চিরস্মরণীয়: ২০০১-এর ইডেন। সৌরভ-হরভজনের উৎসব। ফাইল চিত্র।
তাঁর নিজের জন্মদিন ছিল ৩ জুলাই। বৃহস্পতিবার গেল ধোনির জন্মদিন। আজ, শুক্রবার ৮ জুলাই তাঁর প্রিয় অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পঞ্চাশে পা দিচ্ছেন। লন্ডনে থাকলেও দাদার বার্থডে পার্টিতে যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ইংল্যান্ড থেকে ফোনে প্রিয় দাদাকে নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সেই একই রকম আবেগপূর্ণ হরভজন সিংহ।
দাদা ৫০: ইংল্যান্ডে থাকলেও আমি এই মুহূর্তে সেন্ট্রাল লন্ডনে নেই। লন্ডন থেকে একটু দূরে আছি, তাই দাদার সঙ্গে দেখা হয়নি। শুভেচ্ছা তো নিশ্চয়ই জানাব। ভেরি হ্যাপি বার্থডে দাদা। সব সময়ই প্রার্থনা করি, আমার প্রিয় ক্যাপ্টেন যেন সব সময় ভাল থাকে।
দাদার জন্মদিন উৎসব: শুনলাম, সচিন গিয়েছে। খুব ভাল লাগছে শুনে। আমাদের সেই ব্যাচটার অনেকেই এখন ইংল্যান্ডে রয়েছে। রাহুল (দ্রাবিড়) তো রয়েছে টিমের সঙ্গে। সবাই মিলে পার্টি করাই যেত। কিন্তু যে যার মতো ব্যস্ত আছে নিশ্চয়ই। দাদার পার্টিতে সচিন গিয়েছে, আরও কয়েক জন হয়তো থাকবে। আমার মেয়েরও জন্মদিন রয়েছে সামনে। তাই এক্ষুনি ঘর ছেড়ে যেতে পারছি না। তবে দাদাকে পঞ্চাশতম জন্মদিনে জানাই অনেক, অনেক শুভেচ্ছা। চিরকাল তুমি আমাদের সমর্থন করেছ, কখনও তা ভুলব না দাদা।
দাদার অবদান: ভারতীয় ক্রিকেট খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল যখন দাদা অধিনায়ক হয়। বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে টেনে তোলার ব্যাপারে দাদার খুব বড় ভূমিকা ছিল। ম্যাচ গড়াপেটার কালো অধ্যায়ের ধাক্কায় তখন ক্রিকেটের প্রতি জনতার আস্থা চূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে আবার তাঁদের মন জয় করা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু দাদা অধিনায়ক হিসেবে সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছিল। আমার মতে ভারতীয় ক্রিকেটে সেটাই সব চেয়ে বড় অবদান ওঁর।
ডব্লিউ ডব্লিউ এফ নয়: দাদার নেতৃত্বে আমরা আবার মানুষকে বোঝাতে পেরেছিলাম যে, ক্রিকেট ডব্লিউ ডব্লিউ এফ নয়। সব কিছু আগে থেকে ঠিক করা থাকে না আর মাঠে নেমে কতগুলো চরিত্র শুধু খেলার ভান করে না। যে ধরনের ক্রিকেট আমরা খেলেছিলাম, তার মধ্যে সম্ভবত অন্য রকম আবেগ ছিল। মানুষ হারানো আস্থা ফিরে পেয়েছিল।
বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা: দাদার নেতৃত্বে আমরা বিশ্বাস ফেরাতে পেরেছিলাম। মানুষ আবার মাঠে ভিড় করতে শুরু করে। ক্রিকেট খেলার প্রতি যে বিতরাগ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা সরে যেতে শুরু করল। তার পর যখন আমরা বড় বড় সব ম্যাচ, সিরিজ় জিততে শুরু করলাম, আবেগের বিস্ফোরণটা বাড়তে থাকল।
টার্নিং পয়েন্ট ইডেন: কলকাতায় স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়াকে হারানোটা টার্নিং পয়েন্ট। ওখান থেকে অসাধারণ একটা যাত্রা শুরু হয়ে গেল। যে রকম ভালবাসা আমরা সেই সময়ে পেয়েছি, যে রকম সমর্থন পেয়েছি, তা ভোলার নয়। আর সমস্ত আবেগ দিয়ে, সব কিছু উজাড় করে দিয়ে, দুর্দান্ত আগ্রাসন দিয়ে দাদা দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটকে কঠিন সময় থেকে বার করে এনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের মতো নতুন মুখদের প্রতি আস্থা দেখিয়েছে, ভরসা রেখেছে। তাতে নতুন টিম ইন্ডিয়া গড়ে উঠেছে। একটা সাম্রাজ্য গড়ে দিয়ে গিয়েছে দাদা, পরে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
অধিনায়কের প্রিয় সারথি: ব্যক্তিগত ভাবে আমার ক্রিকেট জীবনে দাদার প্রভাবের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার ক্রিকেট নতুন জীবনই পেয়েছিল দাদার নেতৃত্বে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাঠে ওই সিরিজ়ে ক’জন আমার উপরে আস্থা রাখতে পেরেছিল? দাদা কিন্তু পাশে ছিল। সেই সিরিজ়ে ছিল, সারাজীবনই থেকেছে। আমরা দু’জনে একসঙ্গে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। আমার আর দাদার মনোভাব অনেকটা এক রকম ছিল। মাঠের মধ্যে আমরা দু’জনই আগ্রাসী ক্রিকেটার ছিলাম, জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতাম না। আমরা কখনও লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালাইনি।
অধিনায়ক সৌরভের মন্ত্র: দাদাকে দেখতাম একটা জিনিস সব সময় বলত— দেশের হয়ে খেলতে নেমেছ, যা-ই ঘটুক না কেন লড়ে যাও। আমরা ওই টিমের ক্রিকেটারেরা এই মন্ত্রেই খেলে গিয়েছি। দেশের হয়ে খেলতে নেমে জান দিতেও প্রস্তুত ছিল সবাই। আর আমাদের সাহসী অধিনায়ক পথ দেখিয়েছিল সকলকে। তাই তোমার টিম ইন্ডিয়ার এক সৈন্য হিসেবে আবার বলি, হ্যাপি বার্থডে দাদা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy