প্রায় ১১ মাস পরে শুরু হচ্ছে স্কুল। অতিমারির হানায় দীর্ঘ দিন অনলাইন ক্লাসেই অভ্যস্ত ছিল ছাত্রছাত্রীরা। এ বার ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার পালা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। তাই দরকার মানসিক প্রস্তুতিও।
অভ্যেস জরুরি
স্কুল যাওয়ার আগে কিছু কিছু অভ্যেস এখন থেকেই বাড়িতে করতে হবে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘সকলের আগে জরুরি মানসিক প্রস্তুতি। সন্তানদের সামনে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না। অনেকেই বাড়িতে সংশয় প্রকাশ করতে পারেন স্কুল খোলা নিয়ে। কিন্তু তা যেন সন্তানের সামনে না হয়। ধীরে ধীরে সকলেই নিউ নর্মাল জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছে। ওদেরও বহির্জগতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। যেহেতু অনেক দিন ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে থেকেই অভ্যস্ত, তাই স্কুলের রুটিনে চলার অভ্যেস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। টানা ৫-৬ ঘণ্টা ক্লাস করা বা ভারী ব্যাগ কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়ার অভ্যেস নেই অনেকেরই। তার সঙ্গে এখন জুড়েছে মাস্ক ও হাত ধোয়ার অভ্যেস, দূরত্ববিধি মেনে চলা। তাই এ সবই অল্প অল্প করে বাড়িতে অভ্যেস করতে হবে আবার।’’
অনেকেই হয়তো দুপুরে একটা সময়ে ঘুমিয়ে নিত বা ফোনে সিনেমা দেখত। এ বার সেই অভ্যেস ছাড়তে হবে। ফোন দেখা এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বাড়িতে খাবার টেবিলে খাবার শেয়ার করে আর খাওয়া যাবে না। স্কুলে বাচ্চারা সাধারণত টিফিন ভাগ করেই খায়। কিন্তু সেই অভ্যেস এ বার ছাড়তে হবে। রং টিফিন খাওয়ার সময়ে দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। কারণ তখন মুখে মাস্ক থাকবে না।
বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলোর সময়েও সাবধান থাকতে হবে। তবে ছুটোছুটির খেলায় মাস্ক পরে থাকলে অনেকের শ্বাসকষ্টও হতে পারে। সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
স্কুল শুরুর পরে
মেডিসিনের ডাক্তার অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘স্কুলে ঢোকার মুখে তাপমাত্রা মাপা হলে এবং হাত স্যানিটাইজ় করলে অনেকটাই সাবধানতা অবলম্বন করা যায়। স্কুলে থাকাকালীনও বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যেস রাখতে হবে। তার সঙ্গেই সন্তান যেন দূরত্ববিধি মেনে চলে সেই অভ্যেসও জরুরি। ল্যাবে অনেকেই একই জিনিস স্পর্শ করে। তাই ল্যাবে ঢোকার মুখে ল্যাব কোট বা গ্লাভস পরে নিলে অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যাবে।’’
কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার্থে স্কুলগুলি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? মডার্ন হাই স্কুলের ডিরেক্টর ও শিক্ষাবিদ দেবী কর বললেন, ‘‘স্কুল স্যানিটাইজ় করা বা তাপমাত্রা মাপার মতো বিষয়গুলো ফলো করা হবে। আর যেহেতু শুক্রবার স্কুল খুলছে, উইকেন্ড হাতে থাকায় সেটাও সুবিধে হবে। কারণ প্রথম দিন কী-কী সমস্যা হচ্ছে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করার সময় পাওয়া যাবে। আর খুব কড়া নজরও রাখতে হবে স্টুডেন্টদের উপরে।’’
এ ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের রোটেশনে স্কুলে আনার কথা চিন্তাভাবনা চলছে, যাতে এক ক্লাসে পাশাপাশি না বসে দূরত্ব বজায় রাখা যায়। সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে। আপাতত স্কুলগুলিতে স্যানিটাইজ়েশন প্রক্রিয়া চলবে স্কুল খোলার প্রস্তুতি হিসেবে।
খেয়াল রাখতে হবে যাতায়াতের মাধ্যমেও। যে সব অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পুলকারে করে স্কুলে পাঠান, সাবধান হতে হবে তাঁদেরও। একসঙ্গে যাতে সব বাচ্চা না ওঠে, তার জন্য পুলকারেও নিয়ম মানা দরকার।
সন্তান স্কুল থেকে ফিরে আসার পরে রোজ পোশাক সাবানজলে কেচে দিন। তার জন্য দু’সেট জামাকাপড়ও প্রথম থেকে তৈরি রাখুন। আর একটি বিষয়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের যদি জ্বর হয়, শরীর খারাপ লাগে, তা হলে তাকে একদম স্কুলে পাঠানো যাবে না। এটা সন্তানকেও ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে। সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও এক দিন বিশ্রামে রেখে তবে তাকে স্কুলে পাঠান। কারণ দু’টি। এক, সে যদি ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়, তার কাছ থেকে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকবে না। দুই, অসুস্থ শরীরে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা থেকেও সুরক্ষিত থাকবে তারা।
ছোট ছোট এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলে অনেকটাই সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া সন্তানের কোনও রোগ থাকলে তার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। তা হলে ওদের জীবনও ফিরবে ছন্দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy