Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

ফিরে এল সিমা আর্ট মেলা

সিমা গ্যালারি তিন বছর পরে আবার সেই বিশেষ আর্ট মেলার আয়োজন করেছে। এ বার তাঁদের সঙ্গে আছেন ৬০জন শিল্পী। এই মেলার উদ্দেশ্য প্রধানত শিল্পকে মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:২৩
Share
Save

কমবেশি দশ বছর আগে যখন শিল্পের দুনিয়া এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছিল, যখন ছবির সমঝদারেরা পাল্টে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে বেশির ভাগ ক্রেতাই ছবি কিনতে শুরু করেছিলেন নেহাত‌ই বিনিয়োগ হিসেবে। সেই বিপজ্জনক অবস্থা বুঝতে পেরে শিল্পী গণেশ পাইন এবং যোগেন চৌধুরীর সহায়তায় সিমা আর্ট মেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাখি সরকার। যত ধরনের শিল্পকর্ম আছে, সে ছবিই হোক বা অন্য যে কোনও ফর্মই হোক, সবই সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বার সিমা গ্যালারি তিন বছর পরে আবার সেই বিশেষ আর্ট মেলার আয়োজন করেছে। এ বার তাঁদের সঙ্গে আছেন ৬০জন শিল্পী। এই মেলার উদ্দেশ্য প্রধানত শিল্পকে মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। ভাল মানের শিল্পকর্ম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে ছিল না। বিত্তবানরাই সে ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সিমা-র প্রতীতি সরকারের কথায়, ‘‘মানুষ নিজের মতো করে শিল্পকর্ম উপভোগ করার সুযোগ যাতে পান, সেই উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন।’’ তাই বেশির ভাগ ছবিতেই ফ্রেম রইল না আর। মাউন্ট করা অবস্থায় দেওয়ালে উঠল নানা শিল্পকর্ম। এখানে ইতিহাস নেই, কোনও গুরুগম্ভীর আলোচনাও নেই। শুধু দেওয়ালে এবং টেবিলে রাখা নানা রঙের চোখধাঁধানো সব শিল্পকর্ম এবং তার মুখোমুখি দর্শক।

এই আর্ট মেলায় শুধু গতানুগতিক ছবিই নয়, তার সঙ্গে ছিল সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ভাস্কর্য, কারুকর্মও।

কিছু নামী শিল্পী সিমার সঙ্গে প্রথম থেকেই ছিলেন। যাঁরা বহু বছর ধরে ছবি আঁকছেন, তাঁদের একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে শিল্পের মানচিত্রে। তাঁদের অনেকেই সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মেলায় যোগ দিতে চান না। আবার অনেক বড় শিল্পী বোঝেন যে, এই জায়গাতেই নানা পরীক্ষানিরীক্ষা তাঁরা করতে পারেন। সেখানে তাঁদের কোনও বিচার নেই। অনেক অগ্ৰজ শিল্পী তাই অনেক সময়েই সে ভাবে মানুষের কাছে ধরা দিতে চান। শিল্পী গণেশ পাইন যখন জীবিত ছিলেন, তখন সিমা আর্ট মেলার জন্য মাটির সরার উপরে তাঁর সেই বিখ্যাত ড্রয়িং করে দিতেন। এ যেন এক নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে একটু ছুটি নেওয়া। সিমা আর্ট মেলার জন্য এ বার সেই রকম ছুটি নিয়েছেন যোগেন চৌধুরী, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎ কর, লালুপ্রসাদ সাউ, মাধবী পারেখ, পরেশ মাইতি, সমীর আইচ, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, জয়শ্রী বর্মন, অতীন বসাক, অশোক মল্লিক, বিমল কুণ্ডু প্রমুখ শিল্পীরা।

তরুণ শিল্পীদের মধ্যে মৈনাজ বানো মিনিয়েচার ছবি করেছেন একটু নতুন ভাবে। পৌরাণিক চরিত্র বা মোগল মিনিয়েচারের চরিত্রগুলির উপর নির্ভর করেই তাঁর ছবি, কিন্তু বিশেষ ডিটেলিং চোখে পড়ে না ছবিগুলিতে। মিনিম্যাল কাজ, রঙের‌ও আতিশয্য নেই।

শাকিলা শেখ আর একজন শিল্পী। তিনি সিমা-র সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই আছেন। বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। ছোট্ট মেয়েটি চক দিয়ে ফুটপাতে বসে ছবি আঁকত। সেখানে মেয়েটিকে লক্ষ্য করেছিলেন ডক্টর পানেসর, সবজি কিনতে এসে। সেই শাকিলা এখন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। খবরের কাগজ থেকে শুরু করে নানা রকম কাগজ, একটার উপরে একটা সেঁটে সারফেস তৈরি করেন। তার পর ওই অনবদ্য সার‌ফেসের উপরে বানান কোলাজ। শাকিলার প্রিয় প্রতিকৃতি কালী। অন্য ধর্মের হওয়ায় শাকিলার কালী আঁকায় খুশি হতে পারেন না তাঁর কাছের মানুষরাও। নানা রকম গঞ্জনা, বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে শাকিলাকে। নিরক্ষর মেয়েটি অনেক পরে নিজের সন্তানদের প্রচেষ্টায় ছবিতে সই করতে শিখেছেন। এখন সিমা গ্যালারির সমর্থনে শাকিলা অনেক বাধাই পার করতে সক্ষম। তাঁর আঁকা কালীমূর্তি খুবই মনোগ্রাহী।

ওই রকমই আর এক তরুণ শিল্পী নুর ইসলাম। নুরের প্রতিভা প্রথম বার চোখে পড়ে এক স্কুলশিক্ষকের। সেখানেই শিল্পের সঙ্গে পরিচয় নুরের। প্রধানত মিশ্র মাধ্যমে কাজ করেন তিনি। কোলাজের কাজও করেন।

এ বার আসে পটচিত্রের কথা। দেবদেবীর ছবি, পৌরাণিক কাহিনি ইত্যাদি নিয়ে তৈরি পটচিত্রেও এখন অনেক পরিবর্তন এসে গিয়েছে। একঘেয়েমি কাটাতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের মোটিফ। গাছপালা, লতাপাতা, মাছ, পাখি ইত্যাদি অত্যন্ত বর্ণময়। তার সঙ্গে রয়েছে কৃষ্ণ এবং বালগোপালের মুখ‌ও। লাল-নীল-সবুজ-হলুদ খুব চড়াকরে লাগানো সব রং কাগজের উপরে। কাগজে করা ওই ডিজ়াইন স্থায়ী করার জন্য ওঁরা পিছনেকাপড় জুড়ে দেন। এই শিল্পীদের নকশা বা ডিজ়াইনের বোধ খুবই প্রখর। নজর কাড়ে স্বর্ণ পটুয়ার কাজ। মেদিনীপুরের স্বর্ণ পটুয়ার কাজ এখন আন্তর্জাতিক স্তরেও সমাদৃত।

সমাজের প্রতিকূল অবস্থা থেকে উঠে আসা অনেক শিল্পীকে এগিয়ে দিতে সিমা-র বিরাট এক সামাজিক অবদান রয়েছে। তাদের এ বারের আর্ট মেলা পরিচিত বহু শিল্পীর জলরঙে করা বড় ছবি, তেলরঙের ছবি, অ্যাক্রিলিক ও ড্রয়িং— সব কিছুর পর্যাপ্ত সম্ভারেই সাজানো ছিল, যার আকর্ষণ এড়ানো কঠিন। সংগঠকদের স্বপ্ন ছিল যে, মানুষ নিজে দেখে ভালবেসে ছবি কিনবেন। তাই ছবিকে আবরণহীন অবস্থায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল দর্শকের সামনে। সংগঠকদের একটা বাড়তি দায়িত্বও ছিল এই সব শিল্পকর্মকে সুরক্ষিত রাখার। বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে সেই দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে জমে উঠেছিল সিমা আর্ট মেলা ২০২২।

Art exhibition Cima art fare

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।