—প্রতীকী চিত্র।
ঢাকঢাক গুড়গুড় নয়। খোলাখুলি কথা হোক পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে। সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞাপনে এমনই বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে চিত্রতারকা রণবীর সিংহকে। তাঁর সঙ্গী পর্নস্টার জনি সিনস। মঙ্গলবার প্রকাশের পর থেকেই বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল সমাজমাধ্যমে। যৌন স্বাস্থ্যের আলোচনা শুরুর জন্য এমন বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও সেটির নির্মাণের কিছু দিক নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। উঠছে এ ধরনের বিজ্ঞাপনে নজরদারির প্রশ্নও। কারণ, তা সরাসরি স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পণ্যের বিপণনে তৈরি মিনিট দেড়েকের ওই বিজ্ঞাপনী ভিডিয়ো তৈরি হয়েছে টেলিভিশনে জনপ্রিয় হিন্দি পারিবারিক সোপ-অপেরাগুলির ধাঁচে। বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, স্বামী জনি সিনসের সঙ্গে সম্পর্কে সুখী না হলে যৌথ পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান বধূ। সে কারণে পরিবারের অনেকের লাঞ্ছনারও শিকার হন। স্বামীর দাদা, রণবীর সেখানে ভাইকে ওই পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়ে দু’জনের সম্পর্ক জোড়া লাগাতে সাহায্য করেন।
ওই পণ্য নির্মাতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রজত যাদব বললেন, ‘‘যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলা নিয়ে যে ছুঁৎমার্গ রয়েছে, আমরা হাসির মোড়ক দিয়ে তাকে ধাক্কা দিতে চেয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্যারডির আকারে একটা পারিবারিক মোড়ক দেখানো হয়েছে, যাতে সকলে হাসলেও বিজ্ঞাপনের বক্তব্যে থাকা সূক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাও বুঝতে পারেন।’’
তবে বিজ্ঞাপনের নির্মাণ যে ভাবে হয়েছে, তা প্রশ্নাতীত নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী বলছেন,
‘‘বিজ্ঞাপনে নারী এখানে তার নিজের চাহিদার কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু পরিবার সে কথা মানছে না। তাকে লাঞ্ছনা করছে। আর পরিবারেরই প্রধান পুরুষ তার সমস্যার সমাধান করছে। ফলে পুরুষতন্ত্রের ঘেরাটোপেই বিষয়টা থাকছে।’’
বিজ্ঞাপনে আরও যা চোখে লাগছে, তা হল যৌনতার সীমাবদ্ধ সংজ্ঞায়ন। উপলের ব্যাখ্যা, ‘‘যৌনতা একটা বিস্তৃত বিষয়। নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্কের সাফল্যকে কেবলমাত্র শারীরিক যৌনক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ করে দেওয়াটা প্রথাগত ধারণা। এই বিজ্ঞাপনেও সেটাও দেখা যাচ্ছে। এই ধারণারই বিকৃত ও বিস্তৃত রূপ পর্ন সংস্কৃতির জন্ম দেয়। বিজ্ঞাপনে যে শ্বেতাঙ্গ পুরুষকে ভারতীয় পুরুষের সাফল্যের টোটকা দেওয়া দেখানো হচ্ছে, তার মধ্যেও স্পষ্ট একটা রাজনীতি আছে।’’
যে সংস্থার পণ্যের জন্য এই বিজ্ঞাপন, রণবীর নিজেও সেটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। মঙ্গলবার বিজ্ঞাপনটির প্রকাশের দিনে বিবৃতিতে রণবীর অবশ্য জানিয়েছেন, নিজের তারকা পরিচিতির সুবাদে যাতে দেশে এই সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে, সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এমন একটা পণ্যের বিপণনের কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর দাবি, দেশের লক্ষ লক্ষ পুরুষ যৌন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু লজ্জা, সঙ্কোচে তা প্রকাশ করতে পারেন না। বিজ্ঞাপনের পরিচালক আয়াপ্পা কে এম রণবীরের এই ভূমিকার প্রশংসা করে বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে যেখানে তারকারা বেশিরভাগই পলিটিক্যালি কারেক্ট ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চান, অস্বস্তির বিষয় থেকে দূরত্ব রাখেন সেখানে রণবীরের মতো তারকার এগিয়ে আসা, ঝুঁকি নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
চিকিৎসকেরা এই ধরনের বিজ্ঞাপনের যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা মানছেন। কারণ, তাতে এ বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ঝুঁকির কথাও। মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলছেন, ‘‘এমন সমস্যায় যাঁরা ভোগেন তাঁরা যে কোনও রকম সমাধানের কথা শুনে সহজেই প্রভাবিত হয়ে যেতে পারেন। তাই এই সব পণ্যের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কতটা রয়েছে তা অবশ্যই পরীক্ষা হওয়া উচিত। এই ধরনের বিজ্ঞাপনের উপরেও নজরদারি থাকা উচিত। কারণ, তা তো মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy