প্রত্যেক দিনের খাবারে প্রোটিন তো রাখতেই হবে। কিন্তু নিরামিষ খেলে বা ভিগান ডায়েটের ভক্ত হলে সে ক্ষেত্রে প্রোটিনের উৎস অনেক কমে যায়। বিশেষত ভিগানের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রাণিদুগ্ধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া চলে না, তাই মূলত আনাজপাতির প্রোটিনের উপরেই ভরসা রাখতে হবে। এমন অনেক আনাজপাতি আছে, যা প্রোটিনে ভরপুর।
প্রোটিনের উৎস
দুধ ও দুগ্ধজাত: দুধ সুষম খাদ্য। এক কাপ (১০০ গ্রাম) গরুর দুধে প্রায় ৩.৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এক কাপ (১০০ গ্রাম) পনিরে পাওয়া যায় প্রায় ২৩ গ্রাম প্রোটিন। ফলে প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডেয়ারি প্রডাক্টে ভরসা রাখতে পারেন।
সয় প্রোটিন: সয় প্রোটিন জিএমও প্রডাক্ট। অর্থাৎ জেনেটিকালি মডিফায়েড। তাই সপ্তাহে এক দিন খেতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেক দিন বেশি পরিমাণে সয় প্রোটিন গ্রহণ করা ঠিক নয়। এক কাপ সয়াবিনে ৮.৫ গ্রাম এবং আধ কাপ টোফুতে পাবেন ১০ গ্রাম প্রোটিন।
ডাল: এক কাপ ঘন সিদ্ধ ডালে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই প্রত্যেক দিনের খাবারে ডাল রাখা জরুরি। তবে সব ধরনের ডালই পালটে পালটে খেলে লাভ বেশি।
দানাশস্য: ছোলা, রাজমা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কিন্তু তা হজম করতেও বেশ সময় লাগে। তাই এই ধরনের খাবার ভাল ভাবে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। ছোলা দিয়ে তৈরি হামাস জনপ্রিয় খাবার। এই ধরনের খাবার খেতে পারেন ব্রেডের সঙ্গে।
কিনোয়া: ভিগান ডায়েটে কিনোয়া খুব জরুরি। কারণ এতে প্রায় ১৮ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। অন্য কোনও সিরিয়ালে যা থাকে না।
সবুজ আনাজপাতি: অ্যাসপারাগাস, ব্রকোলি, পালং শাক, অ্যাভোকাডো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম ব্রকোলি, অ্যাসপারাগাস ও অ্যাভোকাডোয় ৩.৫ গ্রাম প্রোটিন পেতে পারেন।
মাশরুম: ১০০ গ্রাম মাশরুমে পাওয়া যায় প্রায় ৬.৭ গ্রাম প্রোটিন। মাশরুম নানা ভাবে রান্নাও করা যায়। ফলে নিরামিষ রান্নার স্বাদ বাড়াতেও মাশরুম ব্যবহার করতে পারেন।
মাইক্রোপ্রোটিন: এটি এক ধরনের ফাঙ্গাস বেসড প্রোটিন। আধ কাপ মাইক্রোপ্রোটিন থেকে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংসের বিকল্প হিসেবে এই প্রোটিন খাওয়া হয়। তবে মাইক্রোপ্রোটিন খাওয়ার আগে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
বাদাম: কাঠবাদাম বা আমন্ডে প্রোটিন পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। বিকেলে হেলদি স্ন্যাকস হিসেবে রাখাই যায় এই ধরনের বাদাম। তা ছাড়া খাবারেও বাদাম বাটা বা পাউরুটিতে পিনাট বাটার স্প্রেড খেতে পারেন।
রোজ কতটা প্রোটিন খাবেন?
প্রত্যেক মানুষের ডায়েট চার্ট আলাদা। উচ্চতা, ওজন এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের উপরে নির্ভর করেই সাধারণত ডায়েট ফলো করা উচিত। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক ওজনের পূর্ণবয়স্ক মহিলা এবং পুরুষ রোজ যথাক্রমে ৫০-৬০ গ্রাম এবং ৭০-৮০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ওভারওয়েট হলে কম এবং আন্ডারওয়েট হলে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। হিসেব মতো, প্রত্যেক দিনের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ, প্রোটিন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ এবং ফ্যাট শতকরা ১০-১৫ ভাগ থাকাই শ্রেয়। এই অনুপাতে খাবার খেলে শরীরের গঠন ঠিক থাকে। অতিরিক্ত মেদও জমে না।
প্রোটিন খাওয়ারও নিয়ম আছে
• প্রোটিন হজম করা বেশ কঠিন। তার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম জরুরি। বিশেষত রাতের দিকে বেশি প্রোটিন খেলে তা হজম হয় না। অনেকেই গ্যাস, অম্বলে আক্রান্ত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস জলে চার ফোঁটা অ্যাপল সিডার ভিনিগার মিশিেয় পান করতে পারেন।
• প্রোটিন হজমের জন্য প্রথমত তা ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। কারণ খাবার চিবোনোর সময়ে যে এনজ়াইম বা উৎসেচক নিঃসৃত হয়, তা প্রোটিনকে হজম করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া প্রোটিনের তন্তুও অনেক আলগা হয়ে যায়।
• হাই ইনটেনসিটি ওয়র্কআউট করলে তবেই প্রোটিন শেক খেতে পারেন। ধরুন সকালে আধ ঘণ্টা জিমে হাঁটলেন, তার পরে বাকি দিনে বেশির ভাগ সময়ে বসেই আপনার কাজ। সে ক্ষেত্রে প্রোটিন শেকের প্রয়োজন নেই। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।
• প্রোটিন হজমের পরে যে টক্সিন বার হয়, তা শরীর থেকে দূর করে কিডনি। তাই অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কিন্তু কিডনির উপরে বেশ চাপ পড়ে। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিন গ্রহণও কমাতে হবে।
মাছ, মাংসের বাইরেও যা প্রোটিন আছে, তা মানুষের শারীরিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তাই খাবারের ধরন পালটালে শুধু কতটা প্রোটিন গ্রহণ জরুরি, সেই হিসেবে ডায়েট চার্ট করে নিতে পারলেই মুশকিল আসান।
তথ্য সহায়তা: প্রিয়া আগরওয়াল, ডায়াটিশিয়ান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy