Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
boris becker

জেলে দু’বার খুনের হুমকি পেয়েছেন, আট মাসের বন্দিজীবনের কথা জানালেন বেকার

বেকার জানিয়েছেন, জেলের কুঠুরির দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অবশিষ্ট বলে কিছু থাকে না। কুঠুরির মধ্যে জীবনের সব থেকে একাকী মুহূর্তগুলো কাটিয়েছেন। জেলের রাতগুলোকে বর্ণনা করেছেন নৃশংস বলে।

আট মাস কারাবাসের পর গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছেন বরিস বেকার।

আট মাস কারাবাসের পর গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছেন বরিস বেকার। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৪৬
Share: Save:

সম্পত্তি গোপন করা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে আড়াই বছরের জেল হয়েছিল বরিস বেকারের। ৫৫ বছরের প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় আট মাস জেলে কাটানোর পর গত সপ্তাহে ছাড়া পেয়েছেন। মুক্ত হওয়ার পর জানিয়েছেন জেল জীবনের অভিজ্ঞতা।

আট মাসের জেল জীবনে দু’বার খুনের হুমকি পেয়েছেন বেকার। নিরাপত্তার জন্য নির্ভর করতেন অন্য দুই সহবন্দির উপর। জার্মানির একটি সংবাদ মাধ্যমকে প্রায় তিন ঘণ্টার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বেকার। তিনি বলেছেন, ‘‘জন নামে এক ব্যক্তির একাধিক খুনের দায়ে ২৫ বছরের জেল হয়েছে। সে আমার সঙ্গে একই জেলে ছিল। টাকা না দিলে আমার ক্ষতি করার হুমকি দিত জন। আমাকে মেরেও ফেলার চেষ্টা করেছিল। সে সময় আমার চিৎকার শুনে অন্য ১০ জন বন্দি জীবন রক্ষা করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন আমার ‘রক্তের ভাই’।’’ জেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে রক্তের সম্পর্কের কথা বলেছেন প্রাক্তন টেনিস তারকা।

জন তাঁর পরিচয় জানত না বলে জানিয়েছেন বেকার। তিনি বলেছেন, ‘‘পরের দিন পরিচয় জানার পর আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিল। আমি ওর অনুরোধ ফিরিয়ে দিতেই পারতাম। কিন্তু জেলের লন্ড্রিতে দেখা হলে ও মাটিতে শুয়ে আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমি ওকে পায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, আমি ওকে শ্রদ্ধা করি।’’ জেলে যাঁরা তাঁর জীবন বাঁচিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আজীবন যোগাযোগ রাখতে চান বেকার। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন আপনি এক সঙ্গে বাঁচার চেষ্টা করবেন, তখন আপনাকে অন্যদের সঙ্গে একত্রিত হতেই হবে। জেলে আমাদের সেটা প্রয়োজন হয়েছিল।’’

জেলের কুঠুরির দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ সারা জীবন মনে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বেকার। প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় বলেছেন, ‘‘কুঠুরির দরজা বন্ধ হয়ে গেলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। কুঠুরির মধ্যে জীবনের সব থেকে একাকী মুহূর্তগুলো কাটিয়েছি। রাতগুলো ছিল নৃশংস। রাতে আত্মহত্যার চেষ্টা বা নিজের ক্ষতি করার আর্তনাদ শোনা যায় জেলের ভিতর। সবাই শপথবাক্য পাঠ করলেও কেউ মেনে চলে না।’’

জেল জীবনে রাতে কেমন ঘুম হত? ঘুমতে পারতেন না বেকার। তাঁর কথায় জেলের ভিতরটা অত্যন্ত নোংরা এবং বিপজ্জনক। বেকার বলেছেন, ‘‘খুনি, শিশু নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী সকলের সঙ্গে থাকতে হয়। আপনি ভাবতেও পারবেন না পরিবেশ সম্পর্কে।’’ ছ’টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী জানিয়েছেন, ‘‘ফোন করার একটা আন্তর্জাতিক কার্ড পাওয়ার জন্যও জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাহায্য নিতে হয়েছিল। আমি জার্মানিতে থাকা ৮৭ বছরের মা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম।’’

প্রথম কিছু দিন অসহ্য লাগলেও পরে পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। ৩০ জন বন্দিকে বেকার ইংরেজি এবং অঙ্ক করাতেন। পরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে অক্সফোর্ডের কাছে কম নিরাপত্তার হান্টারকম্ব জেলে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। উল্লেখ্য, প্রথমে বেকারকে রাখা হয়েছিল ইংল্যান্ডের কুখ্যাত ওয়ান্ডসওয়ার্থ জেলে। বেকারের অভিযোগ, ‘‘হান্টারকম্ব জেলে আমাকে বন্ধু য়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, গভর্নর অনুমতি দেননি। লিভারপুল ম্যানেজারের নিরাপত্তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত। আমার আর এক বন্ধু জার্মানির টেলিভিশন সাংবাদিক জোহানেস কার্নারও আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। ওকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’

বেকার ব্রিটেনের নাগরিক না হওয়ায় ১২ মাসের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হিসাবে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানোর জন্যই জেল থেকে ছাড়া হয়েছে। বেকারের এক বন্ধু একটি ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া করে তাঁকে ইংল্যান্ড থেকে জার্মানিতে নিয়ে এসেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি কয়েক দিন ছিলেন এক ব্রিটিশ দম্পতির বাড়িতে। তাঁদের বাড়িতে আট মাস পর প্রথম বিয়ার পান করেছেন। বেকার বলেছেন, ‘‘বিশ্বাস করুন ওটাই ছিল আমার জীবনের সেরা বিয়ার।’’

আগামী দিনে কোথায় থাকবেন? কী করবেন? এখনও কিছু ঠিক করেননি বেকার। তবে জানিয়েছেন জার্মানিতে থাকার সম্ভাবনা কম। বেকার বলেছেন, ‘‘হয়তো ইউরোপেই আর থাকব না। মায়ামিতে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। দুবাইয়েও থাকতে পারি। দুবাই আমার অন্যতম প্রিয় জায়গা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

boris becker Tennis Jail London Germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy