চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রেকর্ড ৩৫১ রান করেও হেরেছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক জশ ইংলিস। ম্যাচ জেতানো ১২০ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৩৫২ রান তাড়া করতে নামার আগেই তিনি নাকি জানতেন যে ম্যাচ জিতবেন তাঁরা। ইংলিসের জন্ম ইংল্যান্ডে। তাদেরই হারিয়েছেন তিনি। জন্মভূমিকে হারিয়ে কি আক্ষেপ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারের?
ইংল্যান্ডের লিডসে জন্মেছেন ইংলিস। ১৪ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান তিনি। তাঁর অনেক আত্মীয় এখনও থাকেন ইংল্যান্ডে। তাঁদের সঙ্গে কথাও হয় তাঁর। সেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই নায়ক ইংলিস। তাতে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে তিনি বলেন, “অতীতের কথা মনে রাখতে চাই না। এখন আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। তাই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিজের ১০০ শতাংশ দিই। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। এখন আমি অস্ট্রেলিয়ারই। ইংল্যান্ডে থাকা আত্মীয়দের কাছ থেকে অনেক মেসেজ পেয়েছি। ওরা আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।”
২০১৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা শুরু করেছেন ইংলিস। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেন তিনি। বিশ্বের অনেক লিগেই খেলেন ইংলিস। বিগ ব্যাশ লিগে তিনি পার্থ স্কর্চার্সের হয়ে খেলেন। কাউন্টি ক্রিকেটে লিস্টারশায়ারের হয়ে দেখা যায় ইংলিসকে। ব্যাটারের পাশাপাশি উইকেটরক্ষকও তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়েও উইকেটের পিছনে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ২০২২ সাল থেকে খেলছেন ইংলিস। সাদা বলের ক্রিকেটেই মূলত দেখা যায় তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখনও পর্যন্ত ২৮টি এক দিনের ম্যাচ ও ২৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ইলিংস। চলতি বছরই টেস্টে অভিষেক হয়েছে তাঁর। খেলেছেন দু’টি টেস্ট। জাতীয় দলে কম খেললেও এর মধ্যেই এক দিন ও টি-টোয়েন্টি দু’টি ফরম্যাটেই অধিনায়কত্ব করেছেন ইংলিস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি ফরম্যাটেই শতরানের কীর্তি করে ফেলেছেন ইংলিস। এক দিনের ক্রিকেটে শতরান এসেছে শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন:
ইংলিস জানতেন, ইংল্যান্ড ৩৫১ রান করলেও তাঁরা ম্যাচ জিতবেন। তার প্রধান কারণ শিশির। লাহোরের মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির পড়েছে। ফলে বল ধরতে সমস্যা হয়েছে বোলারদের। শিশিরের বিষয় মাথায় ছিল ইংলিসদের। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “আমরা জানতাম ইংল্যান্ড কঠিন দল। ওরা বড় রান করবে। কিন্তু ওরা ৩৫১ রান করার পরেও আমাদের উপর চাপ ছিল না। আগের দিন অনুশীলনেই দেখেছিলাম, রাতে কতটা শিশির পড়ছে। ওই পরিস্থিতিতে বল ধরা সহজ ছিল না। তাই জানতাম, ব্যাট করা সহজ হবে। আমরা শুধু জুটি গড়ার চেষ্টা করেছি।”
ইংলিস ও অ্যালেক্স ক্যারের মধ্যে ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটি হয়েছে। সেই জুটিই ইংল্যান্ডকে পিছিয়ে দিয়েছে। দুই উইকেটরক্ষক একসঙ্গে ব্যাট করার সময় নিজেদের মধ্যে কী বলছিলেন। ইংলিস বলেন, “খুব বেশি কথা বলিনি। যা বলার, খেলার আগে বলেছি। ব্যাট করার সময় দু’-একটা কথা হচ্ছিল। আমরা স্কোরবোর্ডের দিকে বিশেষ তাকাচ্ছিলাম না। শুধু রান করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।”
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৩ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ব্যাটিং অর্ডারে ম্যাক্সওয়েল নীচের দিকে থাকায় চিন্তা কম ছিল ইংলিসদের। সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার। তিনি বলেন, “আমরা জানতাম, উইকেট পড়লেও রান করে যেতে হবে। কারণ, ম্যাক্সওয়েল তখনও ব্যাট করতে নামেনি। ও কী করতে পারে সেটা জানতাম। তাই কখনওই রান তোলার গতি কমাইনি। সেটাই সুবিধা করে দিয়েছে। পরে ম্যাক্সওয়েল নেমে নিজের কাজটা করেছে।”
এ বারের প্রতিযোগিতায় প্রথম দলের পাঁচ ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। ফলে তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ কঠিন। সেই পরিস্থিতিতে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারানোয় আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়বে ইংলিসদের। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচ জিততে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে তারা।