানার নন যে, অধিনায়ক যা বলবেন শুনে নেবেন। গম্ভীরের রক্তে আগ্রাসন। তাঁকে হাসতে কম দেখা যায় (কেকেআরের মালিক শাহরুখ খানও হেড কোচকে হাসতে দেখে স্বস্তি পেয়েছিলেন)। নিজের টিমের সদস্য নবীন উল হককে বাঁচাতে যেমন তিনি কোহলির সঙ্গে মাঠের মধ্যে ঝগড়া করতে পারেন, তেমনই কোহলিকে বাঁচাতে মিচেল স্টার্ক বা প্যাট কামিন্সের চোখে চোখ রাখতেও দু’সেকেন্ড ভাবেন না। ফলে তিনি যে দলেরও ‘নিয়ন্ত্রণ’ চাইবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী!

Gautam Gambhir Rohit Sharma BGT 2024-25 India vs Australia Sourav Ganguly

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।