Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Children Care

সন্তান স্বাবলম্বী হোক ছোট থেকেই

ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তোলার জন্য উদ্যোগী হতে হবে মা-বাবাকেই।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুনীতা কোলে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৫:১৯
Share: Save:

ভাল কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি বছর সতেরোর মেয়েটি। হস্টেলে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিল না সে। সারা দিনের রুটিন তৈরি, নিজের কাজ গুছিয়ে নেওয়া, সহপাঠীদের সঙ্গে থাকা... কঠিন মনে হতে থাকে তার। শেষমেশ নিজের শহরে অন্য কোর্সে ভর্তি হয় মেয়েটি। আবার বছর পনেরোর স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত। বাড়িতে অনেকটা সময় একাই কাটায় সে। সময়ে পড়াশোনা করা, বইখাতা-পোশাক গুছিয়ে রাখা, এমনকি স্ন্যাক্স বানিয়ে নেওয়ার মতো কাজ সে দিব্যি পারে।

দুই টিনএজারের মধ্যে তফাত কোথায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ক্ষেত্রে মেয়েটির মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার অভ্যেস গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ছোট থেকেই ছেলেটিকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বলছেন, “ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে ছোট থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পাঠ দেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। না হলে পরবর্তী জীবনে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে।” তাঁর পরামর্শ, এই অভ্যেস গড়ে তুলতে বয়স অনুযায়ী সন্তানকে ধাপে ধাপে বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করতে শেখানো প্রয়োজন। জেনে নিন কোন বয়সে কেমন দায়িত্ব দেবেন—

সাড়ে তিন-চার থেকে ছ’বছর

এই বয়সের শিশুরা বাইরের জগৎ বলতে স্কুলকেই বোঝে। তাই প্রথমে সেখানে থাকার জন্য তাকে স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন। ব্যাগে যা যা জিনিস নিতে হবে, তা হাতের কাছে এনে দিতে পারেন বাবা-মা। তার পরে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সন্তানকেই দিতে হবে। এই বয়সে যে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, তা হল টয়লেট ট্রেনিং। কারও সাহায্য ছাড়াই শিশুটি শৌচালয়ে যেতে পারলে বাবা-মা অনেকটা স্বস্তি পান। পাশাপাশি টিফিন বা স্ন্যাক্স নিজে খাওয়া বা কাঁটা-চামচে করে খেতে শেখানোও জরুরি। কারণ স্কুলে এ সব নিজেকেই করতে হবে। জনপরিসরে কী ভাবে ঠিক আচরণ বজায় রেখে খাওয়াদাওয়া সারবে, তা জানা থাকলে বাড়বে সন্তানের আত্মবিশ্বাসও। এ ছাড়া পোশাক পরা, বোতাম লাগানো, চেন টানা, মোজা পরা, জুতোর ফিতে বাঁধার মতো কাজও শেখাতে হবে এই বয়সে। এতে ছোটরা যেমন কাজ শিখবে, তেমনই তৈরি হবে ফাইন মোটর স্কিল।

ছয় থেকে এগারো বছর

পায়েল জানাচ্ছেন, এই বয়সটা শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে যাওয়া, মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ে এই সময়ে। বাড়ে মানসিক চাহিদাও। এই সময়ে নিজের জিনিসের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ওদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাঠ দিতে হবে।

  • পড়াশোনা: কোনও বিষয় কী ভাবে পড়তে হবে, তা ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা সময় স্বাধীন ভাবে পড়তে উৎসাহ দিতে হবে। সব সময়ে সামনে বসে থাকবেন না। বলে দিন, কিছুটা পড়া তাকে নিজেকেই করতে হবে। স্কুলের প্রজেক্ট, হোমটাস্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলি ভাল করে জেনে আসতে বলুন। অন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে জানার সুযোগ থাকলেও সন্তানকে তা না বলাই ভাল। প্রয়োজনে একটি নোটবুক দিন যাতে সে বিষয়গুলি লিখে আনতে পারে। এতে বাড়বে সংগঠিত যাপনের অভ্যেস।
  • বাড়ির কাজ: বাড়ির মধ্যে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন সন্তানকে। তাদের জানান, বড়দের মতো তাদেরও দায়িত্ব বাড়ির কিছু কাজ করা। জলের বোতল ভরা, বিছানা পরিষ্কার করা, দুধের প্যাকেট বা খবরের কাগজ গেটের কাছ থেকে নিয়ে আসার মতো কাজ সহজেই করতে পারবে এই বয়সের শিশুরা। আর একটু বড় হলে বাইরের ছোটখাটো কাজও দিন। আবাসন, পাড়ার পুজোয় সাহায্য করা বা অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার মতো কাজের মাধ্যমে বাড়বে সামাজিক স্কিল।
  • মানসিক বৃদ্ধি: এই সময়ে বাচ্চাদের মনে নানা বিষয়ে তোলপাড় চলে। তারা বুলিংয়ের শিকার হয় অনেক ক্ষেত্রে। বাড়িতে খোলামেলা পরিবেশ রাখতে হবে, যাতে শিশু দ্বিধাহীন ভাবে বিষয়টি বড়দের জানাতে পারে। তৈরি করতে হবে কৃতজ্ঞতা বোধও। ছোট ছোট দু’একটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অভ্যেস তৈরি করালে বাচ্চাটি বুঝতে শিখবে বাড়ির সব কাজের জন্য অভিভাবকেরা কতটা পরিশ্রম করেন। এতে তার মধ্যেও সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি হবে।

বয়ঃসন্ধি

এই বয়সটা একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিষয় পছন্দ করার সময়ে সন্তানের উপরে নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে না দিয়ে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। কোন বিষয়, কেন সে পড়তে চায়, যুক্তি-সহ বলতে দিন সন্তানকেই। এই বয়সে যুক্তি-সহ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হলে জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোয় তাদের সুবিধে হবে।

সন্তানের মনে অভিভাবকদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করাও জরুরি। আশ্বাস দিন, কখনও অন্য খাতে খরচ কমালেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে পূর্ণ সহায়তা মিলবে। বাজারের লিস্ট তৈরি, ওষুধ কিনে আনা বা বাড়ির কাউকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো দায়িত্বও দিতে পারেন। এ ছাড়া রাজনীতি, সামাজিক ঘটনা, খেলা... সম্পর্কে আলোচনার পরিসর তৈরি করতে হবে বাড়িতে। সন্তানের মতামতও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন।

এ ভাবেই সন্তানকে পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরি করে দিতে হবে। তবে সন্তানকে ছোট থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার অভ্যেস করানোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান বয়ঃজ্যেষ্ঠরা। সে ক্ষেত্রে সন্তানের বাবা-মাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। বড়দের বোঝাতে হবে কেন এই অভ্যেস জরুরি।

মডেল: আরুষ দে;

ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত; লোকেশন: চৌধুরী ভিলা, কেয়াতলা লেন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children Child Care Tips child care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE