৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। ছবি: শাটারস্টক।
বেঁচে থাকলে এখন তাঁর বয়স হত ৮৩ বছর। ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পথিকৃৎ অস্ট্রিয়ান আমেরিকান Evelyn Lauder আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে পিঙ্ক রিবন সিম্বলটি তৈরি করেন। বিশ্বের সব মেয়েদের মধ্যে পিঙ্ক রিবনের সাহায্যে ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার’-এর উদ্যোগে প্রতি বছর ১-৩১ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস পালন করা হয়। আগে থেকে সচেতনতা কিছুটা বাড়লেও এখনও অনেকেই সে ভাবে অসুখটাকে আমল দেন না। আর তাই রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়ে যায়।
এ বারে জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী কারণ ব্রেস্ট ক্যানসার ডেকে আনে।
আরও পড়ুন: অকালে অস্টিওপোরোসিস বা হাঁটু প্রতিস্থাপন ঠেকাতে মেনে চলতেই হবে এ সব
রিস্ক ফ্যাক্টর
বাড়তি ওজন ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বয়স একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। ইদানীং মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আর এই কারণেই ইদানীং স্তন ক্যানসারও বাড়ছে। দেরিয়ে বিয়ে বা বিয়ে না করা কিংবা সন্তান না হওয়া স্তন ক্যানসার ডেকে আনতে পারে। অল্প বয়সে মেনার্কি অর্থাৎ পিরিয়ড শুরু হওয়া এবং বেশি বয়সে মেনোপজ হলে দীর্ঘ দিন ইস্ট্রোজেনের সঙ্গে সহবাস করতে হয়। ইস্ট্রোজেন ক্যানসারের রিস্ক বাড়ায়। সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং না করালেও ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। ভাজাভুজি ও তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলে ওজন বেড়ে যায়, ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যালকোহল, তামাক সেবন অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। রেডিয়েশনে এক্সপোজার হলেও ঝুঁকি থাকে। বংশে এর আগে কেউ আক্রান্ত হলে অর্থাৎ মা, দিদি, মাসি, পিসির ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বেশি। বিএআরসিএ ১, ও বিএআরসি ২, জিন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
কী করে বুঝবেন
বয়স ৩০ পেরোলেই নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিৎ। কোনও রকম অস্বাভাবিকতা দেখলে সতর্ক হন। কোনও ব্যথাহীন ফোলা অংশ আছে বুঝলেই ডাক্তার দেখান। স্তনের ত্বকের কোনও অংশ পুরু হয়ে গেলে সতর্ক হন। লালচে বা ঈষৎ কমলা রঙের ত্বক দেখলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনার কথা ভাবতে হবে। নিপলের গঠন বদলে গেলে বা ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে কিংবা কোনও ডিসচার্জ হলেও অবিলম্বে ডাক্তার দেখান। ব্রেস্টের আকারের হেরফের হলেও সতর্ক হতে হবে। যে কোনও ক্যানসারের একটা উল্লেখযোগ্য উপসর্গ ওজন কমে যাওয়া। কোনও কারণ ছাড়া ওজন কমলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান।
দু’বছর আগে ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মাসে শপথ নেওয়া হয়, ২০৫০ সালে এক জন ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীকেও মরতে দেওয়া চলবে না।
অ্যাটাক করুন আর্লি স্টেজে
ব্রেস্ট ক্যানসার এমনই এক অসুখ যা ফাস্ট স্টেজে ধরা পড়লে প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ন সারিয়ে তোলা যায়। তাই শুরুতেই সতর্ক হতে হবে সবাইকে। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। কোনও রকম সন্দেহ হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। দু’বছর আগে ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মাসে শপথ নেওয়া হয়, ২০৫০ সালে এক জন ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীকেও মরতে দেওয়া চলবে না। আর এই শপথ রক্ষায় সকলের আগে প্রয়োজন সচেতনতা। রোগের শুরুতেই ঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিলে ক্যানসারকে জয় করা কঠিন নয়। যে সব কারণ ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, সেই কারণগুলিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
সন্তানকে মায়ের দুধ দিয়ে ক্যানসার অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। ওজন ঠিক রাখতে শরীর বুঝে প্রয়োজনীয় ডায়েট আর এক্সারসাইজ করা দরকার। আর ৩০ পেরোলে সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন ও প্রয়োজনে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং ম্যামোগ্রাম করা দরকার।
আরও পড়ুন: এই ডায়েটে ব্যায়াম লাগে না, ফ্যাট খেতে হয় দেদার, তবু হু হু করে কমে পেটের মেদ
সেন্টিনাল নোড ম্যাপিং করে ব্রেস্ট বাঁচিয়ে চিকিৎসা
ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়লে অসুখকে নির্মূল করার একমাত্র উপায় সার্জারি করা। অপারেশনের কথা শুনে পিছিয়ে গেলে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সেন্টিনাল নোড টেকনিকের সাহায্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট বাঁচিয়ে সার্জারি করা হয়।
ব্রেস্ট ক্যানসার মূলত ‘এলএলবিবি’ অর্থাৎ লাং, লিভার, ব্রেন ও বোন এই সব অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই শুরুতে অন্যান্য থেরাপির সাহায্য না নিয়ে ক্যানসার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিত। ক্যানসার আক্রান্ত টিউমার বড় হয়ে গেলে কেমোথেরাপির সাহায্যে টিউমার ছোট করে নিয়ে সার্জারি করা হয়। দরকার মতো কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy