অল্প ব্যথা অগ্রাহ্য করলে পরে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে। ছবি: শাটারস্টক
নভেল করোনা ভাইরাসের ভয় আমাদের গ্রাস করলেও ব্যথা-বেদনাকে জব্দ করতে পারেনি এতটুকুও। টানা কয়েক মাস গৃহবন্দি হয়ে থাকায় কোমর বা হাঁটুর ব্যথা বেড়ে গেছে অনেকেরই। বিশ্বের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন কোমরের ব্যথায় কষ্ট পান। তা হলে প্রায় ৮০০ কোটি জনসংখ্যার এই গ্রহে কত জন কোমরের ব্যথায় ভুগছেন, হিসেব কষতে বসলে চোখ কপালে উঠবে!
মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে অজস্র মানুষ কোমরের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা যাকে ‘কোমর’ বলি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলে লাম্বার স্পাইন, বললেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটক। ভুল ভঙ্গিমায় শোওয়া-বসা, হাঁটা চলা, সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলা বা কখনও কখনও রিকশা, অটো বা বাসে ঝাঁকুনি লেগেও কোমরে ব্যথা শুরু হতে পারে।
মৌলিমাধববাবু জানান, বেশি বয়সে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝখানে যে ডিস্ক আছে, তাও ক্ষয়ে যায় বলে ব্যথা শুরু হয়, একে বলে ‘স্পন্ডাইলোসিস’।
আরও পড়ুন: করোনা হয়নি, প্রবল জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি, আর কী বললেন সেরে ওঠা রোগী
আসলে প্রতিদিনের কাজকর্মের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার হয়। অল্প বয়সে এই ক্ষয় পূরণ হয়ে গেলেও বেশি বয়সে তা হয় না। ফল স্বরূপ কোমরে ব্যথা করে। কোমরে ব্যথা শুরু হলে প্রথম চিকিৎসা বিশ্রাম।
মৌলিমাধববাবু জানান, ব্যথা কিন্তু হাড়ে হয় না, হয় পেশিতে। যথাযথ শরীরচর্চার অভাবে কোমরের দিকের পেশি বা মাসল শক্ত হয়ে যায়। এর সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় যোগ হলে স্প্যাজম শুরু হয়।
কোমরে ব্যথা হলে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি পেশির স্প্যাজমের ওষুধ দেওয়া হয়। ফলে ব্যথা কমে। অবশ্য খুব প্রয়োজন না হলে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয় না। এই প্রসঙ্গে মৌলিমাধবাবু বলেন যে, পেশির সংকোচন বা স্প্যাজম কিন্তু শরীরের একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। স্প্যাজমের ফলে ব্যথা হলে মানুষ বাধ্য হয়েও বিশ্রাম নেয়। এর ফলে হাড় কিছুটা রক্ষা পায়, শরীর বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্যে স্প্যাজম তৈরি করে। শুধু ব্যথার ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমালে হাড়ের ক্ষয় বাড়বে। তাই কোমরের ব্যথায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথার কারণ জেনে চিকিৎসা করা উচিত বলে পরামর্শ মৌলিমাধববাবুর।
পেশি দুর্বল হয়ে গিয়ে কশেরুকার মাঝের কুশন বেরিয়ে আসতে পারে। ছবি: শাটারস্টক
কোমরে ব্যথা যে শুধু বয়স্ক মানুষদের হয় তা নয়, অল্প বয়সেও কোমরের ব্যথার ভোগান্তি হয়, বললেন অর্থোপেডিক সার্জন সুদীপ্ত ঘোষ। কম বয়সে কোমরের ব্যথার বিভিন্ন কারণের মধ্যে আছে স্লিপ ডিস্ক এবং দাঁড়িয়ে, বসে বা একই ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ থাকা এবং সামনে ঝুঁকে ভারি ওজন তোলার মতো ভুল ভঙ্গিমা। এর থেকে স্লিপ ডিস্ক ও মাসল স্প্যাজম হয়ে ব্যথার সূত্রপাত হয়।
এই অবস্থায় অবস্থানের বদল এনে ও বিশ্রাম নিয়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে ব্যথার সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, সাবধান করলেন সুদীপ্তবাবু। বেশি বয়সে কোমরে ব্যথার মূল কারণ লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস। মূলত মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় ও পেশির নমনীয়তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কোমরে ব্যথার কষ্ট নিয়ে দিন যাপন করতে হয়। অনেকের আবার কোমরের একটা হাড় অন্য হাড়ের উপর উঠে যায়। সেক্ষেত্রেও কোমরের ব্যথার ভোগান্তি হতে পারে।
সুদীপ্ত ঘোষ জানালেন, এই সমস্যার ডাক্তারি নাম স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস। এই সমস্যা হলে কোমরের ব্যথার পাশাপাশি ব্যথা ঊরু হয়ে পায়ের দিকে নেমে আসতে পারে। পায়ের পিছন দিকের পেশিও শক্ত হয়ে যায়। মূলত খেলোয়াড়দের মধ্যে এই সমস্যার ঝুঁকি বেশি। ফুটবল, জিমন্যাস্টিক, ভারোত্তোলন ছাড়াও যাঁরা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করেন তাঁদেরও এই সমস্যা হতে পারে।
বয়স্ক মানুষদের কোমরে ব্যথার মূলে আছে অস্টিওপোরোসিসের কারণে মেরুদণ্ডের হাড় সংকুচিত হয়ে পড়া। এর ফলে নার্ভ ও পেশিতে চাপ পড়ে ব্যথার কষ্ট হয়।
আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ভাটিব্রাল কম্প্রেশনে কষ্ট পান। এই সমস্যা বাড়লে অনেক সময় ভার্টিব্রোপ্লাস্টি করে অর্থাৎ মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে বোনসিমেন্ট পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়। এছাড়া প্রচলিত চিকিৎসা তো আছেই, বললেন সুদীপ্ত ঘোষ। তবে শুধুই যে হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা পেশির নমনীয়তা কমে যাওয়ার কারণে কোমরে ব্যথা হয়, তা নয়।
আরও পড়ুন: বর্ষার আবহে করোনা দোসর, জামাকাপড় যত্নে রাখতে এই সব মানতেই হবে
কিডনিতে স্টোন হলে, প্যাংক্রিয়াসের অসুখ হলে, স্পাইনা-বাইফিডা নামে জন্মগত ত্রুটি থাকলে, বা অন্য কোনও বড় অসুখের উপসর্গ হিসেবেও কোমরের ব্যথা হতে পারে। টানা তিন মাস যদি কেউ কোমরের ব্যথায় কষ্ট পান, কোমরের পাশাপাশি পায়ের পেশিতেও টান ধরে বা অবশ হয়ে যায়, প্রস্রাবে বা মলত্যাগে সমস্যা হয়, তা হলে অন্য কোনও বড় অসুখের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হলে এমআরআই করতে হতে পারে, বললেন সুদীপ্তবাবু।
আরও পড়ুন: শুধু পান করবেন কেন, কফি ব্যবহার করুন এ ভাবেও
ব্যথা হওয়ার আগেই এই সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখতে বললেন মৌলিমাধব ঘটক। ছোট থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ওজন ঠিক রাখলে ভবিষ্যতে কোমরের ব্যথায় কষ্ট পেতে হবে না। কোভিড-১৯-এর ভয়ে নিজেরা ব্যথার ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, ব্যথা মুক্ত থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy