ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই সরকারি মহলে উর্দুর কদর এবং দেশে তার প্রসার বেড়েছে বলে দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। ওই ভাষার প্রসারে সরকারি বরাদ্দ কতখানি বেড়েছে, তারও পরিসংখ্যান পেশ করেছেন তিনি। কিন্তু উর্দুর অধ্যাপক এবং ওই ভাষার বিশারদদের একাংশের দাবি, শুধু সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির জোরে নতুন প্রজন্মের কাছে কোনও ভাষার আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা শক্ত। বরং তার জন্য তা পড়ে রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা হওয়া জরুরি।
বৃহস্পতিবার উর্দু পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনাসভায় ভিডিয়ো-বক্তৃতায় নিশঙ্কের দাবি, “২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেখানে (এই ভাষার প্রসারে পরিষদের জন্য) বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৯৩.৮৩ কোটি টাকা, সেখানে গত পাঁচ বছরে সেই অঙ্ক ৪০২.৫৬ কোটি। অর্থাৎ, দ্বিগুণেরও বেশি। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সারা দেশে ৪৬৮টি কেন্দ্রে ১.০৬ লক্ষ পড়ুয়া ছিল। অথচ গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র ও পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৫৪০ এবং ১৬.২৯ লক্ষ।” আরবি, ফার্সির মতো ভাষাতেও ডিগ্রি, ডিপ্লোমার সংখ্যা বেড়েছে বলে তাঁর দাবি।
কিন্তু জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উর্দু বিভাগের প্রধান শাহজাদ অঞ্জুমের বক্তব্য, “মন্ত্রী ভাষা সম্পর্কে যা বলেছেন, তা নিঃসন্দেহে উৎসাহবর্ধক। কিন্তু শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধির দৌলতে কোনও ভাষার কদর বাড়ে না। উর্দুকে নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে তাই তাকে রুজি-রোজগারের সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি।” তিনি-সহ বেশ কয়েক জন উর্দু অধ্যাপকের বক্তব্য, “অধিকাংশ স্কুলে উর্দু শিক্ষক নেই। থাকলেও, তাঁকে অন্য বিষয় পড়াতে হয়। শিক্ষকের আকাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও। বছরে যদি এই ভাষায় ৪০ জন পিএইচডি করেন, তবে অধ্যাপকের পদ খালি হয় তিন বছরে একটি! তাহলে যাঁরা ভালবেসে উর্দু পড়বেন, তাঁরা কাজ পাবেন কোথায়?” সেই কারণে তাঁদের মতে, সবার আগে স্কুলে-কলেজে উর্দু শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা প্রয়োজন। সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে অনুবাদকারী হিসেবে।
আরও পড়ুন: দুই পাক ব্যাঙ্কে টাকা জমা করতে বলেছিল জঙ্গিরা
আরও পড়ুন: রুশ টিকা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে ভারতে
মন্ত্রী এ দিন বলেছেন, “ভাষা হিসেবে উর্দুর সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। তার শব্দ, বাক্য বিন্যাস, সাহিত্য- সমস্ত কিছুই মন কেড়ে নেওয়ার মতো।” তাঁর ঘোষণা, এ বার থেকে ফি বছর শ্রেষ্ঠ উর্দু কবি-লেখক-সাহিত্যিকদের সারা জীবনের কাজের জন্য আমির খুসরু পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়াও দেওয়া হবে মির্জা গলিব, আগর হাশির কাশ্মীরি, মুন্সী প্রেমচাঁদের মতো আরও ৩-৪ জন কিংবদন্তির নামাঙ্কিত পুরস্কারও।
অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী সবার বিশ্বাস (সব কা বিশ্বাস) জেতার কথা বলেছেন। হয়তো সেই কারণেই উর্দু সম্পর্কে এত দরাজ শিক্ষামন্ত্রী। সম্ভবত সেই তাগিদ থেকেই কিছু দিন আগে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন জামিয়া মিলিয়ার। এ দিনও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এবং তাদের দেশাত্মবোধের কথা বলেছেন তিনি। কিছু দিন আগেও পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল যে দুই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অধ্যাপকের প্রশ্ন, “ভাষা হিসেবে উর্দু না-হয় সুন্দর। কিন্তু মূলত যাঁরা তা বলেন, তাঁদের বুকে টানতে কতখানি তৈরি সরকার?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy