Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Chanachur

চানাচুর থেকে ডালমুট, বাংলা খাবারের জাত এবং পাত

বহু জায়গার খাবার অতি উৎসাহের সঙ্গে আপন করেছে বাঙালি। তবে উৎসের ভিত্তিতে খাদ্যের জাত নির্মাণও করা হয়েছে। বাঙালির কাছে চানাচুর খানিকটা সুপ্ত-বাসনা যেন। আভিজাত্যে খানিক খাটোই থেকে গিয়েছে।

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

খাবারেরও জাত আছে। বাঙালির কাছে চানাচুর কেন জাতে উঠল না? ছবি: শাটারস্টক।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে বিকেলের চায়ের সঙ্গে ডালমুট থাকত প্লেটে। সে বাড়িতে চানাচুর ছাড়া প্রায় কখনও অতিথি আপ্যায়ন হয়নি। তবে তাঁরই বাবার ‘খাই খাই’-এ ডালমুটের স্বীকৃতি নেই। সুকুমার রায়ের ‘খাই খাই’-এ কত ধরনের খাবারের নাম যে আছে। ‘রুটি লুচি ভাজাভুজি’ থেকে জাপানে খাওয়ার ‘ফড়িংয়ের ঘণ্ট’, কত কী নিয়েই তো লিখেছেন। কিন্তু চানাচুরের কথা কোথাও দেখেছেন কি?

সত্যজিতের বৈঠকখানায় স্থান পেলেও বঙ্গ সমাজে নিজের জায়গা সে ভাবে পাকা করতে পারেনি চানাচুর। সৃজিত মুখোপাধ্যায় থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কারও বাড়িতেই অতিথি গেলে নিয়ম করে চানাচুর খাওয়ানোর চল আছে বলে শোনা যায়নি। শিবপ্রসাদ নিজে পছন্দ করেন চানাচুর খেতে। তবে বলেন, ‘‘আগে কেউ এলে মা চায়ের সঙ্গে নিজের হাতে বানানো নিমকি-মালপোয়া দিতেন। এখন থাকে মিষ্টি আর বিস্কুট।’’ তাঁর বাড়িতে অতিথিকে চানাচুর দেওয়া হয় না। শিল্পী বিমল কুন্ডুর বক্তব্য, অতিথিকে আগেও চানাচুর দেওয়া হত না, এখনও হয় না। বলেন, ‘‘চানাচুর দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন শহুরে বাড়ির রেওয়াজ নয়।’’ নিজের বাড়িতে বিমলবাবু চানাচুর রাখেন। কিন্তু মনে করেন অতিথি আপ্যায়নে কাজু-কুকিজ় দেওয়াই চল।

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

মুকেশ অম্বানীর বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে নানা কিছুর সঙ্গে মুড়ি-চানাচুরও থাকে। ছবি: সংগৃহীত।

চানাচুর খানিকটা সুপ্ত-বাসনা যেন! সকলে খেতে পছন্দ করলেও বাংলায় মুড়ি-চানাচুর ঠিক নেমন্তন্ন করে খাওয়ানোর জিনিস হয়ে ওঠেনি আসলে। আভিজাত্যে কোথাও যেন খাটোই থেকে গিয়েছে। বাংলার ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য চানাচুর, ডালমুট খেতে বেজায় ভালবাসেন। বিকেলের দিকে মাঝেমধ্যে সে সব খেয়েই থাকেন। তবে গিন্নি ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বাড়িতে অতিথি এলে ঠিক চানাচুর দেওয়ার চল নেই। তিনি বলেন, ‘‘নিরামিষাশী অতিথি এলে অনেক সময়ে চা-মিষ্টির সঙ্গে পাপড়ি, গাঠিয়া দেওয়া হয়। কিন্তু এমনিতে চানাচুর দেওয়া হয় না।’’ তবে মুকেশ অম্বানীর বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে নানা কিছুর সঙ্গে মুড়ি-চানাচুরও থাকে। এমনকি, মুম্বইতে ‘নীতা মুকেশ অম্বানী কালচারাল সেন্টার’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও স্থান পেয়েছিল চানাচুর দিয়ে মাখা মুড়ি। ইংরেজিতে ‘চুৎজ়পা’ বলে একটি শব্দ আছ। বাংলায় ঠিক তার প্রতিশব্দ নেই। তবে হিব্রু থেকে আসা এই শব্দ বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় সৎসাহস বোঝাতে। সত্যজিৎ কিংবা মুকেশের মতো অতিথিকে ডেকে চানাচুর খাওয়ানোর চুৎজ়পা ঠিক প্রচলিত নয় সমাজে।

বাংলায় লোকেদের নোনতা, মিষ্টি খাওয়ার চল তো বহু দিনের। কিন্তু বাঙালি সমাজে ডালমুট-চানাচুর তুলনায় নবীন। শুধু তো আর নবীনচন্দ্রের রসগোল্লা নয়, নানা ধরনের খাবার আছে বাঙালির। সে সবের দোকানও বহু যুগ পুরনো। যেমন ভীমচন্দ্র নাগ থেকে নকুড়ের মিষ্টির দোকান, সবই প্রায় ২০০ বছর ছুঁতে চলল। কিন্তু ডালমুটের কথা ভাবুন তো! দক্ষিণ কলকাতার চর্চিত ‘উজ্জ্বলা’ সবে ১০০ ছুঁই ছুঁই। আর যদি ঘরে ঘরে পাওয়া ‘বাপি’ কিংবা ‘মুখরোচক’ চানাচুরের কথা ভাবেন, সে সব বয়সে আরও কম। তার উপরে আবার এই খাবার এসেছে হিন্দি-বলয় থেকে। ‘‘স্বাদ যতই পছন্দ হোক, এই জন্যই আভিজাত্যে খানিক খামতি থেকেই যায়। বাঙালি মনন এমনই’’— খোঁচা দিয়ে বললেন হিন্দির শিক্ষক ভারতী মুন্সী।

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

বাংলায় লোকেদের নোনতা, মিষ্টি খাওয়ার চল তো বহু দিনের। কিন্তু বাঙালি সমাজে ডালমুট-চানাচুর তুলনায় নবীন। ছবি: সংগৃহীত।

মূলত হিন্দিভাষী শ্রমিকদের কাছ থেকেই চানাচুর খেতে শেখে বাঙালি মধ্যবিত্ত। তার পরেই বদলে যায় মুড়ি চিবোনোর সংস্কৃতি। যে ঝালমুড়ি বিক্রি হয় ট্রেনে কিংবা পথঘাটে, তাতে অনেক সময়েই চানাচুর থাকে। তবে সে চলও হয়েছে পরে। আগে মুড়ি মাখা হত চানাচুর ছাড়াই। এখনও সাবেক স্বাদের ঝালমুড়ি খেতে পছন্দ করেন কেউ কেউ। সৌরভ-পত্নী ডোনাও সে দলে পড়েন। তাঁর ঝালমুড়িতে আর যা-ই পড়ুক না কেন, চানাচুর থাকে না।

‘জাতির পাঁতি’ কবিতা অনেকেই পড়েছেন। কিন্তু খাবারের জাত আছে যে, তা ভাবা হয় আর কত! ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী যেমন প্রশ্ন শুনেই হাসেন। বলেন, ‘‘সত্যি তো! এখন কোনও বন্ধুর বাড়ি গেলে চায়ের সঙ্গে ফিশ ফ্রাই-টাই দেন। চানাচুর তো দেন না! বাঙালি বলে থাকে যে, জাতে নেই। আসলে সবেতেই জাত ঢুকে আছে। কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা-ও ঠিক হয় জাত দেখে!’’ বাঙালির কাছে চানাচুর এসেছে উত্তর ভারতের শ্রমিকদের খাবার হিসাবে। অনেক পরে জেনেছে যে, তা মালিক শ্রেণির সকলেও খান। তত দিনে অভ্যাস যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। কার কাছ থেকে কোন খাবার এল, তার উপরেই সে খাবারের মান নির্ভর করে।

ইতিহাসবিদ জয়ন্ত সেনগুপ্ত মনে করেন, চানাচুরের ভাগ্য খানিক তেমনই। চানাচুর, ডালমুট, বম্বে মিক্সচার— যে নামেই ডাকুন না কেন, জনপ্রিয় এই নোনতার জন্ম এ প্রান্তে নয়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে ধরে নেওয়া যায়, ডালমুট বঙ্গে এসেছে উত্তর ভারত থেকে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ভুজিয়া, গাঠিয়া তৈরি হয় ঘরে ঘরে। ডালমুট, চানাচুর সে সবেরই মিক্সচার বা মিশেল। জয়ন্তবাবু মনে করান, ‘‘দেশের নানা প্রান্তের বহু মানুষ কর্মসূত্রে বাংলায় আসছেন যুগ যুগ ধরে। তাঁদের সঙ্গেই এসেছে নতুন নতুন ধরনের খাবারদাবার। এসেছে হেঁশেলের নানা উপকরণ, রন্ধনশৈলীও।’’

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

মূলত হিন্দিভাষী শ্রমিকদের কাছ থেকেই চানাচুর খেতে শেখে বাঙালি মধ্যবিত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

তবে বিষয়টা হল, কোনও কোনও জায়গার খাবার ও সংস্কৃতি যেমন অতি উৎসাহের সঙ্গে আপন করেছে বাঙালি, তেমনই আবার কিছু কিছু খাবারের জাত নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত তা হয়েছে উৎসের ভিত্তিতে। বিরিয়ানির নবাবি উৎস যেমন জমকালো সন্ধ্যার আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ করে তুলেছে তাকে। বাঙালির ঘরে চানাচুরের আগমনের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে ততটাও রাজকীয় কোনও কাহিনি পাওয়া যায় না। ফলে স্বাদের প্রতি যতই টান থাক না কেন, গুরুত্বে খানিক কমই থেকেছে।

তবে চানাচুর যে যেমন-তেমন খাদ্য নয়, কলকাতাকে তা দেখিয়ে দিয়েছে ‘উজ্জ্বলা’। চোখের সামনে গরম গরম পাপড়ি, গাঠিয়া, বাদাম যখন ভাজা হয় দক্ষিণ কলকাতার সেই দোকানে, তখন সামনে অন্তত ২০-৩০ জন বাঙালি লাইনে অপেক্ষা করেন। কলকাতার অবাঙালি বহু পরিবারে আবার ডালমুট, চানাচুর এখনও দোকান থেকে আসে না। বাড়ির হেঁশেলেই তৈরি হয়। যেমন উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শিল্পপতি পরিবারের সঞ্জীব গোয়েন্‌কার কথাই ধরা যাক না। এখনও শুধু ঘরে তৈরি গাঠিয়া, ভুজিয়াই খান। তবে বাঙালি বাড়িতে সে ভাবে ঘরে তৈরি চানাচুর খাওয়ার চল এখনও হয়নি। অধিকাংশই তা বানাতে পারেন না। আর পাস্তা বা ফিরনি রাঁধতে শিখলে যত প্রশংসা পাওয়া যায়, ঘরে চানাচুর বানিয়ে তেমন বাহবা পাওয়ার চলও হয়নি। ফলে কলকাতার আপামর খাদ্যরসিক নির্ভর করেন দোকানের চানাচুরের উপরেই।

পাড়ায় ছোট-বড় দোকানের চানাচুর তো আছেই, তার সঙ্গে প্যাকেট-বন্দি চানাচুরও আছে। যেমন গত প্রায় ৭০ বছরে ধীরে ধীরে এ শহরের মন জয় করে নিয়েছে বাঙালির চানাচুর ‘মুখরোচক’। সোনারপুর এলাকার কারখানা থেকে নানা প্রান্তে যায় মুখরোচকের টক-ঝাল-মিষ্টি চানাচুর। ‘হলদিরাম’ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ায় বাঙালির ধারণায় আরও বদল আসে। বিকানের ঘরানার মিষ্টি চানাচুর খাওয়ার চল বাড়ে।

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

চানাচুর যে যেমন-তেমন খাদ্য নয়, কলকাতাকে তা দেখিয়ে দিয়েছে ‘উজ্জ্বলা’। —নিজস্ব চিত্র।

তার মানে কি উত্তর ভারতের আধিপত্য কমে গিয়েছে বাংলার চানাচুরে? তা কিন্তু নয়। বরং দক্ষিণ কলকাতার যে এক চিলতে দোকানের চানাচুরের জয়জয়কার দিকে দিকে, তা একেবারেই উত্তর ভারতীয় ঘরানার। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো এই দোকান চালু করেছিলেন বারাণসীর রামচন্দ্র প্রসাদ। তিন পুরুষ ধরে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছের সেই দোকান এখনও চলছে।

চলছে বললে অবশ্য কম বলা হয়। দিনভর সেখানে ভিড়। কাঠফাটা গরম হোক কি ঘোর বর্ষা। অফিস শেষের সময় হলে লাইন আরও লম্বা হয়। শীতের সন্ধ্যায় ‘উজ্জ্বলা’র সামনে গেলে কখনও কখনও ৪০-৫০ জনের পিছনেও দাঁড়াতে হতে পারে। নিত্যদিনই সে লাইনে দাঁড়ানোর অভ্যাস আছে কালীঘাট এলাকার বাসিন্দা সুজন ভাদুড়ীর। মাঝেমাঝে অফিস থেকে ফেরার সময়ে এক স্টেশন আগে নেমে পড়েন মেট্রো থেকে। তিনি বলেন, ‘‘অফিস থেকে ফেরার সময়ে এলে এখানে ভিড় অনেকটাই বেশি থাকে। মাঝেমাঝে চানাচুর ফুরিয়েও যায়। তখন আবার ভাজা হওয়ার অপেক্ষা করতে হয়।’’ তার পর বাড়ি গিয়ে সেই চানাচুর দিয়ে মুড়িই টিফিন!

দম্ভও আছে সে চানাচুরের। ঢাকঢোল পেটানোয় বিশ্বাসী নয়। বরং মালিকপক্ষ মনে করে, তাদের হয়ে কথা বলবে দোকানে তৈরি পাপড়ি, বাদামভাজা। কর্মীদেরও এ সব নিয়ে কথা বলা বারণ। সাংবাদিক দু-চারটি প্রশ্ন করতেই কর্মীরা সে কথা জানিয়ে দিতে বাধ্য হন। তবে তাঁরা যে গর্বিত ‘উজ্জ্বলা’-কে নিয়ে, তা প্রকাশ করতে আগন্তুকের দিকে বাড়িয়ে দেন গরম গরম চানাচুর। এক কর্মী বলেন, ‘‘ভিড় দেখতে দেখতে চানাচুরটা গরম গরম খেয়ে নিন। এখানে সকলের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন দোকানের গল্প।’’

Politics in Bengal’s food culture and the position of Chanachur in history

‘উজ্জ্বলা’ সাবেক-পন্থী। চানাচুর বিক্রি করে গরমাগরম। —নিজস্ব চিত্র।

‘উজ্জ্বলা’ সাবেক-পন্থী। চানাচুর বিক্রি করবে গরমাগরম। তার জন্য ব্যবসা কম হলে হোক, ক্ষতি নেই। নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানের তৃতীয় প্রজন্মের কর্তাও সে বিষয়ে বেশ কড়া। এ কালেও ‘সুইগি’ বা ‘জ়োমাটো’-এ দেন না চানাচুর পৌঁছনোর দায়িত্ব। কিনতে হলে লাইনেই দাঁড়াতে হবে আট থেকে আশি, ধনী থেকে মধ্যবিত্ত— সকলকে।

ইতিহাসবিদ জয়ন্ত সেনগুপ্ত বহু দিন ধরেই খাবারের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আলাদা করে বাংলায় চানাচুরের ইতিহাস হয়তো সে ভাবে দেখা হয় না, তবে চানাচুর বাংলার পরিবর্তনশীল খাদ্যসাংস্কৃতিক ইতিহাসের অঙ্গ বলে ধরে নেওয়া যায়।’’ কারণ, বাংলায় বরাবরই নানা জায়গার মানুষজন কাজের সূত্রে এসেছেন। যেমন এসেছে ‘উজ্জ্বলা’র পরিবারও। চানাচুর খাওয়া তাঁরা বাঙালিকে শিখিয়েছেন বললে বেশি হতে পারে ঠিকই, কিন্তু ‘বাঙালি চানাচুর’ বলতে এখন অনেকে সেই পাপড়িই চেনেন। ‘উজ্জ্বলা’র দোকানের কাছেই এক দোকানি শ্রীধর রায় যেমন অতি উৎসাহের সঙ্গে এসে জানান, অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আলোচনা করেন, বাঙালি চানাচুর কি এর চেয়ে ভাল হয়! শ্রীধর বলেন, ‘‘এই দোকানের দাদারা যে বাঙালি নন, সে তো আমরাও আগে জানতাম না। যাঁরা চানাচুর কিনতে আসেন, তাঁরা আর জানবেন কী করে?’’ আর যে দিন পেঁপের চাটনি বানানো হয়, চানাচুরের সঙ্গে তার জন্যও লাইন বাড়ে। পাপড়ি আর চাটনি এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।

অনেকের কাছেই দক্ষিণ কলকাতার এই দোকানের চানাচুর ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি। কলকাতা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রাখার সূত্রও হয়ে উঠেছে চানাচুর। এককালে যাদবপুরে থাকতেন, এখন কাজের সূত্রে জার্মানিতে বসবাস কোয়েল দাশগুপ্তের। কোয়েল জানান, কেউ কলকাতা থেকে জার্মানি গেলেই ‘উজ্জ্বলা’র থেকে চানাচুর নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদার করেন তিনি। ফোনে কোয়েল বলেন, ‘‘পোস্ত থেকে পিঠে, সবই বানিয়ে নেওয়া যায় এ দেশে। কিন্তু কলকাতার মতো চানাচুর তো পাওয়া যায় না। উজ্জ্বলা থেকে চানাচুর যদি সব সময়ে কেউ না-ও আনতে পারেন, কলকাতা থেকে অন্য কোনও ঝাল চানাচুর আনার জন্য আবদার জানিয়েই রাখি।’’

ভবানীপুর এলাকার পুরনো বাসিন্দা সাগর রায়চৌধুরী যেমন বলেন, ‘‘নানা জায়গায় চানাচুর তো খেতেই হয়েছে, কিন্তু এখনও নিজের মনের মতো চানাচুর খেতে হলে ‘উজ্জ্বলা’র লাইনে এসে দাঁড়া‌ই। বাঙালিরা তো ঠিক মিষ্টি চানাচুর পছন্দ করে না। আবার বেশি মশলাদার হলে পাপড়ির স্বাদটাই চলে যায়।’’ আর বিদেশ থেকে এমন আবদার যে মাঝেমাঝেই আসে, তা জানান সে দোকানের কর্মীরাও। তাঁরা নিজেরা বিদেশে পাঠান না। সে পরিষেবা নেই। তবে কলকাতা থেকে কেউ যদি বিদেশে চানাচুর, পাপড়ি নিয়ে যেতে চান, তা বিশেষ ভাবে প্যাকেটে ভরে ব্যবস্থা করে রাখা হয়। এক কর্মী বলেন, ‘‘যে দিন নেবেন, তার আগের দিন বরাত দিতে হয়। আমরা সময় মতো তৈরি করে রাখি। পরদিন কখনও তুলে নিয়ে যেতে হয় চানাচুর। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE