স্বপ্নপূরণ: ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জয়ের পরে অচিন্ত্য। টুইটার
ছ’মাস আগে নীরজ চোপড়া, মীরাবাই চানুরা যখন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা, রুপোর পদক জিতছিলেন, তখন তিনি পাটিয়ালার জাতীয় শিবিরে। ভারোত্তোলনে মীরাবাইয়ের রুপো পাওয়ার দিনে জাতীয় শিবিরেই আনন্দোৎসবে নেচেছিলেন হাওড়ার ছেলে অচিন্ত্য শিউলি। ধূলাগড়ের দেউলপুর গ্রামের সেই ছেলে শুক্রবার রাতে তাসখন্দে চলতি কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতে গর্বিত করেছেন দেশকে।
সোনা জয়ের পথে স্ন্যাচিংয়ে ১৪৩ কেজি তোলেন এই বঙ্গসন্তান। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তোলেন ১৭৩ কেজি। সব মিলিয়ে ৩১৬ কেজি ওজন তোলেন অচিন্ত্য। এই বিভাগে রুপো পেয়েছে মালয়েশিয়া, ব্রোঞ্জ গিয়েছে শ্রীলঙ্কার দখলে। শনিবার সকালে তাসখন্দ থেকে অচিন্ত্য বলছিলেন, ‘‘আমার এই সোনা জয় কোচ বিজয় শর্মা ও মীরাবাই দিদিকে উৎসর্গ করছি। কোচ আমাকে টেকনিকের দিক দিয়ে যেমন উন্নত করেছেন, তেমনই চানু দিদি অলিম্পিক্স থেকে ফেরার পরে জাতীয় শিবিরে নানা প্রেরণাদায়ক গল্প শুনিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তাসখন্ডে রওনা হওয়ার আগের দিনও বলেছিল, ভয় পাবি না। ডরকে আগে জিত হ্যায়।’’
অচিন্ত্যর পাখির চোখ এখন কমনওয়েল গেমস ও এশিয়ান গেমস। বলেছেন ‘‘আত্মতৃপ্ত হওয়ার কোনও জায়গা নেই। আমাকে কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস থেকেও আগামী বছর সোনা আনতে হবে। তার পরের লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্সে পদক জেতা। বাঙালিদেরও যে শক্তি আছে, তা দেখাতে হবে!’’ ১৯ বছরের ভারোত্তোলক আরও বলেছেন, ‘‘টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যেতে পারিনি এশিয়ান পর্বের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হওয়ায়। প্যারিসে নামতে হবেই।’’
অচিন্ত্যের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে কঠোর জীবন সংগ্রামের গল্প। বাবা জগৎ শিউলি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৩ সালে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রয়াত হন। অচিন্ত্যের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। দাদা অলোক তখন কলেজে। স্বপ্ন দেখছেন ভারোত্তোলন থেকে দেশের হয়ে পদক আনবেন। দাদার হাত ধরেই গ্রামের কোচ অষ্টম দাসের কাছে ভারত্তোলনের হাতেখড়ি। অচিন্ত্য বলেছেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের বাড়িতে রোজ খাওয়া জুটত না। তা সত্ত্বেও অনুশীলন বন্ধ করিনি। আমি, মা ও দাদা শাড়িতে জরি বসানোর কাজ করে যে সামান্য অর্থ পেতাম, তাতেই সংসার চলত।’’
২০১৩ সালের শেষে জাতীয় যুব প্রতিযোগিতায় অচিন্ত্যকে দেখে পছন্দ হয় সার্ভিসেস কর্তাদের। তখন থেকেই সেনাবাহিনীর ভাতা পান অচিন্ত্য। ২০১৫ থেকে রয়েছেন পাটিয়ালার জাতীয় শিবিরে। যুব এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এর আগে রুপো পেয়েছিলেন অচিন্ত্য। বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার দেশে ফিরব। তার পরেই প্রস্তুতি শুরু করব। দিনে আট ঘণ্টা অনুশীলন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
অচিন্ত্যর দাদা অলোক এখন খেলা ছেড়ে ঠিকা চুক্তিতে কাজ করেন। ভাইয়ের সাফল্যের দিনে তাঁর গলায় ক্ষোভের সুর। বলছিলেন, ‘‘অভাবকে হারিয়ে আমি না পারলেও ভাই সেই যুদ্ধে জিতেছে। হরিয়ানা-সহ অন্য রাজ্যে এ রকম সাফল্য আনলে সরকার পুরস্কার দেয়। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯-এ তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন, তার পরে যুব বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে রুপো বা এই সাফল্যের পরে কেউ খোঁজই নেননি। গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল ও। দ্বিতীয় হওয়া ছেলেটিকে তাঁর রাজ্য কিন্তু পুরস্কৃত করেছে। আমাদের স্থানীয় সাংসদ বা বিধায়করা তো চেনেনই না অচিন্ত্য শিউলিকে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy