Advertisement
E-Paper

কম খরচে ক্যানসারের চিকিৎসার ভারতীয় পদ্ধতিতে সাড়া ৭৩ শতাংশ রোগীর, প্রশংসা বিদেশেও

রক্তের ক্যানসারের রোগীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে ওই চিকিৎসা পদ্ধতি। খরচের জন্য ক্যানসারের সব ধরনের চিকিৎসা করাতে পারেন না অনেকে। কম খরচে এমন উপায় হাতে পেলে অনেকেই ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারবেন।

ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:১০
Share
Save

ক্যানসারের আধুনিকতম চিকিৎসা কার টি-সেল থেরাপির একটি কম খরচের বিকল্প পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল ভারতে চিকিৎসাধীন ক্যানসারের রোগীদের উপর। দেখা গেল সেই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাড়া দিয়েছেন প্রায় ৭৩ শতাংশ রোগী! আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য পত্রিকা ল্যানসেট সেই ফলাফল প্রকাশ করেছে। তারা লিখেছে, ‘‘এটি নিঃসন্দেহে একটি বিশ্বমানের আবিষ্কার। কারণ ভারতে যে কার টি-সেল থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছিল, তার খরচ অন্য কার টি-সেল থেরাপির খরচের ২০ ভাগের এক ভাগ!’’

ক্যানসারের খরচের জন্যই ওই রোগের সমস্ত চিকিৎসা করাতে পারেন না অনেকে। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় বহু পরিবার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যানসারের চিকিৎসার এমন একটি কম খরচের আধুনিক উপায় হাতে পেলে আরও অনেক মানুষ ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা করাতে পারবেন। ল্যানসেটও সে কথাই বলেছে।

কার টি-সেল থেরাপি কী?

কার টি-সেল থেরাপির পুরো কথাটি হল সিমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর টি-সেল থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূল ভাবনা এই যে, শরীরের রোগপ্রতিরোধক কোষগুলিকেই এমন ভাবে সক্রিয় করে তোলা হবে যাতে তারা ক্যানসারের কোষ নিজেরাই চিহ্নত করে নষ্ট করে দিতে পারে। সাধারণত শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলিকে নিয়ে তাকে গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে শক্তিশালী করে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে নতুন করে প্রতিস্থাপিত কোষগুলি শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত রক্তের ক্যানসারের রোগীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। আর সেই সমস্ত রোগীদেরই দেওয়া হয়েছে যাঁদের প্রথাগত চিকিৎসার পরে ক্যানসার বাড়েওনি আবার কমেওনি। অর্থাৎ প্রথাগত চিকিৎসায় সাড়া না দিলেও ক্যানসার নতুন করে ছড়ায়নি।

ভারতে কবে থেকে?

যে সমস্ত ক্যানসারের রোগীদের হাতে আর কোনও বিকল্প অবশিষ্ট নেই, তাঁদের জন্য কার টি-সেল থেরাপির ওই বিশেষ কম খরচের পদ্ধতি তৈরি করে আইআইটি বম্বের একটি স্টার্ট-আপ সংস্থা ‘ইমিউনো অ্যাক্ট’। যে হেতু উপায়ান্তর না থাকা ক্যানসারের রোগীদের নিয়ে তারা কাজ করছিল, তাই ২০২৩ সালে ভারতের ওষুধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা ওই চিকিৎসা প্রয়োগের অনুমতি দেয়। সেই চিকিৎসা পদ্ধতি ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে দু’টি পর্যায়ে। সেই দুই পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফলই প্রকাশ করেছে ল্যানসেট।

কী জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পত্রিকাটি?

তারা জানিয়েছে ৭৩ শতাংশ ক্যানসারের রোগী ওই চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন তো বটেই, পাশাপাশি অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার রোগীরা ৬ মাস কোনও অবনতি ছাড়াই বেঁচে রয়েছেন ওই চিকিৎসার পরে। লিম্ফোমার রোগীদের ক্ষেত্রেও ওই চিকিৎসার পরে গত চার মাসে কোনও অবনতি হয়নি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি নেই?

ভারতের কম খরচের কার টি-সেল থেরাপিতে রোগীরা যে ভাবে সাড়া দিয়েছেন, তা অন্যান্য দেশের কার টি-সেল থেরাপির সমান। আবার কার টি-সেল থেরাপির যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া— হেমোফ্যাজোসাইটিক লিম্ফোহিস্টিয়োসাইটোসিস, তা-ও দেখা গিয়েছে ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে। ওই সমস্যাটি দেখা দিলে রোগীর শরীরের রোগপ্রতিরোধক কোষগুলির সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন শরীরে অতিপ্রদাহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গও। ভারতের পরীক্ষায় ১২ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এমন হতে দেখা গিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে রোগীর। ল্যানসেট জানিয়েছে, কোনও কোনও মৃত্যু হয়েছে ফুসফুসে রক্তপাতজনিত কারণে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ায়।

কেন এই ফলাফল তাৎপর্যপূর্ণ?

প্রথম কারণ অবশ্যই খরচ। কার টি-সেল থেরাপি করাতে আমেরিকায় বা ইউরোপে যেখানে অন্তত ৩-৪ কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে ভারতের বিশেষ পদ্ধতিতে ওই খরচ নামিয়ে আনা হয়েছে ২৫-৩০ লক্ষ টাকায়। যা ভবিষ্যতে আরও কমানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। অল্প খরচে রক্তের ক্যানসারের নিরাময়ের সুবিধা থাকলে অনেকেই তা নিতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, ওই পদ্ধতিতে চিকিৎসা সফল হলে তা সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি বলেও মানছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, এতে ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কাও থাকে কম। তাই যে সমস্ত রোগীদের অন্য চিকিৎসায় ভাল হওয়ার রাস্তা প্রায় বন্ধ তাঁদের কাছে এই চিকিৎসা পদ্ধতি একটা শেষ আশা হিসাবে কাজ করতে পারে।

যদিও ভারতে ওই চিকিৎসা পদ্ধতির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ভারতীয় ওষুধ সংক্রান্ত নিয়ামক সংস্থা জানিয়েছে, যে সমস্ত রোগীর উপর ওই পদ্ধতি প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা হয়েছে, ১৫ বছর পরে তাঁরা কেমন আছেন, সেই তথ্যও সংগ্রহ করতে হবে ‘ইমিউনো অ্যাক্ট’কে।

Blood Cancer Cancer treatment

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}