লুজ় লং (বাঁ দিকে) ,জেসি ওয়েন্স (ডান জিকে)।
নাৎসি-শাসিত জার্মানিতে ১৯৩৬ অলিম্পিক্স। অ্যাডল্ফ হিটলারের সামনে সোনা জিতছেন এক কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাথলিট। যদি এমন ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ করার দুঃসাহস কেউ দেখিয়েও থাকেন, কী বলবেন তাঁর জার্মান প্রতিপক্ষকে? যিনি একে তো মহামান্য চ্যান্সেলরের সামনে সোনা হারিয়ে দ্বিতীয় হলেন, তার উপরে হিটলারের ফতোয়া উপেক্ষা করে তাঁর সামনেই বিজয়ী কৃষ্ণাঙ্গকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন! তাঁকে আলিঙ্গন করলেন। এবং, কী আস্পর্ধা, সেই কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাথলিটের সঙ্গে পাশাপাশি হেঁটে গোটা স্টেডিয়ামে ‘ল্যাপ অব অনার’ দিলেন।
কৃষ্ণাঙ্গ সেই অ্যাথলিট জেসি ওয়েন্স। ১৯৩৬-এর মহাবিতর্কিত বার্লিন অলিম্পিক্সে সাত দিনে চারটি সোনা জিতেছিলেন। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, লং জাম্প এবং ৪×১০০ মিটার রিলে। ৪৮ বছর লেগে গিয়েছিল এই রেকর্ড স্পর্শ করতে। ১৯৮৪-তে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ওয়েন্সের চারটি সোনার রেকর্ড স্পর্শ করেন কার্ল লুইস। চারটি সোনার রেকর্ড স্পর্শ করা গেলেও বার্লিনের সেই লং জাম্প ইভেন্টের জৌলুস ৮৮ বছর পরেও অমলিন। যেন চির-অমরত্ব লাভ করেছে। তার কারণ হিটলারের রক্তচক্ষুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁরই দেশের এক অ্যাথলিটের বাড়িয়ে দেওয়া অমর বন্ধুত্বের হাত।
সেই শ্বেতাঙ্গ অ্যাথলিটের নাম লুজ় লং। অলিম্পিক্সের মঞ্চে শ্বেতাঙ্গ জার্মানদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবেন বলে যাঁকে গোপন অস্ত্র হিসেবে লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং হিটলার। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে লং জাম্পে জার্মানির জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী হলেও যে কারণে লংকে অলিম্পিক্সের আগে খুব একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নামতে দেওয়া হয়নি। বার্লিন অলিম্পিক্সের ঠিক আগের বছরেই নিজের দেশে একটি প্রথম সারির অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ৪৫ মিনিটে চারটি বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন ওয়েন্স। তা-ও কী, না এই প্রতিযোগিতায় নামার পাঁচ দিন আগে ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির ডর্মিটরির সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যান তিনি। কোমরের নীচে ভয়ঙ্কর চোট লাগে। মনে হয়েছিল, প্রতিযোগিতায় যোগ দিতেই পারবেন না। ইভেন্টের দিন সকালেও স্টেডিয়ামে এসে গাড়ি থেকে ধরে ধরে নামাতে হয়েছিল। তিরিশ মিনিট ধরে ‘হট বাথ’ নেন, যদি কোনও উন্নতি হয়। শেষ পর্যন্ত চোট নিয়েই নামেন তিনি। এই প্রতিযোগিতাতেই লং জাম্পে সেই ঐতিহাসিক ৮.১৩ মিটার লাফান ওয়েন্স। তার আগে কেউ ৮ মিটারের বেড়া টপকাতে পারেননি। ২৫ বছর অক্ষত ছিল এই রেকর্ড। অলিম্পিক্সে এই রেকর্ড ভাঙেন বব বিমোন, ১৯৬৮-তে মেক্সিকো সিটিতে অবিশ্বাস্য ৮.৯০ মিটার লাফান। অলিম্পিক্সে এখনও এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেননি। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চ ধরলে ১৯৯১-এ নতুন রেকর্ড করেন মাইক পাওয়েল। ৮.৯৫ মিটার লাফান তিনি। সদ্যসমাপ্ত প্যারিস অলিম্পিক্সে, অর্থাৎ প্রায় ৯০ বছর পরেও ওয়েন্স ৮.১৩ মিটার লাফালে ষষ্ঠ হতেন। কিন্তু এ সব পরিসংখ্যান বা বহুকাল ধরে অক্ষত থাকার রেকর্ডের মহিমাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এক বন্ধুত্বের অমর কাহিনি।
কেউ কখনও শুনেছে, অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী অ্যাথলিট যোগ্যতা অর্জন পর্বে ছিটকে যাওয়ার মুখে! আর তিনি বিদায় নিলে যিনি সেই সোনাটা জিতবেন, তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তাঁকে টেনে তুলছেন! সেই মহাকাব্যিক লং জাম্পের ইভেন্টের ফাইনালে ওঠাই হত না জেসি ওয়েন্সের। দু’টো লাফ ফাউল করার পরে বাতিল হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে ছিলেন তিনি। তৃতীয় লাফ দিতে যাবেন, এবং এ বারও ফাউল হওয়া মানে পদকের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ। ঠিক তখনই কাঁধে হাত রাখলেন কেউ। ওয়েন্স ঘুরে তাকিয়ে আবিষ্কার করলেন এক দীর্ঘদেহী সুদর্শন জার্মানকে।
“হ্যালো, আমি লুজ় লং।” প্রথম আলাপেই অভিন্নহৃদয় বন্ধুর মতো ওয়েন্সকে তিনি বোঝাতে শুরু করলেন, “খানিকটা পিছন থেকে এই শেষ লাফটা দাও। তাতেও অনায়াসে কোয়ালিফাই করে যাবে। যদি কম দূরত্ব অতিক্রম করো, তাতে কী আর এমন ক্ষতি হবে? কোয়ালিফায়িং রাউন্ডে প্রথম না হলে কী এসে-যায়? আসল তো হচ্ছে ফাইনাল।” ভাবুন এক বার! কোথায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফাউল করছেন দেখে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভাববেন, ‘যাক গে গোল্লায় যাক। এ ব্যাটা লুটিয়ে পড়লেই তো আমি সোনাটা জিতব,’ তা নয়, সে সব ভুলে লং ছুটলেন ওয়েন্সের ভুল শুধরে দিয়ে তাঁকে প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনতে। পরবর্তী কালে ওয়েন্সের নিজের লেখা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লং তোয়ালে বিছিয়ে দিয়ে তাঁকে দেখিয়ে দেন, “এই স্পট থেকে লাফ দাও।” লংয়ের পরামর্শ মেনে তৃতীয় লাফ ঠিকমতো দিয়ে ওয়েন্স ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করেন। পরে কোনও কোনও গবেষক এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যে, সত্যিই এমন কথোপকথন ঘটেছিল কি না। তবে জেসি ওয়েন্সকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘রেস’-এও দেখানো হয়েছে, লং একটি জায়গায় তোয়ালে রেখে ওয়েন্সকে বোঝাচ্ছেন, কোথা থেকে লাফ দিতে হবে।
যোগ্যতা অর্জনের পরে সেই রাতে গেমস ভিলেজে লংয়ের ঘরে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ আড্ডা মারেন ওয়েন্স, নাৎসি গোয়েন্দাদের তোয়াক্কা না করে। পরের দিন লংকে হারিয়েই সোনা জিতলেন ওয়েন্স। অদৃষ্টের এমনই পরিহাস, যিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর ফাউল লাফ ঠিকঠাক করে দিয়ে তাঁকে ফাইনালের হাইওয়েতে তুলে দিলেন, তিনিই কিনা শেষ লাফটি দিতে গিয়ে ফাউল করে বসলেন। সোনা নিশ্চিত হওয়ার পরে ওয়েন্স সর্বশেষ জাম্পে ৮.০৬ মিটার লাফালেন, যে অলিম্পিক রেকর্ড ২৪ বছর অক্ষত থেকে যাবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সোনা হারানোর দুঃখ ভুলে গিয়ে যে ভাবে বালির মধ্যেই লং বুকে টেনে নিলেন ওয়েন্সকে, সেই ছবি চিরকালীন লোকগাথায় ঢুকে পড়ল। নিজের পায়ে কুড়ুল মেরে এত বড় ভুল করতে গেলাম কেন, ওয়েন্সকে যোগ্যতা অর্জন পর্বে মুখ থুবড়ে পড়তে দিলেই তো হত, এ সব অনুশোচনা লংকে গ্রাস করেনি। ওয়েন্স এবং লংয়ের সেই গোটা স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণের সাক্ষী থাকা এক লক্ষ দর্শক হাততালি দিতে থাকলেও হিটলার যে একেবারেই প্রসন্ন হননি, সেটাও সকলে দেখল। সংবাদমাধ্যমের গরিষ্ঠ অংশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে বর্ণবৈষম্যকে উপড়ে ফেলা যুগলবন্দিকে কুর্নিশ করলেও হিটলার উঠে দাঁড়াননি। হাততালি তো দেনইনি। এমনকি, ওয়েন্স পোডিয়ামে সোনা নিতে যখন দাঁড়ালেন, তখনও ছিলেন নির্বিকার। লং নাৎসি স্যালুট দিয়েছিলেন, ওয়েন্স সম্মান জানালেন আমেরিকার জাতীয় পতাকাকে।
কিন্তু তিনি, জেসি ওয়েন্স কি তাঁর দেশের শাসককুলের থেকেও খুব আন্তরিক অভ্যর্থনা পেলেন? নিউ ইয়র্কে তাঁকে নায়কের সংবর্ধনা দেওয়া হল ঠিকই, কিন্তু সেই সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য হোটেলে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা আটকে দিয়েছিলেন। বলা হয়, অন্য দরজা দিয়ে আসুন। যে দরজা নির্দিষ্ট করা ছিল শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য। চারটি সোনা জয় তাঁর নিজের দেশেও বর্ণবৈষম্যের কাঁটাতার উপড়ে ফেলতে পারল না দেখে আরও বেশি করে লুজ় লংয়ের কথা মনে পড়ল তাঁর।
অলিম্পিক্সের পর পরই কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে সুইডেনে একটি প্রতিযোগিতায় নামতে চাননি বলে নির্বাসিত করা হয় ওয়েন্সকে। আর্থিক টানাটানির মধ্যে মোটরবাইক চালকদের সঙ্গে ‘রেস’ দিতেন তিনি। কখনও সখনও উঠতি স্প্রিন্টারদের সঙ্গে দৌড় প্রদর্শনীতে যোগ দিয়ে পেট চালাতে হত। কখনও বা ঘোড়ার সঙ্গে দৌড়ে পাল্লা দিয়ে পয়সা তুলতেন। এক বার বলেছিলেন, “লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, এ সব কেন করি। কী করব? চারটে সোনার মেডেল তো আমার পেট ভরায় না।” বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ২০১৫ সালে ওয়েন্সের পরিবারের সদস্যদের হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানান। তখন বার্লিন অলিম্পিক্সে পদকজয়ী অন্য কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিযোগীদের পরিবারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার আগে পর্যন্ত দীর্ঘকাল ধরে আমেরিকা কখনও ওয়েন্সদের স্বীকৃতি দেয়নি।
সোনাজয়ীর যদি এই পরিণতি হয়, তা হলে হিটলারের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে তাঁকে অমান্য করার ‘পুরস্কার’ কী জুটতে পারে, আন্দাজ করাই যায়। আর হিটলার যে নিজের দেশের অ্যাথলিটদের থেকে কী চাইছেন, তা ১৯৩৬-এর অলিম্পিক্সের আগে থেকেই তো বুঝতে বাকি ছিল না লং বা তাঁর সতীর্থদের। প্রস্তুতি শিবিরে তাঁদের সামনে ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল: “ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগীরা, ভাল করে তৈরি হোন। আমাদের চ্যান্সেলরকে হতাশ না করার দায়িত্ব আপনাদের।” অলিম্পিক্সের কয়েক দিন পরেই লংয়ের বাড়িতে নাৎসি বাহিনীর বার্তা এল। তাঁর মা সেই ‘নোট’ খুলে দেখলেন তাতে লেখা আছে, ‘লুজ় লং বর্ণবৈষম্য সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এ ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতনতা আশা করা হয়েছিল তাঁর থেকে।’ লং এর পর থেকে আইনজীবী হিসেবে জীবনের খোঁজে নেমে পড়েন। ওয়েন্স ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের বংশধর। লং তুলনায় অন্য পৃথিবীতে বড় হয়েছেন। জার্মানির লাইপজ়িগে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাবা কার্ল চালাতেন ওষুধের দোকান। মা জোহানা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজি শিক্ষিকা। বিজ্ঞানী জাস্টাস ভন লাইবিগ, যিনি অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রির জনক বলে পরিচিত, তিনি ছিলেন লং-পরিবারের সদস্য।
অলিম্পিক্সের অনেক পরেও এই বৈপ্লবিক বন্ধুত্বের রেশ কাটল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লংকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলা হয়। প্রথমে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হয়নি। কিন্তু ১৯৪৩-এ সিসিলিতে পাঠানো হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এক মাস পরে স্ত্রী জিসেলাকে চিঠি পাঠান তিনি। স্ত্রী তখন দ্বিতীয় বার সন্তানসম্ভবা। চিঠিতে লিখেছিলেন, “পাহাড়ে ঘেরা মনোরম এক জায়গায় আছি। চার পাশে সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে।” পরের দিন তাঁর দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়। লং কোনও দিন সেই পুত্রের মুখ দেখতে পাননি। ১০ জুলাই, ১৯৪৩ ইটালিকে মুক্ত করার জন্য সিসিলিতে এসে পৌঁছয় মিত্রবাহিনী। চার দিন পরে বোমার ধাতব অংশ এসে আঘাত করে লংয়ের পায়ে। প্রবল রক্তপাতে মৃত্যু হয় তাঁর। এর কুড়ি দিন পরে জিসেলার কাছে বার্তা আসে, তাঁর স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাত বছর পরে সরকারি ভাবে জানা যায়, লুজ় লং সেই সিসিলির যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। স্বৈরাচারী শাসকের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে শান্তির সেরা দূত হয়ে ওঠা ক্রীড়াবিদ প্রাণ দিলেন কিনা যুদ্ধ করতে গিয়ে। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস!
ওয়েন্স যুদ্ধে যোগ দেননি, তাঁকে কেউ যোগ দিতে বলেওনি। ১৯৫০-এর পর থেকে ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে কাজ পেতে থাকেন। তখন কিছুটা অবস্থা ফেরে। ৬৬ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যাওয়ার আগে বন্ধু লুজ় লংয়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে ভোলেননি তিনি। যুদ্ধে রওনা হওয়ার আগে লং একটি চিঠি লেখেন ওয়েন্সকে। কী ছিল তাতে? শুধু এক কাতর আবেদন। “আমার মন বলছে, হয়তো এটাই শেষ চিঠি। যদি তা-ই হয় বন্ধু, তোমার কাছে একটাই শেষ প্রার্থনা। যুদ্ধ থেমে গেলে জার্মানিতে এক বার যেয়ো, আমার ছেলেকে খুঁজে বার কোরো। আর ওকে বোলো, যুদ্ধ আমাদের আলাদা করতে পারেনি। ওকে বুঝিয়ো, ইচ্ছা থাকলে সত্যিই অন্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।” এর চেয়ে মর্মস্পর্শী চিঠি কি কেউ কখনও লিখেছে?
হার্লেম গ্লোবট্রটার্স বাস্কেটবল দলের সঙ্গে ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে জার্মানি সফরে গিয়ে লংয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ওয়েন্স। লংয়ের ছেলে কাইকে তিনি নিজের প্রধান অতিথি করে নিয়ে আসেন হামবুর্গে খেলা দেখাতে। বার্লিন অলিম্পিক্সের বিখ্যাত ছবি ছিল ওয়েন্স ও লংয়ের। একই ভঙ্গিতে লংয়ের পুত্র কাইয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন ওয়েন্স। ১৯৬৪-তে একটি ছবিও হয়েছিল ‘জেসি ওয়েন্স রিটার্নস টু বার্লিন’। সেই ফিল্মেও কাইকে বলেছিলেন ওয়েন্স, তাঁর বাবা সাহায্য না করলে বার্লিন অলিম্পিক্সের লং জাম্পে কোয়ালিফাই করতে পারতেন না। পরবর্তী কালে লংয়ের রুপোর পদক নিলামে বিক্রি হয়েছিল ৪,৮৮,০০০ মার্কিন ডলারে। অকশন হাউস নাম দিয়েছিল ‘বিকন অব হোপ’। বাংলা করে বলা যেতে পারে ‘আশার আলো’।
জেসি ওয়েন্স ও লুজ় লংয়ের বন্ধুত্বের কাছাকাছিও আসতে পারে এমন কোনও কাহিনি কি খেলার মাঠে আর কখনও লেখা হয়েছে? বর্ণবিভেদ মুছে দেওয়ার বার্তা-সহ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো কিছু ছবি অবশ্যই আছে। যেমন পেলে ও ববি মুর। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল-ইংল্যান্ড রুদ্ধশ্বাস দ্বৈরথের পরে দু’জনে জার্সি বদলের সেই দৃশ্য। এই ঐতিহাসিক ম্যাচের ঠিক আগেই ব্রেসলেট চুরি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ববি মুর। কলম্বিয়ায় তাঁকে চার দিন ধরে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ববি মুর ছিলেন ১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক। তোলপাড় পড়ে যায় গোটা বিশ্বে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তাঁকে মেক্সিকো উড়ে গিয়ে ব্রাজিল ম্যাচ খেলার অনুমতি দেয় কলম্বিয়া প্রশাসন। ইংল্যান্ডের ‘দ্য টাইমস’ লিখেছিল, বর্ণবৈষম্যের সব সীমানা উড়িয়ে দিয়ে গেল এই একটি ছবি। জেসি ওয়েন্স যেমন বলেছিলেন, “আমি জীবনে অনেক সোনা জিতেছি, কিন্তু আসল ২৪ ক্যারাট সোনা হচ্ছে লুজ় লংয়ের বন্ধুত্ব,” তেমনই মুর এই ছবিটিকে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে গিয়েছেন। আর পেলে বলেছিলেন, ববি মুর প্রতিপক্ষ হয়েও ছিলেন তাঁর সেরা বন্ধু।
একই ধরনের একটি ছবি দেখা গিয়েছিল ক্রিকেটে। কাউন্টি খেলার সময় পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন ভিভিয়ান রিচার্ডস এবং ইয়ান বোথাম। বর্ণবৈষম্যকে সে দিন যুগপৎ ছক্কা হাঁকিয়ে বাউন্ডারির ও-পারে ফেলে দিয়েছিলেন দুই তারকা। অথবা সুনামির পরে শ্রীলঙ্কায় ছুটে গিয়ে মুথাইয়া মুরলীধরনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শেন ওয়ার্নের ত্রাণকার্যে নেমে পড়া। কে ভুলতে পারবে ২০০৫-এ অ্যাশেজ়ের নিষ্পত্তির পরে এজবাস্টনের সেই দৃশ্য? সিরিজ় হারের পরে পিচের উপর বসে পড়েছেন বিধ্বস্ত ব্রেট লি। আর জয়ের আনন্দ ভুলে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে টেনে তুলছেন বিজয়ী অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। বক্সিংয়ের দুই সেরা কিংবদন্তির একটি ফোনালাপের সন্ধান পাওয়া যায়, যা আরও চাঞ্চল্যকর। যিনি ফোন করেছিলেন, তাঁর নাম মহম্মদ আলি। যাঁকে করেছিলেন, তিনি জর্জ ফোরম্যান। দু’জনের ‘দ্য রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ লড়াই বিংশ শতকের সেরা ক্রীড়া দ্বৈরথের আখ্যা পেয়েছিল। ফেভারিট ফোরম্যানকে অষ্টম রাউন্ডে নক-আউট করে হেভিওয়েট খেতাব পুনরুদ্ধার করেন আলি। “জানি না কোথা থেকে আমার নম্বর পেয়েছিল। হঠাৎই একদিন ফোন করল। তার পর থেকে প্রায়ই আমাদের কথা হত,” আলি মারা যাওয়ার পর স্মৃতিচারণে বলেছিলেন ফোরম্যান। তবু বলতেই হবে, ওয়েন্স-লংয়ের মতো মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে চলতে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সঙ্গে আলি-ফোরম্যানের তুলনা করা যায় না। যা ফোনালাপ হয়েছে, সবই অবসরোত্তর জীবনে।
বরং টেনিসের দুই সম্রাজ্ঞীকে বলা যেতে পারে ওয়েন্স-লংয়ের বন্ধু্ত্বের মশালবাহক। সেই নাম দু’টো ক্রিস এভার্ট ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা— শুনে অনেকে মূর্ছা যেতে পারেন। এমনই যুযুধান প্রতিপক্ষ, আপসহীন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মানুষ তাঁদের চেনে। দু’জনের মধ্যে এমনই বন্ধুত্ব হয়ে যায় যে, ১৯৭৫-এ ফরাসি ওপেনে ফাইনালের আগে দু’জনে এক সঙ্গে বসে রোস্টেড চিকেন খেয়ে খেলতে নামেন। ১৯৮৪ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল দু’জনকে। প্যাট ক্যাশ বনাম ইভান লেন্ডল ফাইনাল গড়াল পাঁচ সেটে। ম্যাচ চলল প্রায় চার ঘণ্টা ধরে। এভার্টের খিদে পেয়ে যায়। নাভ্রাতিলোভার কাছে ব্যাগেল ছিল। দু’ভাগ করে এক টুকরো দিলেন এভার্টকে। কে বলবে, তাঁরা দু’জনে একটু পরে কোর্টে নেমে একে অন্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হবেন!
১৯৮৬-তে নাভ্রাতিলোভা যাবেন তাঁর দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে। ইতিমধ্যেই অনেক বার দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে যে, তিনি বড্ড বেশি আমেরিকা-ঘেঁষা। নিজের দেশকে মনে রাখেননি। অনেকটা লিয়োনেল মেসিকে বিশ্বকাপ জেতার আগে পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় যে বদনাম শুনতে হত, তেমন। তার উপরে নাভ্রাতিলোভা তখন আমেরিকার হয়ে ফেডারেশন কাপে খেলে ফেলেছেন। তাতে বিদ্বেষ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। নাভ্রাতিলোভা ধরলেন এভার্টকে, “তুমি কি আমার সঙ্গে আসবে? জানি না ওরা আমার প্রতি কেমন আচরণ করবে!” এভার্ট শুধু গেলেনই না, যেন জাদু-স্পর্শে চেক প্রজাতন্ত্রের টেনিসপ্রেমীদের আবেগের লাভাস্রোতকে পুরো নাভ্রাতিলোভার দিকে বইয়ে দিলেন। সকলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকল দু’জনকে।
ওয়েন্স-লংয়ের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী তাঁদের বন্ধুত্ব। এভার্টের বয়স ৬৯, নাভ্রাতিলোভা ৬৭। দু’জনে দু’জনকে চেনেন পঞ্চাশ বছর ধরে। এভার্টের প্রস্তাবে এক সময় তাঁরা ডাবলস জুটিও বেঁধেছেন। এমনকি এভার্ট এক বার ‘ডাবল ডেট’-এও নিয়ে গিয়েছিলেন নাভ্রাতিলোভাকে। দুই পুরুষসঙ্গী তাঁদের সিনেমায় নিয়ে যান, তার পর এক সঙ্গে নৈশভোজ সারেন। টেনিস জীবনের শেষের দিকে এভার্ট নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। স্বামী লয়েডের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। বাবা জিমি এভার্টও মেয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নাভ্রাতিলোভা বুঝেছিলেন, এভার্ট কেমন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। নিউ ইয়ার পার্টিতে সাজগোজ করিয়ে বন্ধুকে নিয়ে যান। বলেছিলেন, “সব হ্যান্ডসাম পুরুষরা আসবে, চলো।” সেই রাতেই অত্যন্ত সুদর্শন অ্যান্ডি মিলের সঙ্গে এভার্টের আলাপ করিয়ে দেন নাভ্রাতিলোভা। পরের দিনই তাঁরা হাতে হাত ধরাধরি করে স্কিয়িং করতে চললেন। তার পরে নাভ্রাতিলোভা অস্ট্রেলীয় ওপেন খেলতে রওনা হচ্ছেন জেনে তাঁর বাড়ির চাবিও চেয়ে নিলেন। বোঝো কাণ্ড!
সম্পর্কে উত্থান-পতনও এসেছে। শুরুর দিকে এভার্ট একটানা জিতছিলেন। কিন্তু নাভ্রাতিলোভা যখন পর পর এভার্টকে হারাতে শুরু করলেন, তখন সম্পর্কে চিড় ধরল। এভার্ট সবিনয়ে ডাবলস জুটি ভেঙে ফেলতে চাইলেন। তবে সেই বিচ্ছেদও বেশি দিন টেকেনি। শেষে বন্ধুত্বেরই জয় হয়েছে। ১৯৮৯-তে ক্রিস এভার্টের শেষ বছর উইম্বলডনে। কোয়ার্টার ফাইনালে অবাছাই, ৮৭ নম্বর লরা গোলার্সার বিরুদ্ধে ম্যাচ হারা থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট পিছিয়ে তিনি। ‘এ ভাবে নিশ্চয়ই আমি বিদায় নিতে চাইনি উইম্বলডন থেকে,’ বিষণ্ণ এভার্ট মনে মনে ভাবছেন। প্লেয়ার্স লাউঞ্জে বসে ম্যাচ দেখছিলেন নাভ্রাতিলোভা। বন্ধুর অবস্থা দেখে উঠে দাঁড়ালেন। তার পর ছুটে চলে এলেন কোর্টে। গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে এসে সটান বসে পড়ে চিৎকার করে উঠলেন, “কাম অন ক্রিসি!” হকচকিয়ে উঠল উইম্বলডন। গোলার্সার ভলি নিশ্চিত ভাবে উইনার ছিল। কোথা থেকে দৌড়ে গিয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাকহ্যান্ড রিটার্ন মারলেন এভার্ট। স্ট্যান্ডে শিশুর মতো লাফিয়ে উঠলেন নাভ্রাতিলোভা। এর পরে ম্যাচটাই জিতে নিলেন এভার্ট। তাঁর জীবনের সেরা প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ।
আবার নাভ্রাতিলোভা যখন প্রকাশ্যে নিজের সমকামিতার কথা ঘোষণা করে চার দিক থেকে আক্রান্ত, তখন প্রবল ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এভার্ট। ৬০তম জন্মদিনে নাভ্রাতিলোভা একটি উপহারের বাক্স পেলেন। খুলে দেখলেন, ভিতরে রয়েছে দুর্দান্ত একটি নেকলেস। প্রেরক কে? না, সেই প্রতিবেশী, যিনি তাঁর মতোই ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের অধিকারী এবং বহু শ্বাসরুদ্ধকর দ্বৈরথের প্রতিপক্ষ। এভার্ট মজা করে এক বার বলেছিলেন, “এই সম্পর্কে আমিই পুরুষ। কারণ আমি ওকে গহনা উপহার দিই।”
কে জানত, এই নেকলেস এক দিন অন্য তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত হবে তাঁদের জীবনে! ২০২২-এর জানুয়ারিতে এভার্ট জানতে পারলেন, তাঁর গর্ভাশয়ে ক্যানসার ধরা পড়েছে। একাধিক অস্ত্রোপচার এবং ছ’টি বৃত্তের কঠিনতম কেমোথেরাপির নির্দেশ দিলেন ডাক্তার। ক্যানসার ধরা পড়ার খবর প্রথম যাঁকে ফোন করে দিয়েছিলেন এভার্ট, তিনি কোর্টে তাঁর সব চেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ। শোনামাত্র ফোনের ও-প্রান্তে নিশ্চুপ হয়ে যান নাভ্রাতিলোভা। এর পরে উপহার পাওয়া নেকলেস বার করে পরে নিলেন। যত দিন এভার্টের কেমো চলেছে, যত দিন না তিনি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, যত দিন না ডাক্তার বলেছেন ক্যানসার থেকে আপাতত মুক্ত তাঁর বন্ধু এভার্ট, এক মুহূর্তের জন্যও গলা থেকে নেকলেস খোলেননি নাভ্রাতিলোভা।
কিন্তু ওই যে নিয়তির লিখন, এক দিন সেই হার খুলে ফেলতেই হল। যখন স্বয়ং নাভ্রাতিলোভাকে ডাক্তারি পরীক্ষায় ঢুকতে হল। এ বার তাঁর শোনার পালা— গলায় এবং স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। এভার্ট বাড়িতে ফিরে তখনও ‘রিকভারি’-তে। হঠাৎ দেখলেন, মোবাইলে নাভ্রাতিলোভার দু’টি মিসড কল। একটি মেসেজও এসে পড়ে আছে— “খুব দরকার। প্লিজ় কল ব্যাক।” এভার্ট বুঝলেন, গুরুতর কিছু ঘটেছে। যিনি সমস্ত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বই পড়েছেন, যিনি একাধিক পোষ্য পালন করেন, যিনি টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার পরে ছবি আঁকেন, সেই মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এতটা উতলা হওয়ার পাত্রী নন। ফোন করতেই ও-প্রান্তে প্রথম মন্তব্য, “ভাবতে পারো, আমার শরীরেও এসেছে দৈত্যটা! আমাদের কি যা হবে, এক সঙ্গেই হবে?” এ বার এভার্টের পালা সারা ক্ষণ নাভ্রাতিলোভার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকার। যখন নিজের শরীরের কারণে তাঁর কাছে যেতে পারেন না, তখন ফোনে কথা বলেন। সারা রাত ধরে মোবাইলে মেসেজ আদানপ্রদান চলে দু’জনের।
দুর্গম চিকিৎসার পথ পেরিয়ে দু’জনেই আপাতত সুস্থ। মায়ামিতে বসে পানীয়ে চুমুক দিয়ে নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার উৎসবও করেছেন তাঁরা। টেনিসের লকার-রুম জায়গাটা বড় অদ্ভুত। গ্র্যান্ড স্ল্যাম শুরুর সময় গমগম করে। একশোর উপরে প্রতিযোগী থাকে। যত সময় যায়, আওয়াজ ফিকে হয়ে আসে। ভিড় কমে আসে। শেষে পড়ে থাকে শুধু দু’জন। দুই ফাইনালিস্ট। এভার্ট ও নাভ্রাতিলোভা ৬০টি ফাইনাল খেলেছেন, তাই তাঁরা এই আবহ সবচেয়ে ভাল চেনেন। কত হাসি-কান্না, প্রতিদ্বন্দ্বিতা-বন্ধুত্বের মুহূর্ত মিশে রয়েছে সেই যাত্রাপথে।
কে জানত, জীবনের লকার-রুমেও পড়ে থাকবেন দু’জনে! ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। টেনিস কোর্টে এক জন জিতলে অন্য জন হারতেন। এখানে দু’জনেই গেম, সেট, ম্যাচ-জয়ী নির্ভীক যোদ্ধা। ঠিক যেমন বার্লিনের সেই লং জাম্প নিয়ে বলা হয়, জেসি ওয়েন্স রেকর্ড জাম্প দিয়েছিলেন। আর লুজ় লং দিয়েছিলেন মানবতার লাফ!
কিছু কিছু রুপো যেন সোনার চেয়েও বেশি ঝকমক করে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy