মহড়া: ‘ফুটবলার’ জ়াম্পা। বৃহস্পতিবার রাজকোটে। এপি
ছেলেটাকে খুব কাছ থেকে দেখেও অসাধারণ কিছু মনে হবে না। লাগবে কলেজে পা দেওয়া কোনও কিশোর হয়তো। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই যুবকই এখন সাড়া ফেলে দিয়েছেন। গত এক বছরের মধ্যে ওয়ান ডে-তে চার বার কোহালিকে আউট করে। টি-টোয়েন্টি ধরলে সংখ্যাটা ছয়। ভারতের মাটিতে কোহালিকে থামানোর জন্য অ্যাডাম জ়াম্পাই এখন অ্যারন ফিঞ্চদের সব চেয়ে বড় তাস।
জ়াম্পাকে তৈরি করে দেওয়ার পিছনে যে মানুষটা, তিনি অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে কোনও দিনই দাগ কাটতে পারেননি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে ছাপ ফেলে যাচ্ছেন প্রতিদিন।
জানা যাচ্ছে, কোহালির উইকেট একা জ়াম্পাই তুলছেন না। মাঠের বাইরে থেকে সেই উইকেট নেওয়ার পিছনে রয়েছেন এই প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারও। শ্রীধরন শ্রীরাম। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বোলিং পরামর্শদাতা।
জ়াম্পাকে কী পরামর্শ দিয়েছেন শ্রীরাম? অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে যা ভেসে উঠছে, তা এ রকম:
অস্ট্রেলিয়ায় জ়াম্পা বেশির ভাগ বল শর্ট অব লেংথে ফেলতেন। গুগলিটা বেশি দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু শ্রীরাম পরামর্শ দেন, ভারতীয় পিচে লেংথ বদলাতে হবে। ভারতের মাটিতে বল করতে হলে ব্যাটসম্যানের আরও সামনে বল ফেলতে হবে, ফ্রন্টফুটে খেলাতে হবে বেশি। গুগলির চেয়েও জোর দিতে হবে লেগস্পিন করার উপরে। আর মাঝে মাঝে কাজে লাগাতে হবে ‘স্লাইডার’। অর্থাৎ জোরের উপরে বলটাকে ভিতরে আনতে হবে। জানা যাচ্ছে, যে ছ’বার কোহালিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন জ়াম্পা, তার মধ্যে বার দুয়েকই ঘাতক বল ছিল এই ‘স্লাইডার’।
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে এই রকম ঈর্ষণীয় রেকর্ড আপনার। কোহালির বিরুদ্ধে বল করার সময় নিজের গেমপ্ল্যান কী থাকে? বৃহস্পতিবার সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে নেট প্র্যাক্টিসে নামার আগে ২৭ বছর বয়সি লেগস্পিনার সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘‘কোহালির বিরুদ্ধে আমি সব সময় আগ্রাসী বোলিং করতে ভালবাসি। জানি, এক বার ওকে মাথায় চড়তে দিলে ও আমাকে ছাড়বে না। তাই শুরু থেকেই কোহালির বিরুদ্ধে আক্রমণের রাস্তা নিই। আমার লক্ষ্যই থাকে ওকে মাথায় চড়তে না দেওয়া।’’
নিজের দক্ষতায় আস্থা রাখার পাশাপাশি কোহালিকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতেও ভুলছেন না এই লেগস্পিনার। জ়াম্পার কথায়, ‘‘আমার বিরুদ্ধে একশোর উপরে স্ট্রাইক রেট রেখে ব্যাট করে কোহালি। ওকে বল করা জীবনের অন্যতম কঠিন কাজ। প্রথম ম্যাচে আমি ওকে ফিরিয়েছি। দ্বিতীয় ম্যাচে ও নিশ্চয়ই তেতে থাকবে। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। দেখা যাক, কী হয়।’’
তিনি কোহালিকে প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছেন। কিন্তু ভারত অধিনায়ক কি তাঁকে সেটা ফিরিয়ে দিচ্ছেন? মুম্বই ম্যাচের পরে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয় বলেছেন, ‘‘কোহালি কিন্তু জ়াম্পাকে ওর প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছে না। আর সেটা না দেওয়ার মূল্য চোকাতে হয়েছে প্রথম ম্যাচে।’’ আপনি কি স্টিভের সঙ্গে একমত? প্রশ্ন শুনে জ়াম্পার জবাব, ‘‘আমার মনে হয় স্টিভ ওয় ঠিক বলেননি। এটা খুবই ভুল ধারণা। এই তো শুনলাম, সিরিজ শুরুর আগে কোহালি বলেছে, গত বছরে অস্ট্রেলীয় বোলারদের মধ্যে আমাকেই সব চেয়ে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। তা হলে? কোহালির কাছ থেকে এ রকম প্রশংসা
শুনলেও দারুণ লাগে।’’
কোহালিকে বার চারেক ফেরানোর পরেও অবশ্য জ়াম্পা নিজের বোলিং নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। বলছেন, ‘‘জানি আমি খুব দারুণ দক্ষতাসম্পন্ন রিস্ট স্পিনার নই। কুলদীপ যাদব বা রশিদ খান আমার চেয়ে অনেক ভাল বোলার। ওদের বল বোঝা খুব কঠিন। আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে।’’ আপনার প্লাস পয়েন্ট তা হলে কী? জ়াম্পার জবাব, ‘‘আমার চারিত্রিক দৃঢ়তা আর মানসিকতা। ভারতের মাটিতে, কোহালিদের মতো ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বল করতে গেলে যার খুব প্রয়োজন আছে।’’
নেটে যতটা সময় জ়াম্পা বল করছিলেন, আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে কড়া নজর রাখছিলেন শ্রীরাম। শুক্রবারের রাজকোট হয়তো জবাব দিয়ে যাবে, জ়াম্পা-শ্রীরাম জুটি বাজিমাত করবে, না কোহালির ব্যাট সব জবাব দিয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy