Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

short story: মায়াডোর

মায়ের নাছোড় জেদের কাছে ডাম্বো এই দিনগুলোয় হেরে যায়, তার পরেও প্রত্যাঘাত করতে ছাড়ে না পরাজিত ডাম্বো।

ছবি: বৈশালী সরকার।

ছবি: বৈশালী সরকার।

অভিনন্দন সরকার

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৫৮
Share
Save

অভিরাজের এই এক নতুন যন্ত্রণা হয়েছে।

আজকাল মাঝে মাঝেই তার মনে হচ্ছে, জীবনটা আসলে কয়েকটা স্থিরচিত্রের যোগফল ছাড়া আর কিছু নয়।

একটা স্থিরচিত্র থেকে আর একটায় শুধু আজীবন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় মানুষ। এক একটা ছবি যেন এক একটা স্টেশন, আর দুর্দান্ত গতির রেলগাড়ির মতো ছুটে চলেছি আমরা। অভিরাজের ধারণা, এই গতি একমুখী। প্রবল গতিতে অথবা ধীর লয়ে চলতেই পারো, কিন্তু এগিয়ে তোমায় যেতেই হবে, ফেরার পথ নেই।

এই মুহূর্তে বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে তন্দ্রাচ্ছন্ন অভিরাজের চেতনা জুড়ে একটার পর একটা স্থিরচিত্র যেন স্লাইড শো-র মতো সরে
সরে যাচ্ছে।

প্রথম স্থিরচিত্রে বাবার কোলে ছোট্ট অভিরাজ, পাশে হাসিমুখে মা। তার অন্নপ্রাশনের ছবি কি? কোণ ছিঁড়ে গেছে, সাদা-কালো সেই ছবিতে হলুদ ছোপ ফেলেছে সময়, তবু কত উজ্জ্বল! পরের ছবিতে সে দেখল স্কুলের পোশাক পরা অভিরাজকে, সাদা কালো ছবিতে রং বোঝা যায় না তবু মনে হচ্ছে নেভি ব্লু হাফ প্যান্ট, সাদা শার্ট... সেই দিনটা তার স্কুলের প্রথম দিন।

পরের ছবিতে হালকা ইস্টম্যান কালারের ছোঁয়া। একঝাঁক ছেলেমেয়ে ডিমনা লেকের ধারে। ওই তো বাঁ দিকের শেষ লাইনে একদম ধার ঘেঁষে দাঁড়ানো লম্বা ছেলেটাই তো অভিরাজ, কে তুলেছিল ছবিটা? মনে পড়ার আগেই অভিরাজের ট্রেন এগিয়ে গেল পরের ছবির স্টেশনে।

সাদা শার্টের ওপর কালো বর্ডার দেওয়া সাদা সোয়েটার গায়ে অভিরাজ, ব্যাট হাতে মন দিয়ে শ্যাডো প্র্যাকটিস করছে, দু’চোখে ঘোর মগ্নতা। কখন তোলা ছবি? যে-বছর প্রথম সি এ বি আন্ডার নাইন্টিন টিমে ঢুকল, সেই বছরই কি? মনে করতে পারল না অভিরাজ।

আর একটা স্থিরচিত্র ভেসে উঠল চোখের সামনে। কারা যেন পাতলা ফিনফিনে কাপড় ধরে রেখেছে যুগলের মাথায়, আর সেই কাপড়ের নীচে সদ্যবিবাহিত অভিরাজ আর জুঁই, লজ্জা-জড়ানো চোখে প্রথমবার জুঁই দেখছে বরবেশী অভিরাজকে।

পরের ছবিটা সম্ভবত অভিরাজের জীবনের সেরা ছবি। বছর দশেক আগে বাংলা ক্রিকেট টিমের দলজিৎ সিং ট্রোফি জয়ের দিন। প্রকাণ্ড ট্রোফি হাতে সেই জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর অভিরাজ সেন।

ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল অভিরাজের। তত ক্ষণে পরের ছবিটা তার চোখের সামনে এসে গেছে খুব দ্রুত।

হাইওয়ের পাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। কোনও অ্যাক্সিডেন্টে সেই গাড়ির ডান দিকটা বেঁকেচুরে গেছে একেবারে, কাচ ভেঙে ছড়িয়ে আছে চারপাশে। অভিরাজ চুপিসাড়ে ছবিটার ভিতরে ঢুকে পড়ল। তার পর দুরুদুরু বুকে চালকের আসনে ছেতরে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহটার মুখের দিকে তাকাল সে।

ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসল অভিরাজ।

নার্সিং হোমটাকে বেশ অভিজাত বলা যায়, পাশের কাউচে এই সময় জুঁইয়ের থাকার কথা। থাকার কথা, অথচ নেই। অভিরাজ চিন্তিত হল না। ভিজ়িটিং আওয়ার শুরু হতে চলেছে, জুঁই খুব সম্ভব বাইরের লাউঞ্জে আছে। সে চায় না সবার সঙ্গে দেখা করুক অভিরাজ, অনেক লোককে বাইরের লবি থেকেই বিদায় করে দেয় সে।

বিছানা থেকে নেমে অভিরাজ বুঝল আজ শরীর বেশ কিছুটা ঝরঝরে লাগছে তার। সে পায়ে পায়ে মস্ত বড় কাচের জানলাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ছ’তলায় তার কেবিনের প্রায় মুখোমুখি অতিকায় পাইথনের মতো একটা ফ্লাইওভার। বড় রাস্তার অন্য পারে একটা বিখ্যাত শপিং মলের সামনের সিঁড়িতে ইতিউতি জমে উঠছে ছেলেমেয়েদের ভিড়। বিকেল হওয়ার আগের সাদাটে মেরে যাওয়া সূর্য আলো ছড়াচ্ছে রীতিমতো। আজ কি খুব গরম? মার্চ-এপ্রিল মাসে বেশি গরম পড়লে সাধারণত বিকেলের দিকে কালবৈশাখী বলে একটা ব্যাপার হত তাদের ছোটবেলায়। এখনও কি সে রকম কিছুর অস্তিত্ব আছে? পিঙ্গল আকাশের দিকে তাকিয়ে
ভাবল অভিরাজ।

কাচের জানলার এপাশে এসির শাসন, বাইরের ধুলোবালির প্রবেশ নিষেধ।

একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল তার। সে বুঝল পিঠের ব্যথাটা হালকা মালুম দিচ্ছে, হতাশায় দু’দিকে মাথা নাড়ল অভিরাজ। নাঃ! অ্যাক্সিডেন্টটা তার সর্বনাশ করে দিয়েছে। শরীর যা গেছে তা গেছেই, মূল সমস্যাটা হল প্রবল হেড ইনজুরির অভিঘাতে একেবারে ভেবলে গেছে সে।

চেনা মানুষকে চিনতে সময় লাগছে, চিনলেও নাম মনে আসছে না।

সবচেয়ে বড় কথা ইমোশনগুলো গুলিয়ে ঘেঁটে একশা হয়ে গেছে। হাসির কথা শুনলে চোখ ফেটে জল আসে, দুঃখের খবরে পেট গুলিয়ে হাসি পাচ্ছে। অভিরাজ বুঝছে ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু শুধরে নিতেই বা পারছে কোথায়!

কে জানে পুরোপুরি সেরে উঠতে আরও কত দিন লাগবে!

চিন্তাভাবনারই কি খেই আছে কোনও? এই মুহূর্তে মস্ত বড় ফ্লাইওভারটাকে দেখে মনে হচ্ছে হঠাৎ ভূমিকম্প হলে পিলার সমেত ওই প্রকাণ্ড পাইথন ধীরে ধীরে তার নার্সিং হোমের এই ছোট্ট কেবিনে সেঁধিয়ে যাবে।

শপিং মলের সিঁড়িতে দুটো ছেলেমেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। খোলা ভেঙে ছেলেটার মুখে বাদাম তুলে দিচ্ছে মেয়েটা, প্রতি বার ছেলেটি নিয়ম করে মেয়েটির আঙুল কামড়ে দিচ্ছে। বিরক্তিকর ব্যাপার। তবু বার বার মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠছে। যেন খাবার মুখে নিতে গিয়ে আঙুল কামড়ে দেওয়ার থেকে বড় কৌতুকের বিষয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।

অভিরাজের মনে এলোমেলো চিন্তা আসছে। এই ছেলেমেয়ে দুটো কি সারাজীবন এক সঙ্গে থাকবে? নাকি কোনও তুচ্ছ কারণে আগামী কালই তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যাবে? শুধু এই সিঁড়িতে বসে বাদাম খাওয়ার দৃশ্যটা একটা স্থিরচিত্র হয়ে থেকে যাবে দু’জনের জীবনে।

আসলে প্রেমের গল্পগুলো এমনই হয়। অবিরাম দু’টি স্থিরচিত্র পরস্পর মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক জন বিখ্যাত মানুষ বলে গেছেন, গল্পটার থেমে যাওয়ার সময়ের ওপর নির্ভর করে সেটা মিলনের গল্প নাকি পুরোদস্তুর বিয়োগান্তক।

উটকো চিন্তাগুলো অভিরাজকে হয়তো আরও পাকে পাকে বেঁধে ফেলত, কিন্তু তখুনি তার কেবিনের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পিছন ফিরে তাকাল সে।

জুঁই ঘরে ঢুকল, জুঁইয়ের পিছু পিছু আর একটি মেয়ে। কালো লেগিংস এর ওপর ধূসর কুর্তি। মুখের জমিতে কাটাকুটি খেলছে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা।

মেয়েটি অভিরাজের দিকে চোখ তুলে চাইল, পোশাকের সঙ্গে মানানসই সেই মায়াকাড়া চোখের দৃষ্টিতে এক নিরালা বিষাদযাপন।

জুঁই স্বাভাবিক স্বরে অভিরাজকে বলল, “দেখো তো, চিনতে পারছ?”

অভিরাজ সহসা উত্তর দিল না, অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে, অস্ফুটে বিড়বিড় করছে কী সব।

এক সময় হঠাৎ আলো জ্বলেছে অভিরাজের চোখের তারায়, সে বলে উঠল, “মনে পড়েছে। এক বার মাঠে একটা ক্যাচ ধরেছিলাম। আর আপনি গ্যালারিতে লাফিয়ে উঠেছিলেন আনন্দে!”

জুঁই কাঁধে হাত রেখে অভিরাজকে থামিয়ে দিল।

অ্যাক্সিডেন্টটার পর আজ প্রায় তিন বছর কেটে গেছে। কিডনির কর্মক্ষমতা কমে গেছে অনেকটা, প্রেশার ফ্লাকচুয়েট করছে ঘন ঘন, মাঝে মাঝেই চোখে অন্ধকার দেখে দুমদাম পড়ে যাচ্ছিল অভিরাজ। ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান গম্ভীর মুখে হসপিটালাইজ়েশন সাজেস্ট করেছিলেন, একটা থরো চেক আপ আর মনিটরিং দরকার। তাই তাকে এই নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছে জুঁই।

অ্যাক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়েছিল অভিরাজ। তবে মাথাটা গোলমাল পাকাচ্ছে তার চেয়েও বেশি।

আর লোকের আনাগোনারও তো বিরাম নেই। ক্রিকেটমহলের হাজার লোকজন, তার ওপর রিটায়ারমেন্টের পর নিজের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি খুলেছে অভিরাজ, সেখানকার ছেলেপুলে এসে হাজির হচ্ছে হুটহাট। ফেসবুকে অভিরাজ সেনের একটা ফ্যান ক্লাব আছে। হাজার বিশেক সদস্য। সেই গ্রুপের দুই অ্যাডমিনের উৎসাহ দেখার মতো, প্রায় মেডিক্যাল বুলেটিন দেওয়ার ঢংয়ে তারা অভিরাজের শরীরের খুঁটিনাটি আপলোড করছে তাদের পেজে।

এত দিন হয়ে গেল, সেরে উঠতে একটু বেশিই সময় নিচ্ছে অভিরাজ, মানুষটাকে কি একটু একা থাকতে দেওয়া যায় না?

জুঁই যথাসম্ভব আড়াল করছে স্বামীকে, সাইকায়াট্রিস্ট ডক্টর ঘোষ বলেছেন অভিরাজের এই মানসিক অবস্থায় তার আরও বিশ্রাম দরকার।

অপরিচিত, অর্ধপরিচিত লোকেদের তাই অভিরাজের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না জুঁই। কিন্তু এই মেয়েকে জুঁই ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। এই মেয়েকে অপরিচিত বলা যায় না, অর্ধপরিচিতও নয়। অবাক ব্যাপার হলেও সত্যি যে, এক বারও দেখা না হলেও এই মেয়ের সঙ্গে সম্ভবত জুঁই-অভিরাজের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তাই এক কথায় জুঁই মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে অভিরাজের কেবিনে, কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি, অভিরাজ মেয়েটিকে চিনতে পর্যন্ত পারছে না।

জুঁই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল, “কিছু মনে কোরো না। অ্যাক্সিডেন্টের ট্রমার পর থেকে ওর একটু...”

মেয়েটি জুঁইয়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, “আমি জানি, আমি ওঁর ব্যাপারে সব জানি। যা দেখছি, উনি তো এখন ভালই আছেন। কারণ ক্যাচ ধরার ঘটনাটা কিন্তু ভুল নয়।”

মেয়েটি এ বার অভিরাজের কাছে এসে দাঁড়াল, “আপনি জানেন, ও কোথায় আছে?”

প্রশ্নটা শুনে অভিরাজ সরাসরি মেয়েটির চোখে চোখ রাখল।

মেয়েটি আবার বলল, “আমি জানি, ওর খবর একমাত্র আপনার কাছে এলে পাওয়া যাবে। বলুন প্লিজ়, আমার খুব দরকার।”

জুঁই দেখল মিটিমিটি হাসছে অভিরাজ। মেয়েটি এবার কাতর কণ্ঠে প্রায় প্রার্থনার স্বরে বলল, “আমায় আজ তার কাছে পৌঁছতেই হবে দাদা, প্লিজ় বলুন, সে কি সত্যিই আছে এই শহরে, নাকি...”

মেয়েটি থেমে গিয়েছে। কেবিন জুড়ে অস্বস্তিকর থমথমে নীরবতা। অভিরাজ জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল। ছেলেমেয়ে দুটো চলে গেছে। সিঁড়ির সেই অংশটা যেন তাদের অভাবে ধু ধু করছে ফাঁকা।

অভিরাজ সেই অলস বিকেল গলায় ভরে বলল, “এইটাই সবচেয়ে মজার ব্যাপার। অবিরাম ভালবাসার মানুষের কাছে পৌঁছনোর পথ খুঁজে চলাটাই তো জীবন। তবে তার জন্য আগে ভালবাসার কাছে নিজেকে ছোট্টটি করে ফেলতে হবে। পুরোপুরি বিলিয়ে দিয়ে, নিজেকে নিঃস্ব করতে করতে একটা বিন্দুর মতো ক্ষুদ্র করে ফেলতে পারলেই কিস্তিমাত। দুটো বিন্দুকে যে সরলরেখা যোগ করে সেইটাই তো শর্টেস্ট রুট, নাকি!”

এবার মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়াল অভিরাজ। এই মুহূর্তে আর একটা স্থিরচিত্র দেখছে সে, চারতলা বাড়ির সমান উচ্চতা থেকে নেমে আসা ক্রিকেট বলটা সে তালুবন্দি করতেই গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে এই মেয়েটিই।

আর মেয়েটি স্পষ্ট দেখতে পেল ছ’ফুট দু ইঞ্চি উচ্চতার বেঙ্গল টিমের প্রাক্তন ফাস্ট বোলারের চোখের ওপর হালকা আর্দ্রতার ছোঁয়া।

একটু সামনে ঝুঁকে গাঢ় স্বরে অভিরাজ বলল, “সে জানত এক দিন তুমি আসবে। আমি জানি সে কোথায়। সবটা বলব তোমায়। তবে তার আগে তুমি আমায় বলো, এটা কি হালকা হাসির মিষ্টি প্রেম? নাকি চোখের জলের গ্রিক ট্র্যাজেডি? কোথায় শেষ হবে এই গল্পটা?”

বছরখানেক আগে স্কুলবাসটা আবাসনের গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই ডাম্বো হাত তুলে জিনিসটা দেখাল মঞ্জীরাকে।

আবাসনে মোট পাঁচটা বিল্ডিং, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে ছ’টা করে ফ্লোর। বিল্ডিংগুলো থেকে বেরিয়ে শান বাঁধানো আঁকিবুঁকি পথ চলে গেছে বিভিন্ন দিকে। সেই পথের ধারে ধারে যত্ন করে ফোটানো ফুল, লতা আর বাহারি গাছের সারি। একটা মাঝারি সাইজ়ের কদম গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ডাম্বোর দিকে হাত নাড়ছিল মঞ্জীরা। তার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল।

অথচ ডাম্বো যে প্রথম বার এমনটা করল তাও নয়, তার পরও মঞ্জীরা সতর্ক হয়নি। আজকাল মাঝে মাঝেই এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটাচ্ছে ছেলেটা।

যে দিন ডাম্বোর মেজাজ-মর্জি ঠিকঠাক থাকবে, সে দিন সে ভোর থাকতে থাকতে নিজেই ঘুম থেকে উঠে বাথরুম সেরে নেবে। লক্ষ্মী ছেলের মতো চুকচুক করে খেয়ে নেবে হেল্থ ড্রিঙ্ক আর জ্যাম-ব্রেড। নিজে নিজেই ইউনিফর্ম পরে, চুল আঁচড়ে স্কুলের জন্য পুরোদস্তুর রেডি হয়ে নেবে সে।

কিন্তু এক একদিন ডাম্বো বেসুরে বাজতে শুরু করে। সেই দিনগুলোয় ডাম্বোকে বিছানা থেকে তুলতেই গলদঘর্ম হয়ে যায় মঞ্জীরা।

রীতিমতো টানা হ্যাঁচড়া করতে হয়, কয়েক বছর আগে তবু ঠিক ছিল, কিন্তু এখন ডাম্বো ক্লাস সিক্স, চেহারা বড়সড় হয়ে গেছে, তাকে টেনে তুলতে দম ধরে আসে মঞ্জীরার।

অনেক কাণ্ড করে যদি বা বাবুকে তোলা গেল, তখনও ব্রাশ দাঁতে নিয়ে গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ডাম্বো, বেরোতে চাইবে না বাথরুম থেকে, অনিচ্ছুক বালককে এক রকম টানতে টানতে এই সব দিনে স্কুলবাসে তুলে দিয়ে আসতে হয় মঞ্জীরাকে।

আজ তেমনই একটা দিন। মায়ের নাছোড় জেদের কাছে ডাম্বো এই দিনগুলোয় হেরে যায়, তার পরেও প্রত্যাঘাত করতে ছাড়ে না পরাজিত ডাম্বো।

কোনও দিন মায়ের চিরুনি, কোনও দিন হেয়ারক্লিপ, মোবাইল চার্জার... যেদিন যেটা পারে ব্যাগে করে নিয়ে হাঁটা দেয় ডাম্বো।

আজও ডাম্বো তেমনই একটা জিনিস নিয়ে স্কুল বাসে উঠেছে। মঞ্জীরা হাঁ হাঁ করে উঠল, ডাম্বোর অবশ্য তাতে বয়ে গেছে। সে বাসের জানলা দিয়ে জিভ ভেঙাল মাকে।

তিরিশ পেরিয়ে যাওয়া এক নারী স্কুলবাসের পিছনে ছুটছে, দৃশ্যটা মঞ্জীরার পছন্দ হল না। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল স্কুলবাস এগিয়ে যাচ্ছে বড় রাস্তার দিকে।

Novel

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।