চূড়ান্ত এনআরসি তালিকায় নাম আছে কি? দেখছেন অসমের সাফিরা বিবি। রবিবার বাসকায়। ছবি: পিটিআই।
এত দিন ছিল কাল্পনিক সংখ্যাকে সামনে রেখে রাজনীতি। কাল এনআরসি প্রকাশের পরে অসমের সব দলের সংগঠনের নজর এখন বাদ পড়া ১৯ লক্ষে।
বিজেপির দাবি, অনেক হিন্দু বাদ। থেকে গিয়েছে অনেক বাংলাদেশি। তাই এনআরসিকে পাত্তা না দিয়ে, অসমকে বিদেশিমুক্ত করতে দিল্লি-দিসপুর হাত মিলিয়ে নতুন আইন আনা হবে। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করে মেরুকরণের রাজনীতি বজায় রাখতে চাইছে।
কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রিপুন বরা আজ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হওয়া এনআরসি নস্যাৎ করে আদালত অবমাননা করছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। দ্বিতীয়ত, হিমন্তবিশ্ব শর্মা যে ভাবে বলছেন শিব, কালী, দুর্গার উপাসকরা নাগরিকত্ব পাবেন, সেটা চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িকতা। তিনি আদালত ও সংবিধান দুইয়েরই অবমাননা করছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ চৌধুরীর অভিযোগ, এক দিকে এনআরসিতে বেশির ভাগ বাঙালির উপরে কোপ পড়েছে। তার উপরে বর্তমান সরকার অসম চুক্তির ৬ নম্বর দফা রূপায়ণে কমিটি গড়েছে। সেই শর্ত রূপায়ণ হলে বাঙালিরা সম্পত্তি ও ভোটে দাঁড়ানোর অধিকারও হারাবে।
একই মত তৃণমূলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ চৌধুরীর। তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে নাম বাদ পড়াদের প্রকৃত তথ্য জানা হচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে ৬ নম্বর ধারা রূপায়ণে সাংবিধানিক কমিটির সিদ্ধান্তের উপরেও। দলের কেন্দ্রীয় পরিদর্শক আসবেন। তৃণমূলের আশা, বিজেপিকে ভোট দিয়েও তালিকাছুট এবং কংগ্রেসের উপরে আস্থা হারানো বাঙালিদের বড় অংশকে কাছে টানার এটাই সময়।
বিহারের বিজেপির সহযোগী জেডিইউয়ের নেতা হলেও প্রশান্ত কিশোর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কার্যত এক সুরে প্রশান্ত আজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিজের দেশেই বিদেশি করে দেওয়ার জন্য এনআরসি প্রক্রিয়ার নিন্দা করেছেন।
খানিকটা অন্য ছবি বরাকে। পত্রিকার হকার রঞ্জিত পালের পরিবারে মা-ভাই-বোন কারও নাম এনআরসিতে আসেনি। শনিবার বারবার ২১ সংখ্যার নম্বরটি দিয়ে দেখছিলেন। বলছিলেন, সব কটি পুনরাবেদন খারিজ হয়ে গেল! রবিবার রাত পোহাতেই বললেন, সরকার কিছু একটা করবে। রঞ্জিতবাবুর মতো বহু বাদ-পড়া এই আশাতেই আছেন। বিশেষ করে হিন্দু বাঙালিরা। তাঁদের একাংশ মনে করেন, রঞ্জন গগৈ প্রধান বিচারপতি পদে অবসর গ্রহণের পর এনআরসি-কে আস্তাকুঁড়ে ঠেলে পাঠানো হবে। অন্যরা বিজেপির টোপ গিলে আজও বলছেন, কিছু দিন পরেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) আসছে। হিন্দুদের কেউ আর বিদেশি থাকবেন না।
কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিরা আস্থা রাখতে পারছেন না কোনও শিবিরের দিকেই। সারা অসম বাঙালি পরিষদের সভাপতি শান্তনু সান্যালের মতে, এই ভোট ব্যাঙ্কে ভরসা করেই লোকসভায় ৯টি বিধানসভায় ৬১টি আসনে জিতে এসেছে বিজেপি। এখন তারা বোঝাচ্ছে, নাম বাদ পড়ায় তাদের ভূমিকা নেই। সব প্রতীক হাজেলার দোষ। তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এনে বাঙালিদের রক্ষাকবচ দেবে। কিন্তু বরাকে বাঙালিদের যে জোর রয়েছে ব্রহ্মপুত্রে বাঙালিদের সেই জোর নেই। তারা প্রতিপদে অসমীয় জাতীয়তাবাদের সামনে কোণঠাসা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বরাবর আদালত, পুলিশ থেকে শতহস্ত দূরে থাকে। আজ পরিবারগুলি ভাঙনের মুখে দাঁড়ানোয় তাঁরা দিশাহারা।
বিজেপির এক নেতার মতে, বহিরাগত মুসলিমরা জানতেন এখানে প্রতিপদে তাঁদের প্রমাণ দেখাতে হবে। তাই প্রথমেই সব প্রমাণপত্র জোগাড় করেছেন। কিন্তু বাঙালি পরিবারে বাবা-ঠাকুরদারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার সময়ে সব প্রমাণপত্র আনতে পারেননি। এখানে এসে ভেবেছিলেন নিজেদের জায়গায় এসেছি। তাই সময়মতো প্রমাণপত্র বানানোর তাগিদ অনুভব করেননি। এত দশক পরে সেই আত্মতুষ্টির খেসারত দিতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy