Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Science News

ভয়াবহ খরার গ্রাসে পড়বে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা, জানাল নাসা-ইসরোর গবেষণা

গত চার বছর ধরে গবেষণাটি চালানো হয়েছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। তার প্রথম পর্বটি সবে শেষ হয়েছে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়।

ছবি- রয়টার্স।

ছবি- রয়টার্স।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৪
Share: Save:

এ বার ভারতে খরা আরও ভয়াবহ হতে পারে। খরার গ্রাসে পড়তে পারে দেশের আরও অনেক এলাকা। এমনকি, ভারতের যে এলাকাগুলি এত দিন ‘খরাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত হয়নি, সেই সব অঞ্চলেও এ বার ফুটিফাটা হয়ে যেতে পারে মাটি।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’র এক যৌথ পর্যবেক্ষণে এই অশনি সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। গত চার বছর ধরে গবেষণাটি চালানো হয়েছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। তার প্রথম পর্বটি সবে শেষ হয়েছে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়।

অ্যারোসল দ্রুত ভারী করছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার

গরম কালে দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে যে বিপুল পরিমাণে অ্যারোসল কণা জমা হয়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তার পরিমাণ উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর গত চার বছরে এতটাই পুরু হয়ে গিয়েছে যে, তা বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তর ট্রপোস্ফিয়ার থেকে পৌঁছে গিয়েছে তার উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও। যেহেতু বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন থেকেই অ্যারোসলের জন্ম হয়, তাই অ্যারোসলের মাধ্যমে দূষণ কণা প্রচুর পরিমাণে পৌঁছে যাচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও।

আরও পড়ুন- প্রাণের খোঁজে মঙ্গল খুঁড়তে নামছে নাসা, পরীক্ষা আটাকামায়​

আরও পড়ুন- একটা সাফল্যের পিছনে অজস্র ব্যর্থতা! বিজ্ঞানের ইতিহাসই তো ইসরোর সম্বল​

যে মেঘে বরফ কণা, সেখানেও দ্রুত বাড়ছে অ্যারোসল

দেখা গিয়েছে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যে মেঘগুলিতে বরফ কণা মিশে থাকে, ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা খুব কম হয় বলে, সেখানেও ঢুকে পড়েছে অ্যারোসল কণা। আর তাদের পরিমাণ, ঘনত্ব ও আকার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’র দরুন গত বছরেই ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছিল পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা। নাসা, ইসরোর যৌথ গবেষণার ইঙ্গিত, বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর অত্যন্ত পুরু হয়ে যাওয়ায় ভারতে এ বার সেই খরা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে।

যে ভাবে জন্ম হয় অ্যারোসল কণার, যে ভাবে তারা মেঘ গড়ে তোলে

গ্রিনহাউস গ্যাসের জন্যই অ্যারোসলের এই বাড়বাড়ন্ত

অন্যতম গবেষক, তিরুপতির ‘ন্যাশনাল অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ (এনএআরএল বা ‘নার্ল’)-র আবহাওয়া বিজ্ঞানী মুরলী বেঙ্কট রত্নম ‘আনন্দবাজার’কে বলেছেন, ‘‘গবেষণার একটি ধাপ সবে শেষ হয়েছে। আমরা কাজ করেছি ‘এশিয়ান ট্রপোপোজ অ্যারোসল লেয়ার’ বা ‘অ্যাটাল’ নিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে কয়েকটি সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিকে ট্রপোস্ফিয়ার ছাড়িয়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার পর্যন্ত পাঠিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে এই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে এই পদ্ধতিকে ‘ব্যাটাল’ও বলা হয়।’’

গবেষণা জানিয়েছে, গাছপালা পোড়ানো ও কলকারখানা থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ায় ওই অ্যারোসল্‌স কণাদের জন্ম হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ। তার ফলে, অ্যারোসলের স্তর ভীষণ পুরু হয়ে গিয়েছে। ট্রপোস্ফিয়ার ছাপিয়ে তা পৌঁছে গিয়েছ়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে।

এই বেলুনে যন্ত্রপাতি পাঠিয়েই মাপা হয়েছে অ্যারোসলের পরিমাণ, ঘনত্ব

জলভরা মেঘও ভরে যাচ্ছে দূষণ কণায়!

পুণের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিয়োরোলজি’ (আইআইটিএম)-র মেঘ বিশেষজ্ঞ আর কৃষ্ণণ ‘আনন্দবাজার’কে বলেছেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য মেঘ বানানোর প্রক্রিয়ায় অ্যারোসল কণাদের যথেষ্টই ভূমিকা রয়েছে। ফি-বছরই গরম কালে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে জমা হয় জলীয় বাষ্প ও অ্যারোসল কণা। কিন্তু অ্যারোসল কণাদের উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়া পরিমাণ যদি বায়ুমণ্ডলের অনেকটা উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও পৌঁছে যায়, তা হলে বিপদ কিছুটা বেড়ে যায়। যেহেতু মূলত দূষণ কণা থেকেই জন্ম অ্যারোসল কণাদের, তাই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ বেড়ে গেলে, তুলনায় হালকা জলীয় বাষ্পের চেয়ে মেঘ তৈরি করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে শুরু করে অ্যারোসল কণারাই। তারাই অনেক সময় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জলভরা মেঘগুলিকে জমাট বাঁধতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তারই জলভরা মেঘগুলির কেন্দ্র (নিউক্লিয়াস)-টাকে গড়ে তোলে।’’

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে দেখা গিয়েছে অ্যারোসলের এতটাই বাড়াবাড়ি

অন্যতম গবেষক বেঙ্কট রত্নম জানিয়েছেন, নয়ের দশকের একটি গবেষণাতেই দেখা গিয়েছিল, তিব্বতের মালভূমির ১০ থেকে ১২ মাইল উপরের বায়ুমণ্ডলের স্তরেও ঢুকে পড়েছে অ্যারোসল কণা। আমাদের ‘অ্যাটাল’ প্রকল্পে গবেষণার চৌহদ্দি আরও বাড়ানো হয়েছিল। দেখা হয়েছিল পশ্চিম চিন থেকে ভূমধ্যসাগরের উপরের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরও। মাপা হয়েছে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ, ঘনত্ব, আকার, জলীয় বাস্পের পরিমাণ ও ওজোন গ্যাসের পরিমাণ এবং ঘনত্বও।

ছবি সৌজন্যে: নাসা

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE